মানবিক বিবেচনায় খালেদাকে মুক্তি দিন: বোন

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘খুবই খারাপ’ জানিয়ে মানবিক বিবেচনায় তাকে মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেত্রীর বোন সেলিমা ইসলাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Feb 2020, 11:58 AM
Updated : 11 Feb 2020, 01:32 PM

মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসাপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আজকে তার (খালেদা জিয়া) শরীর খুবই খারাপ। সে শ্বাসকষ্টে ভুগছে। একদম কথাই বলতে পারছে না।

“সরকারকে বলছি, এটা বিবেচনা করেন। উনার এই শারীরিক অবস্থা, শ্বাসকষ্ট, উনার বয়স তাদের (সরকার) বিবেচনা করা উচিত। মানবিক দিকটা বিবেচনা করে তাকে মুক্তি বা জামিন দেওয়া উচিত। সরকারের কাছে আমরা এটাই আবেদন করছি যে, তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।”

খালেদা জিয়ার সর্বশেষ জামিন আবেদন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে খারিজ হওয়ায় আপাতত আইনিপথে তার মুক্তির সুযোগ খুবই কম বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। দুই সপ্তাহ আগে বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এসে সেলিমা ইসলাম বলেছিলেন, বোনের মুক্তির জন্য সরকারের কাছে ‘বিশেষ আবেদন’ করবেন বলে ভাবছেন তারা।

ওই ‘বিশেষ আবেদনটা’ কী, তা সেদিন তিনি খোলসা করেননি। তবে তার ওই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গণে খালেদার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়।

দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে দুই বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

এ বিষয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কোনো আবেদন করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে সেলিমা ইসলাম বলেন, “আমরা এখনও আবেদন কারও কাছে করিনি। কিন্তু আমরা জাতির কাছে, দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন এবং উনার মুক্তি যেন হয় সেই চেষ্টা আপনারাই করেন।”

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্যের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে আপনার ভাই একটি আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে, ওই আবেদন কী নিয়ে তা জানতে চান সাংবাদিকরা।

তখন সেলিমা ইসলাম বলেন, “এটা খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিঃশর্ত মুক্তি। উনাকে তো মিথ্যা একটা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। আজকে দুই বছর ধরে সে অন্তরীণ আছে।

“তার শারীরিক অবস্থা, সে যে অবস্থায় এসছিল এখন তো সেই অবস্থায় নেই। সে আগে হেঁটে চলে বেড়াত। এখন তো সে ৫ মিনিটও দাঁড়াতে পারে না। এখানে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তাতে কোনো উন্নতি হচ্ছে না। সেজন্য তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।”

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে বোন বলেন, “সে ৫ মিনিটও দাঁড়াতে পারছে না। তার বাথরুম থেকে বেডের দূরত্ব খুব সামান্য। সেখান যেতেও তার ২০ মিনিট সময় লাগে। তার বাঁ হাতটা সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে, এখন ডান হাতটাও বেঁকে যাচ্ছে।

“সে খেতে পারছে না, খেলেই বমি হয়ে যাচ্ছে। জ্বর আছে গায়ে, শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। এমতাবস্থায় উনার উন্নত চিকিৎসা খুবই প্রয়োজন। উনার শরীর এত খারাপ এই মুহূর্তে যদি উনার উন্নত চিকিৎসা না দেওয়া যায় তাহলে উনার কী হবে-এটা আমরা বলতে পারছি না।”

আবেগময় কণ্ঠে সেলিমা ইসলাম বলেন, “আমাদের আবেদন, তাকে মুক্তি দেওয়া হোক। অন্তত উন্নত চিকিৎসাটুকু করতে পারি যেন- এটাই আমাদের একমাত্র আবেদন।

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার সুগার লেভেল কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলেও জানান তিনি।

বিকাল সাড়ে ৩টায় খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন তার পাঁচ স্বজন। সেলিমা ইসলাম ছাড়াও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, তার ছেলে অভিক এস্কান্দার, তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা জামান খান বিন্দু ও কোকোর শাশুড়ি মূকরেমা রেজা (ফাতিমা রেজা) ছিলেন এই দলে। এক ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে তারা বেরিয়ে আসেন।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কারাগারে অসুস্থ হওয়ায় গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের কেবিন ব্লকে চিকিৎসীন আছেন তিনি।