দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের যে জনসমর্থন সে বিবেচনায় আরও বেশি ভোট আশা করেছিলেন তারা।
“আওয়ামী লীগের যে পার্সেন্টেজ সেই তুলনায় তো উপস্থিতি আশানুরূপ নয়।”
তবে এই নির্বাচনে পরাজিত বিএনপির প্রার্থীরা যে ভোট পেয়েছেন, তা ‘খারাপ নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন ওবায়দুল কাদের।
এই ভাবনার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, “বিএনপি যে অবস্থায় নির্বাচন করেছে তাদের পার্টির মূল নেতৃত্বই নেই। আমার মনে হয়, তারা ভালো করেছে।”
প্রচার-প্রচারণায় সরগরম থাকলেও শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি ছিল খুবই কম। ইভিএমে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে ২৯ ও উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের আমলে মানুষ নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে উঠেছে। নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে রোববার হরতালও ডেকেছিল দলটি।
ভোট কম পড়া নিয়ে মূল্যায়ন জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “মূল্যায়ন করার জন্য আমরা ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করব। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে এলে এই মিটিং হবে। সেখানে নির্বাচন নিয়ে বীক্ষণ-পরিবীক্ষণ, আমাদের অবজারভেশন, পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করব। এ রকমই চিন্তা-ভাবনা রয়েছে।
“নেত্রীও আমাকে পরশু দিন ফোনে যখন কথা হয়, তিনি আমাকে বলেছিলেন ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করা জরুরি।”
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমি মনে করি, এখানে আমাদের গভীরভাবে ভাবনার বিষয় আছে। আমাদের ভোটের যে পার্সেন্টেজ সেই পার্সেন্টেজ অনুযায়ী, যে ভোট পড়ার কথা ছিল, সেটা তো হয়নি।”
ভোট কম পড়ার পেছনে কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করেছেন ওবায়দুল কাদের। নিজেদের ‘সাংগঠনিক দুর্বলতার’ পাশাপাশি দুই-তিন দিন ছুটি থাকায় ‘অনেকের গ্রামের বাড়ি যাওয়া’ এবং পরিবহন সংকট ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন তিনি।
সাংগঠনিক দুর্বলতা নিয়ে কাদের বলেন, “আমাদের কমিটিগুলো হয়েছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ঢাকা সিটিতে ওয়ার্ড পর্যন্ত কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো দরকার।”
আগেরদিন ঢাকা শহরের নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে এলে কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার কথা বলেছেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“অনতিবিলম্বে ঢাকা সিটির ওয়ার্ড, থানার সম্মেলনগুলো করা দরকার। এখানে বড় না হলেও সাংগঠনিক দুর্বলতার পরিচয় পাওয়া গেছে। এটা হল বাস্তবতা, বাস্তবতা অস্বীকার করে তো লাভ নেই।”
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম থাকার মূলে ভোটের প্রতি মানুষের অনীহা বাড়ছে কি না সে প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, “একটা বিষয় হচ্ছে। এই যে ভোটটা হচ্ছে আগেভাগেই শঙ্কা তৈরি করা-এই সিস্টেম খারাপ, এই সিস্টেমে ভোট দেওয়া যাবে না। এই রকম অবস্থায় কিছু মানুষের আগ্রহ তো কমতেই পারে। কারণ ভোট সম্পর্কে অপপ্রচারটা অনেক বেশি হয়েছে।”
প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপিকে নিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির যে পারফরমেন্স তারা এই ভোটের মধ্যেও তাদের ভোট সংখ্যা একেবারে কম নয়। অনেক ভোট পেয়েছে। সেই দিক থেকে বিরোধী দল হিসেবে তারা ভোটে একেবারে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এমন নয়। তারা ভালো ভোট পেয়েছেন। এটা গণতন্ত্রের জন্যই ভালো।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “সরকারি দলের ভয়ঙ্কর প্রস্তুতি, বিরোধী দলও সতর্ক পাহারায় থাকবে, তারা ঢাকার বাইরে থেকে লোক জড়ো করেছে- এ ধরনের ইনফরমেশন তো ছিলই। আমার মনে হয়, সব কিছু মিলিয়ে একটা ভালো ইলেকশন হয়েছে।
“এই ভুল-ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে আমার মনে হয়, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলগুলো জনমত সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রাজনীতির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেশি হওয়া উচিত। ভোটের রাজনীতির প্রতি মানুষের অনীহা গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।”
ইভিএমে ভোটগ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, “ইভিএমে এত বড় এলাকায় নির্বাচন নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে ইভিএমের ব্যবহার হয়েছে। নতুন অভিজ্ঞতায় প্রায়োগিক বাস্তবতায় কিছু ভুল-ত্রুটিও থাকতে পারে। তবে যারা ভোট দিয়েছেন অনেকেরই প্রতিক্রিয়া হচ্ছে খুব সহজে ভোট দিতে পেরেছেন। এত বড় এলাকায় দু-একটি জায়গায় হয়ত ভুলত্রুটি হয়েছে।”
সব কিছুর পরেও একটা ‘ভালো নির্বাচন’ হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “বর্তমানের ভুলগুলো ভবিষ্যতের ইলেকশনে পুনরাবৃত্তি এড়ানো যাবে।”
নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের হাতে সাংবাদিক প্রহৃত হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। এটা হওয়া উচিত ছিল না। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে- একটা ভালো নির্বাচন হয়েছে।”
বিএনপি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচন মোটামুটি ভালো হয়েছে। শান্তিপূর্ণই বলা চলে। বড় ধরনের কোনো সংঘাত হয়নি। বিএনপি তো বলবেই। আমি বিএনপির ব্যাপারটি বলছি, তাদের দল যতটা এলোমেলো এবং নেতৃত্বহীন- সেই অবস্থায় তারা অনেক ভালো করেছে। যতুটুকু রেজাল্ট, আমি মনে করি বিএনপি ভালো রেজাল্ট করেছে। হাসার কোনো কিছু নয়, আমি সিরিয়াসলি বলছি।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে সরাসরি সচিবালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে যান ওবায়দুল কাদের। বেলা ১২টার দিকে যখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখনও তার এক হাতে ক্যানুলা লাগানো ছিল।
শুক্রবার সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এই হাসপাতালে ভর্তি হন কাদের। পরদিন সিসিইউ থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয় তাকে।
এর আগে গত বছর ২ মার্চ সকালে শ্বাসকষ্ট নিয়েই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে গিয়েছিলেন ওবায়দুল কাদের। সেখানে এনজিওগ্রামে তার হৃদপিণ্ডের রক্তনালীতে তিনটি ব্লক ধরা পড়ে। এর মধ্যে একটি ব্লক অপসারণ করেন চিকিৎসকরা।
অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে ৪ মার্চ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়, ভর্তি করা হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
কয়েকদিন চিকিৎসার পর ২০ মার্চ কার্ডিও থোরাসিক সার্জন ডা. শিভাথাসান কুমারস্বামীর নেতৃত্বে কাদেরের বাইপাস সার্জারি হয়। চিকিৎসার জন্য তখন আড়াই মাস তাকে সিঙ্গাপুরে থাকতে হয়।