ভোট চাইব না, রাজনৈতিক বক্তব্য দেব: তোফায়েল

বিধির বেড়াজালে ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট চাইতে না পারলেও রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Jan 2020, 05:17 PM
Updated : 14 Jan 2020, 05:17 PM

সংসদ সদস্যদের প্রচারে বিধিনিষেধ নিয়ে ইসিতে গিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসার পর মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় একথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক তোফায়েল আহমেদ।

এদিন সংসদে সিটি নির্বাচন নিয়ে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন বিএনপির হারুনুর রশীদ। তিনি সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সমালোচনা করলে তার জবাব দেন তোফায়েল।

ঢাকা সিটি নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে হারুন বলেন, “আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হয়েছে। সেখানে একজন বিদ্রোহীসহ বিএনপির দুজন এবং আওয়ামী লীগের একজন প্রার্থী ছিল। এতে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকা ৩ নম্বর রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হয়েছে, কোথাও কোনো গণ্ডগোল হয়নি। এতে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে।

“একই দিনে চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপনির্বাচন হয়েছে, ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেখানে ভোটের আগের দিন রাতে প্রত্যেক কেন্দ্রের পাশে ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে। সকাল বেলায় ভোট কেন্দ্রে সরকারি দলের লাঠিসোঁটা নিয়ে তাণ্ডব। সামনে ঢাকা সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচন কি আসলেই নির্বাচন হবে? এতে কি জনগণ ভোট দিতে পারবে? এই নির্বাচনের পরিবেশ কি সরকার নিশ্চিত করতে পারবে? এই বিষয়ে দায়িত্বশীলদের থেকে উত্তর পেতে চাই।”

হারুন ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে বলেন, “ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, মন্ত্রী-এমপিদের অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই, এই আইন আপনারা করেছেন। আপনারা আইন করে আপনারাই তা লঙ্ঘন করছেন।”

ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপির ১০ শতাংশ মানুষের সমর্থন নেই। উনি মাপলেন কী করে? উনার কি ৯ কোটি ভোটারদের মাপার মেশিন আছে? এটা মাপার একমাত্র মেশিন হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।”

হারুনের বক্তব্যের জবাব দিতে দাঁড়িয়ে তোফায়েল আহমেদ বিএনপি আমলের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও নানা মন্তব্য তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “যতক্ষণ বিএনপি নির্বাচনে না জেতেন ততক্ষণ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় না। এখানে হারুনুর রশীদ তার নিজের এলাকায় নির্বাচনের কথা বলেছেন। উনার কথায়ই প্রমাণ হয়েছে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। নিরপেক্ষ হয়েছে বলেই চট্টগ্রামে ভোট কম পড়েছে। আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করলে সেখানে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট দিয়ে বিজয়ী করতে পারতো। সেটা তো করেনি। এই আওয়ামী লীগের আমলেই বিএনপি ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল।

“আর ভোট মাপার যন্ত্র আছে হারুনুর রশীদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কাছে। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসনও পাবে না। কিন্তু দেখা গেল ২০০৮ সালে বিএনপিই ৩০টি সিট পেয়েছিল।”

বিএনপির আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে তোফায়েল বলেন, “সাধারণ নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়া প্রার্থী বিএনপি ক্ষমতায় যাওয়ার পর উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। আমরা জয়ী হওয়া আসনে আমাদের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়!”

ঢাকা সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই নির্বাচন শুরুর আগে থেকেই বিএনপি বলা শুরু করেছে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। এটা তাদের ‘অভ্যাসে পরিণত হয়েছে’।

ইসিতে গিয়েও একই কথা বলে এসেছিলেন তোফায়েল আহমেদ (ফাইল ছবি)

সংসদ সদস্যদের প্রচারের বিষয়ে তোফায়েল বলেন, “আমরা নির্বাচন কমিশনে গেলে তারা স্বীকার করেছেন এমপিদের বিষয়টি। কমিশন চেষ্টা করেছিলেন এটা অ্যামেন্ড করতে কিন্তু পারেননি। আমরা কমিশনকে বলেছি, আমরা এটা পরিবর্তন করতে আসিনি। আমরা সরকারি দল। এটা করতে গেলে আমাদের উপর মানুষের একটি বিরূপ ধারণা হবে। আর এটা আইন নয়। এটা একটা বিধি।

“আমরা সংসদ সদস্যরা কী সুবিধাভোগী। আমরা কী অফিস হোল্ড করি? ঢাকা উত্তরের বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদ কি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন? তিনি মন্ত্রী ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, উপ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নন, গুরুত্বপূর্ণ হলাম আমি, শেখ সেলিম!“

তোফায়েল বলেন, “আমাদের মুজিববর্ষ শুরু হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত হলো সব জায়গায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে সভা পালন করব। আমরা ঢাকা সিটিতে মুজিববর্ষের সভা করব। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ওপর বক্তব্য দেবো। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাজনৈতিক বক্তব্য দেব। আমরা প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইব না।”

বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যেটা আমরা করি, সেটাতেই তাদের বিরোধিতা। এজন্য আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম বিএনপি মানে এটা হতে পারে বাংলাদেশ নেগেটিভ পার্টি।”

তোফায়েলের পর আমির হোসেন আমু বলেন, “বিএনপির সব সময় নেগেটিভ নির্বাচন ও নেগেটিভ পলিটিক্স করে আসছে। তারা ক্ষমতায় আসার জন্য অন্যপথ অবলম্বনের চেষ্টা করে। নির্বাচন বিমুখতার প্রমাণ করেছে। তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা রাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে রাজনৈতিক অপশক্তির উপর আশ্রয় করে।”

নির্বাচনে সমন্বয়ক নিয়ে বিতর্ক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সমন্বয়কারীর মাধ্যমে তো নির্বাচন অবৈধ হতে পারে না, এটা তো কোনো প্রমাণ হতে পারে না। নির্বাচনকে তারা অন্যখাতে প্রবাহিত করে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এটাকে বড় করে দেখছে।”

আমুর বক্তব্যের পর সংসদ থেকে ওয়াকআউট করে বিএনপির সংসদ সদস্যরা।

অনির্ধারিত আলোচনায় তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, “বলেছে ধর্মসভা করা যাবে না। আমি কাল থেকে মিলাদ মাহফিল করব। প্রার্থীর জন্য দোয়া করব। দেখি কে ঠেকায়।”