প্রচারে হামলার অভিযোগে ইসিতে তাবিথের চিঠি

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা হয়েছে অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Jan 2020, 05:05 PM
Updated : 12 Jan 2020, 05:05 PM

তাবিথের নির্বাচনী প্রচারণায় গণমাধ্যম সমন্বয়ক মাহমুদ হাসান জানান, ‘হামলার’ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।

নিরাপত্তা চেয়ে চিঠিতে তাবিথ লিখেছেন, “মিরপুর দারুস সালাম থানা এলাকায় প্রচার চালানোর সময় নেতা-কর্মীদের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে অতর্কিত আক্রমণ ও কয়েকজনকে গুরুতর আহত করেছে আওয়ামী লীগ।”

এ ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

হাসান বলেন, তাবিথ আউয়ালের গণসংযোগ চলাকালে মিরপুর সনি সিনেমা হল এলাকা থেকে পাঁচজন কর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরপুর থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নির্বাচনী প্রচারণার সময় নিজেদের মধ্যে মারামারি, হাতাহাতি ও গণ্ডগোলের দায়ে আমরা তিনজনকে থানায় এনেছি।”

এর আগে রোববার বেলা ১০টায় রাজধানীর মিরপুরের উত্তর বিশিল এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন তাবিথ।

রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় রোববার নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

পরে মিরপুরের মাজার জিয়ারত করতে গেলে সেখানে ‘আওয়ামী লীগ কর্মীদের’ সঙ্গে তাবিথের সমর্থকদের হাতাহাতি হয় বলে জানান হাসান।

তিনি বলেন, “সেখান থেকে প্রচারের জন্য যাত্রা শুরু হওয়ার পর বিপরীত দিক থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ইটপাটকেল নিপেক্ষ করে। এ সময় আল আমিন নামে এক যুবদল কর্মী আহত হন।”

ঘটনার পর তাবিথ আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, “পুলিশের সামনেই প্রতিপক্ষের লোকজন জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে আমাদের প্রচারে হামলা করেছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। হামলায় আল আমিন নামের এক কর্মী আহত হয়েছেন।

“প্রচারে বাধা আসছে। যত বাধা-বিপত্তি আসুক আমরা পিছু হটব না। আমাদের প্রচারে সাধারণ জনগণের সমর্থন আছে। আমরা তাদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবই।”

নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে বিএনপির মেয়র প্রার্থী বলেন, “হামলা ও বাধা নিয়ে আমাদের আশঙ্কার কথা দিন দিন প্রমাণিত হচ্ছে। আজও কয়েকটি এলাকায় নানাভাবে সরকারি দলের লোকজন আমাদের প্রচারণায় বাধা দিয়েছে। রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে, হুমকি দিচ্ছে, এমনকি দূর থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এরপরও আমরা আমাদের পক্ষ থেকে ধৈর্য্য ধরে শৃঙ্খলা বজায় রাখছি।”

তাবিথের গণসংযোগে ‘হামলার’ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, “গুম, হামলা-মামলা-অপহরণ আওয়ামী লীগের অতীত চরিত্র। সেখান থেকে তারা কখনও বের হতে পারেনি। নির্বাচন এলে তারা প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।”

সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে তাবিথের নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এসব করে জনস্রোত থামানো যাবে না। জনগণ মাঠে নেমে পড়েছে।জনস্রোত দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। যত বাধাই আসুক আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।”

মারামারির ওই ঘটনার পরে তাবিথ আউয়াল উত্তর বিশিল, গুদারাঘাট, চিড়িয়াখানা রোড, ১নম্বর মিরপুর ঈদগাঁ মাঠ, ডি ব্লক মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বিশিল, হাজী বশির উদ্দিন স্কুল রোড, হাবুলের পুকুর পাড়, ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পীরের বাগ, ৬০ ফুট, মধ্য পীরেরবাগ, মোল্লা পাড়া, মনিপুরি স্কুল রোড, জোনাকি রোড, বড়বাগ হয়ে মিরপুর থানা, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর মাজার থেকে দ্বিতীয় কলোনি, তৃতীয় কলোনি হয়ে দারুস সালাম ফুরফুরা শরীফে গণসংযোগ করেন।

দুপুরে শাহ আলী মাজার মসজিদে যোহরের নামাজ পড়ে মাজার জিয়ারত করেন তাবিথ আউয়াল।

রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর এলাকায় রোববার নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সেখান থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আহমেদ মিষ্টিকে নিয়ে তার নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করেন।

তাবিথ বলেন, “আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। সরকার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ভুলুণ্ঠিত করেছে। মানুষের সে অধিকার ফিরিয়ে দিতেই নির্বাচনে জয়লাভ করতে হবে।”

মিরপুরের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তিনি বলেন, “মিরপুর এলাকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পুরো শহর বায়ু দূষণে ঢেকে গেছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখার কারণে এইডিস মশার জন্ম হচ্ছে। ফলে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, অনেক প্রাণহানিও হয়েছে।

“আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আগামী দিনে জনকল্যাণ ও জনগণের মেয়র হিসেবে কাজ করতে চেষ্টা করব। আমি নগরবাসীর সব সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখব।”

জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, “মানুষ যাতে কোনো ধরনের ভয়-ভীতি ছাড়া চলতে পারে, বসবাস করতে পারে সে পথ আমরা তৈরি করব। আশা করি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।”

তাবিথের নির্বাচনী প্রচারে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুন রায় চৌধুরী, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দুলু, ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদ খান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, স্বেচ্ছাসেবক দলের উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন, সাধারণ সম্পাদক রেজোওয়ান ইসলাম রিয়াজসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।