ভোট পেছানোয় যা বললেন মেয়র প্রার্থীরা

সরস্বতী পূজার কারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিবর্বতন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2020, 07:23 PM
Updated : 18 Jan 2020, 07:23 PM

শনিবার এক জরুরি সভায় ভোটের তারিখ ৩০ জানুয়ারি থেকে পিছিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর জন্য এসএসসি পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারির বদলে ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে।

এই বিবেচনায় ভোটের তারিখ না পিছিয়ে এগিয়ে নিলেই ভালো হত বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “নির্বাচন পেছানো নিয়ে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের আকাঙ্ক্ষা ও আবেগের জায়গা ছিল। যেহেতু সরস্বতী পূজা ৩০ তারিখে। তাদের এই আবেগের জায়গা থেকে আগেই নির্বাচন কমিশনের বিবেচনা করা উচিত ছিল। আমরা দেখেছি, এটা নিয়ে আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনরা মনঃক্ষুণ্ন বা তাদের মনে কষ্ট ছিল।

“এসএসসি পরীক্ষা ১ ফেব্রুয়ারি হওয়ার কথা ছিল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। পরীক্ষায় প্রস্তুতির অনেক ব্যাপার থাকে। বিশেষ করে মায়েদের সম্পৃক্ততার একটা ব্যাপার থাকে। তাতে আমি মনে করি, নির্বাচনটা যদি না পিছিয়ে এগিয়ে নেওয়া যেত তাতেই ভালো হত। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কারণ এসএসসি পরীক্ষা পেছানোয় শিক্ষার্থীদের ক্ষতিই হবে, প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটবে। এমনিতেই নির্বাচনী কার্যক্রমের কারণে তাদের কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে।”

এই সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, “আমি খুশি যে নির্বাচন কমিশন একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি মনে করি যে, যখন তফসিল ঘোষণা করা হয় তখনই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল। তবে যেহেতু এখন সবার দাবির মুখে উনারা সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন এবং একদিন পিছিয়েছেন- তো এটি একটা ভালো পদক্ষেপ হয়েছে।

“আমি আশা করছি যে, আমাদের হিন্দু ধর্মালম্বী যারা আছেন তারা হয়ত আরও আনন্দিত হবেন। ভবিষ্যতে যাতে তাদের এই বিষয়গুলো আরও গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় সেটাতে আমি জোর দেব।”

ভোটের এই তারিখ মেনে নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, “অবশ্যই মেনে নিয়েছি। এটা তো আমার দাবিই ছিল। আমি তো দাবি করেছি যে, এটা একদিন হলেও আগানো হোক বা পেছানো হোক, যা-ই করা হোক পূজোর দিনটা কেন? এটা তো গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান তাদের জন্য।”

নির্বাচনের তারিখ পেছানোয় নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

এর মধ্য দিয়ে আবারও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য, ধন্যবাদ ইলেকশন কমিশন। প্রতিটি ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়েই হবে সবাই মিলে, সবার ঢাকা-সুস্থ, সচল ও আধুনিক ঢাকা।”

এই সিটিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, “আমি খুশি। আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি জনগণের পক্ষে বা জনগণের দাবিতে নির্বাচন কমিশন একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা উচিত ছিল আরও আগে নেওয়া। আগে না নেওয়া বলেই কিন্তু আবারও নির্বাচন কমিশন তার ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন, তাদের অযোগ্যতার প্রমাণও আবার দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “বিগত ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা হয়েছিল, তখনই কিন্তু আমরা নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। উনারা একটা তারিখ নির্ধারণ করেছেন যেটা অবশ্যই বিতর্ক সৃষ্টি করবে। কারণ এই তারিখটা (৩০ জানুয়ারি) আমাদের হিন্দু ধর্মের পূজোর সাথে ক্ল্যাশ করে। বিশেষ করে এই সরস্বতী পূজোটা বিভিন্ন স্কুল সেন্টার ব্যবহার করে পূজা উদযাপনের জন্য।

“ওই তারিখ ঘোষণার পর থেকে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন বলতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক প্রতিক্রিয়া এসেছিল। উনারা কিন্তু কোনো কিছুই আমলে নেন নাই। এখন যখন উনারা বাধ্য হয়েছেন বিভিন্ন প্রেসারে, দেশে তো এই ব্যাপারে ঐক্য আছে। এখন নির্বাচনটা উনারা পিছিয়েছেন।”

নির্বাচনের তারিখ পেছানোয় সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষাও পেছানোর প্রসঙ্গ টেনে তাবিথ বলেন, “আমাদের সকল তরুণ ছাত্র-ছাত্রীদের বলছি যে, উনাদের এসএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি যে, মনে যদি কোনো কষ্ট এই মর্মে হয়ে থাকে আমাদের নির্বাচনের জন্য- আমি দুঃখিত সেটার জন্য।”