রওশনের সইয়ে ১৬ জনের পদোন্নতি, মানছেন না কাদের

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ‘ক্ষমতাবলে’ ১৬ জনকে দলের বিভিন্ন পদে মনোনীত করেছেন রওশন এরশাদ, যা মানতে নারাজ দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Jan 2020, 02:26 PM
Updated : 15 Jan 2020, 02:40 PM

বুধবার দুপুরে জাতীয় পার্টির প্যাডে রওশনের স্বাক্ষরে জাতীয় পার্টির নেতাদের পদোন্নতির ঘোষণা আসে। চিঠিতে রওশন বলেন, “এই মনোনয়ন ও সাংগঠনিক নির্দেশনা অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে।”

রওশন এরশাদ তার ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতা এম এ সাত্তারকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন।

এছাড়াও প্রেসিডিয়াম সদস্য ঘোষণা করেছেন অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, অধ্যাপক মো. ইকবাল হোসেন রাজু, নূরে হাসনা লিলি চৌধুরী, অধ্যাপিকা রওশন আরা মান্নান, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, কাজী মামুনুর রশীদ, মাহজাবিন মুর্শেদ, নুরুল ইসলাম নূরু, নুরুল ইসলাম ওমর ও আরিফুর রহমান খানকে।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে আমানত হোসেন আমানত, সাবেক এমপি ইয়াহিয়া এবং যুগ্ম মহাসচিব পদে মো. জসিম উদ্দিন ভুইয়া ও রেজাউল করিমের নাম ঘোষণা করেছেন রওশন।

জাতীয় পার্টির আগের কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম নূরু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমাদের সবার অনেক অবদান রয়েছে। দলের দুঃসময়ে আমাদের ভূমিকাকে আজ মূল্যায়ন করলেন ম্যাডাম।”

গত বছর মে মাসে জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব নিয়ে বিবাদের মধ্যে গুলশান নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন রওশন এরশাদ

রওশন এরশাদের ওই চিঠি এখনও হাতে আসেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাতে চিঠি এসে পৌঁছাক, তারপর বলতে পারব। আমি এখনই কিছু বলতে পারব না।”

এরপর সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের পক্ষে তার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠান গণমাধ্যমে।

এতে রওশনের নেতাদের পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টিকে ‘বিভ্রান্তিকর খবর’ আখ্যায়িত করে বলা হয়, “এভাবে নিয়োগ দেওয়ার অধিকার প্রধান পৃষ্ঠপোষকের নেই।”

দলের নেতাদের সঙ্গে জিএম কাদের

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় পার্টির নবম কাউন্সিলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় পার্টির বিভিন্ন পদে নিয়োগ প্রদানের ক্ষমতা একমাত্র পার্টি চেয়ারম্যানের। অন্য কারও পক্ষে জাতীয় পার্টির কোনো পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য কারও নেই।”

জাতীয় পার্টিতে আধিপত্য নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এবং এরশাদের ছোট ভাই জিএম কাদেরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। গত বছর জুলাইয়ে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের চেয়ারম্যানের পদ নিয়ে সে দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়।

দল যখন আরেক দফা ভাঙ্গনের মুখে, তখন কাদেরপন্থি ও রওশনপন্থি নেতারা সমঝোতা শেষে জি এম কাদেরকে দলের চেয়ারম্যানের পদে রাখেন। রওশন এরশাদকে তারা জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধীদলের নেতা হিসেবে রেখে দেন।

এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির প্রথম সম্মেলনে গত ২৮ ডিসেম্বর রওশনের জন্য প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদ সৃষ্টি করা হয়। চেয়ারম্যান হন জিএম কাদের। ওই সম্মেলন রওশন ছিলেন না, আসেননি সাদ এরশাদও।

সে সময় রওশনের ‘আলঙ্করিক পদ’ নিয়ে মহাসচিব রাঙ্গাঁ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “দলের সর্বক্ষেত্রে রওশন এরশাদের অবস্থান দলের চেয়ারম্যানের ঊর্ধ্বে থাকবে।”

রওশন এরশাদের এই চিঠির পর পুরনো বিতর্ক আবার উসকে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা।