গোপীবাগে সংঘর্ষ: আ. লীগের মামলা, ‘পারল না’ বিএনপি

পুরান ঢাকার গোপীবাগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ারি থানায় আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি মামলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Jan 2020, 05:05 PM
Updated : 26 Jan 2020, 05:39 PM

নির্বাচনী প্রচার চলাকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ওই হামলা করেছে বলে ইশরাক অভিযোগ করলেও তাদের পক্ষে মামলা করতে গেলে থানা থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

সংঘর্ষের ঘটনায় ওয়ার্ড অওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আহমেদ বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন বলে ওয়ারি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন।

মামলায় কাকে বা কয়জনকে আসামি করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলের কর্মী আবদুর রহিম থানায় মামলা করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হামলায় আহত রহিম মামলা করতে গেলে পুলিশ নেয়নি। পরে আইনজীবীরা থানায় গেলেও মামলা নেওয়া হয়নি।”

পরে বিএনপির আইনজীবীরা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানিয়ে আব্দুস সালাম বলেন, “পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নিলে আগামীকাল থানায় মামলা করবেন আইনজীবীরা।”

পরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেও একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

মামলা নিয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে জানতে ওয়ারি থানার ওসি আজিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

থানার ডিউটি অফিসার হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলা দায়েরের জন্য তার কাছে কেউ আসেনি।

“তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে মামলার ব্যাপারে আসতে পারেন।”

রোববার বেলা ১টার দিকে গোপীবাগে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাকের কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।

আধা ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ইশরাকের মিছিল যখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যাডমিন্টন প্রতীকের রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মীরা উপস্থিত হন ওই মোড়ে। দুই পক্ষই শ্লোগান-পাল্টা শ্লোগান দিতে থাকে। এ সময় হ্যান্ড মাইকেও ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা।

এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ঢিল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। দুই পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন।

ধানের শীষের জনপ্রিয়তা দেখে ভোট বানচালের উদ্দেশ্যে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে অভিযোগ করে ইশরাক বলেছেন, “আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলরের ক্যাম্প থেকে আমাদের ওপর বড় বড় ইটপাটকেল মারা হয় এবং চেয়ার ছুড়ে মারা হয়, অতর্কিতে হামলা চালানো হয় বিনা উসকানিতে। হামলার সময়ে গুলির আওয়াজ হচ্ছিল।

“শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করে যখন বাসায় ফিরছি, তখন এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটলো। হামলায় আমাদের ৮-১০ জন মাথা ফেটে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আমার ওপরও হামলার সম্ভাবনা ছিল, নেতা-কর্মীরা সুরক্ষা দিয়েছে।”

এ ঘটনায় আওয়ামী লীগেরও ছয়জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।

প্রতিবেদন চেয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা

গোপীবাগের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার স্টাফ অফিসার নির্বাচন কর্মকর্তা মাসুদুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনাস্থল ওয়ারি থানার ওসিকে প্রকৃত ঘটনা কী এবং দায়ী কারা- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।”

এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “যদি কেউ হামলা করে থাকে অবশ্যই নজরে আনলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট এলাকার সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাহী হাকিমের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।

“তবে বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা বা ইসির নজরে আনা না হলে কিংবা অভিযোগ না জানালে কি বা করার থাকবে।”

এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংঘর্ষ বা হামলার বিষয়গুলো আচরণবিধির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, ফৌজদারি অপরাধমূলক বিষয়।

“আদালতে বা থানায় মামলা করতে পারেন। মামলা হলে তা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”