বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ঐক্যফ্রন্টের এক সভায় একথা জানান তিনি।
খালেদার মুক্তির আগে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার প্রস্তাবও আসে এই সভায়।
গণফোরাম সভাপতি কামাল বলেন, “এখন আমি মনে করি যে, এই ধরনের সভা নয়, এখন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে সামনে রেখে মাঠে নামব এবং এটা অর্জনে জনগণকে অনুপ্রাণিত করতে আমরা চলুন সবাই ভূমিকা রাখি।”
খালেদা জিয়া বন্দি হওয়ার পর কামালের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল বিএনপি। তবে দলীয় প্রধানকে কারাগারে রেখে ভোটে অংশ নেওয়ার বিরোধিতা ছিল বিএনপির অনেক নেতার।
ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার পর ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি তোলে ঐক্যফ্রন্ট। তবে তাদের কোনো দাবিতে কান দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
কামাল বলেন, “এদের (ক্ষমতাসীনদের) বলে তো কোনো লাভ নেই, এদের লাথি মেরে বের করে দরকার, পদত্যাগ পদত্যাগ না বলে।”
পদত্যাগ না করলে কী করতে হবে- কামাল এই প্রশ্ন করলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কর্মী-সমর্থকরা বলেন, লাথি মেরে বের করতে হবে।
তখন কামাল বলেন, ‘গুড। ওইসব ভাষা না বলে তাদেরকে অন্তত হাত ধরে টেনে রাস্তায় নামিয়ে দিতে হবে আর কী।”
দুর্নীতির মামলায় সাজা নিয়ে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানান কামাল।
তিনি বলেন, “আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখানে সভা করতে হবে, দাবি করতে হবে, এটা অকল্পনীয়। ৪৮ বছর দেশ স্বাধীন হয়েছে, এখনও রাজবন্দির মুক্তির কথা বলতে হবে, এটা দুঃখের বিষয়। আসুন এখন আর সভা নয়, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে নামি।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছে অভিযোগ করে কামাল বলেন, “মানুষকে বঞ্চিত করে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে, এটা একটা প্রহসন। অর্থাৎ যারা প্রহসন করে এসেছে তাদের এখন সময় এসেছে সহজভাষায় বলা- সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়াও, সরে দাঁড়ান।”
সভায় বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী আন্দোলনে জনগণকে সংগঠিত করতে কামাল হোসেনকে পদযাত্রা শুরু করার পরামর্শ দেন।
‘খালেদার মুক্তির আগে নির্বাচন নয়’
খালেদা জিয়া মুক্ত না হওয়ার আগে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নিতে ঐক্যফ্রন্টকে প্রস্তাব দিয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, “যতদিন পর্যন্ত না খালেদা জিয়াকে সরকার মুক্তি দেবে আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই।
“আমি কিছুটা হলেও তাকে (খালেদা জিয়া) প্রভাবিত করেছিলাম প্রথমবারে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য। আজকে আমি বুঝতে পারছি, যেভাবে সরকার এই নির্বাচনকে প্রভাবিত করছে তাতে অংশ নেওয়া ঠিক হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন অংশগ্রহণ অর্থহীন।”
খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, “একটা হলো আমাদের নেতা ড. কামাল হোসেন সাহেব তার (খালেদা জিয়া) জন্য রিভিউ পিটিশন করুন। সরকারের মান রক্ষার জন্য না, সরকারকে সন্মানজনক এক্সিট দেওয়ার জন্য উনি রিভিউ পিটিশন করুক, তার প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি দেওয়া হোক।
“সরকারকে এই নির্বাচনের নামে যে টাকার অপচয় হচ্ছে, তা বন্ধ করতে এই কমিশন বদলিয়ে কমিশনে এমন কর্মকর্তাকে দিতে হবে যার কোমরের জোর আছে, মেরুদণ্ড সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে, সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারে।”
সভায় জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, “আমি সরকার প্রধানকে বলবো, আপনি শান্তিপূর্ণভাবে যেতে চান না অন্যভাবে যেতে চান?
“যদি শান্তিপূর্ণভাবে যেতে চান, তাহলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। আর যদি শান্তিপূর্ণভাবে না যেতে চান, তাহলে দুই সিটি করপোরেশনে জনগণ ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে যেভাবে অনাস্থা দিয়েছে, সেজন্য অপেক্ষা করুন।”
দেশের চিত্র তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “পুতু পুতু করে কাজ হবে না। স্পষ্ট করে বলেন, এই সরকারকে আমরা চাই না একদিনের জন্যও। তার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করতে চাই।
“আমি মনে করি, ঐক্যফ্রন্ট নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার। বিএনপির কাছে একই প্রশ্ন, আপনাদেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার যদি সত্যি সত্যি এই স্বৈরাচার, দুরাচার, অপশাসন, দুঃশাসন থেকে মুক্তি চান, তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে হবে।”
কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলম প্রধানের সঞ্চালনায় এই প্রতিবাদ সভায় বিএনপির আবদুল মঈন খান, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মহসিন রশিদ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, মোশতাক হোসেন, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, মমিনুল ইসলাম, জেএসডির শাহ আকম আনিসুর রহমান খান, বিকল্পধারার নুরুল আমিন ব্যাপারী, শাহ আহমেদ বাদল, গণ দলের গোলাম মাওলা চৌধুরীও বক্তব্য রাখেন।