ভোটের পরিবেশ গত সংসদ নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথাই তার মনে পড়ে যাচ্ছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2020, 11:55 AM
Updated : 30 Jan 2020, 02:37 PM

ভোটের প্রচারের শেষ দিন বৃস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের প্রার্থীদ্বয় ক্রমাগত নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করে চলেছে, রঙিন পোস্টার লাগিয়েছে, ফুটপাতের ওপর নির্বাচনের অফিস নির্মাণ হয়েছে এবং সর্বশেষ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের যে উসকানিমূলক বক্তব্য এবং তাদের মন্ত্রী-নেতৃবর্গের যে বক্তব্য, সেই বক্তব্যের পরে নির্বাচনের পরিবেশ ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদে নির্বাচনের দিকেই চলে গেছে।”

এক বছর আগের ওই নির্বাচনে বিপুল বিজয়ে টানা তৃতীয়বারের মত ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ, আর বিএনপির হয় ভরাডুবি, তারা পায় মাত্র পাঁচটি আসন।

আগের রাতেই কেন্দ্র দখল করে ব্যালট দিয়ে বাক্স ভর্তি করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করে ওই নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছিল বিএনপি।

এবার ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হবে ইভিএমে, যাকে ‘কারচুপির যন্ত্র’ আখ্যায়িত করে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি।

শনিবার ঢাকার দুই সিটির ভোটকেন্দ্রগুলো দখল করতে আওয়ামী লীগ ঢাকায় ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী জড়ো করছে’ বলেও অভিযোগ করছেন বিএনপির নেতারা।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিএনপির বিরুদ্ধে একই ধরনের পাল্টা অভিযোগ এনে বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে তার দলের কর্মীরা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবে।

শনিবার কেন্দ্রে গিয়ে ঢাকাবাসীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ঢাকাবাসীর কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা সংবিধানসম্মত অধিকার রক্ষার জন্য, যা আপনারা ১৯৭১ সালে একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জন করেছেন, তাকে রক্ষার জন্য ঘর ঘেকে বেরিয়ে এসে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট প্রদান করুন, আপনারাদের অধিকার নিশ্চিত করুন।

“আসুন আমরা সকল অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস ও ত্রাস সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং ১ ফেব্রুয়ারি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আমরা আমাদের মতামত প্রদান করি। নিরাপদ ও বাসযোগ্য ঢাকা মহানগরী গড়ে তুলি, অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করি।”

ঢাকাবাসী ‘ভোট দিতে পারলে’ বিএনপির প্রার্থীরা যে জয়ী হবেন, সে বিষয়ে ‘নিশ্চিত’ বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি ভোট নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করেন।

ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘন, ধানের শীষের প্রার্থীদের ওপর হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশি তল্লাশি ও গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “সরকারের নির্দেশ ছাড়া এ নির্বাচন কমিশনের কাজ করার কোনো শক্তি নেই। সেভাবেই এ নির্বাচনটাকে তারা দলীয়করণের নির্বাচনে পরিণত করতে চলেছে। … লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।”

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “গণবিরোধী কার্য্কলাপ থেকে বেরিয়ে এসে সংবিধানে প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করুন, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন এবং ভোটাররা যেন নির্ভয়ে সুষ্ঠু পরিবেশে তাদের মতামত দিতে পারে- সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন।

“অন্যথায় দেশের জনগণ কোনোদিন আপনারদের ক্ষমা করবে না। সংবিধান লঙ্ঘন ও জনগণের অধিকার হরণের অভিযোগে আপনাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’’

তিনি অভিযোগ করেন, মহল্লায় মহল্লায় দলের ‘সন্ত্রাসী দিয়ে’ বিএনপি সমর্থিকদের ‘হুমকি’ দেওয়া হচ্ছে, কাউন্সিলর প্রার্থী ও কর্মীদের নির্বাচনী ‘প্রচার থেকে বিরত রাখার চেষ্টা’ করা হয়েছে।

“সর্বোপরি সরকারের মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, আওয়ামী লীগ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগৃহীত সন্ত্রাসীদের ঢাকায় জড়ো করে ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। পুলিশও একই ভূমিকা পালন করে চলেছে।

“বিএনপির অনেক সাবেক এমপি, কেন্দ্রীয় নেতা চিকিৎসার জন্য অথবা ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় এসেছিলেন, তাদের বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার করে পূর্বের ন্যায় একতরফা নির্বাচন করতে চলেছে। ঢাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। এইভাবে ভোটের একদিন আগে তল্লাশির নামে পুলিশ একই কায়দায় নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে গেছে।”

ফখরুল প্রশ্ন করেন- “এই যে নির্বাচন নির্বাচন নামক একটা খেলা, একটা তামাশা- এটা করার দরকারটা কি? তারা যখন একতরফাভাবেই দেশ চালাবেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে ভিন্নভাবে চালাবেন, সেটা ঘোষণা করে দিলেই তো জনগণ কিছুটা অন্তত রেহাই পায়।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মীর সরফরত আলী সপু ও মনির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।