দেশে পঁচাত্তরের মতো একদলীয় শাসন চলছে: মওদুদ

পঁচাত্তরের মতোই দেশে এখন ‘একদলীয় শাসন’ চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2020, 08:19 PM
Updated : 25 Jan 2020, 08:22 PM

সংসদে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিনে শনিবার বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, “এদেশে আজকে যা চলছে একদলীয় শাসন। ১৯৭৫ সালের একদলীয় শাসনের চিন্তা-ধ্যান-ধারণা এখন চলছে। ওই সময়ে যেমন কোনো রাজনীতি ছিল না, এখনও দেশে কোনো রাজনীতি নাই। এখন কোনো কার্যকর সংসদ নাই, আইনের শাসন নাই, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নাই।”

মওদুদ বলেন, “১৯৭৫ সালে সংবিধান সংশোধন করে আনুষ্ঠানিকভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল। ঠিক এখন অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে ও সুকৌশলে সেই একই ব্যবস্থা অনানুষ্ঠানিকভাবে চলছে। গণতন্ত্রের আবরণে দেশে স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবই তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, “আজকের এই দিনে জাতির প্রত্যয় হল, দেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুনর্বহাল করার জন্য সকল গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল-মত-শ্রেণি, বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, শ্রমজীবী, ছাত্র্র-যুবকসহ সকল শ্রেণির মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে যেতে হবে।

“আমরা মনে করি, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতন্ত্রের জয় অবশ্যম্ভাবী।”

১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল প্রবর্তনের পটভূমি তুলে ধরে সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ বলেন, “সেদিন সংসদে বিনা বিতর্কে, বিনা আলোচনায় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী বিল মাত্র ১১ মিনিটের মধ্যে পাস করিয়ে দেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির পদে শপথ গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন। এই দলের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ অর্থাৎ বাকশাল। এই দিনে বাকশালের জন্মদিন।

“১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ কিছু সামরিক অফিসারের মাধ্যমে জাতির জনককে হত্যা করে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দেশে জারি করে ‘মার্শাল ল’। চারজন ছাড়া সংসদ ও মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের সকল সদস্যই নিজ নিজ পদে থেকে গেলেন। সেই সরকারের সমর্থনে আওয়ামী লীগের চারজন নেতাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যা করা হয় এবং তাদের সেই হত্যাকাণ্ডের অপরাধ মওকুফ করার জন্য ইনডেমনিটি অডিন্যান্স তারা জারি করেন।”

তিনি বলেন, “৭ নভেম্বরের সিপাহী বিপ্লবে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের ক্ষমতায় আরোহনের মধ্য দিয়ে দেশে বহুদলীয় শাসন ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন হয়।

“শহীদ জিয়া ক্ষমতা আরোহন করার পরপরই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে ’৭২ সালের সংবিধানের আলোকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সকল মৌলিক অধিকারসহ সংবাদপত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুনর্বহাল করেন।”

মওদুদ অভিযোগ করে বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করা হয়েছিল তা পরবর্তিতে সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করা হয়। এরপর একই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করে আরও দুটি প্রহসনের নির্বাচন করা হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত ১১ বছর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নস্যাৎ করে একদলীয়ভাবে দেশ চালিয়ে ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি প্রবর্তিত বাকশাল পরোক্ষভাবে কায়েম করেছে।”

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও শওকত মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।