উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েলকে ঢাকা উত্তর এবং আমুকে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃত্বে রেখেছে আওয়ামী লীগ। গত শুক্রবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় দুই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
এক সপ্তাহ পর শনিবার তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করেন।
পরে সিইসি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা স্থানীয় নির্বাচনের কোনো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পারবেন না। তবে এই দুজনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য তিনি জানেন না।
“এমপিরা সব কিছু করতে পারবেন না। নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারণা করতে পারবেন না। ভোটের সমন্বয় করতে পারবেন না।”
বৈঠক শেষে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া ছাড়া সবই করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা নির্বাচনী আচরণ বিধি ‘ভাঙছেন না’।
“দলীয় প্রার্থীর প্রচারণা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিপাকে থাকার কিছু নেই। দলীয় কর্মসূচিতে ভোট না চাইলেই বিধি ভাঙার কোনো কারণ নেই।”
তিনি বলেন, “মুজিববর্ষ উদযাপন সফল করার জন্য আমরা বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করছি। সেখানে কেউ ভোট না চাইলে তো আর আমাদের কোনো সমস্যা না। আর আমরা তো নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনেই চলছি। নির্বাচনী আচরণ বিধির আমরা লংঘন করছি না।”
তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে ইসির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমসহ কয়েকজন ছিলেন।
কমিটি পরিবর্তনের কারণ নেই: হানিফ
নির্বাচনী আচরণ বিধির কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে পরিবর্তন আনা হবে কি না জানতে চাইলে তার সম্ভাবনা নাকচ করেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যারা এমপি, তারা নির্বাচনে কোনো প্রচারণা বিশেষ করে ভোট চাইতে পারব না। কিন্তু দলীয় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলায় বাধা নিষেধের কিছু নেই।”
নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও ‘বিধি অনুযায়ী কাজ করছে’ বলে দাবি করেন তিনি।
“আমরা সেই বিধি অনুযায়ী নেতাকর্মীদের নিয়ে বসি। ভোট চাচ্ছি না।…দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি পরিবর্তনেরও কোনো কারণ নেই। আমরা নিয়ম অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”
এখনও জানি না, অফিসিয়ালি পেলে নিষেধ করব: সিইসি
তোফায়েল আহমেদ নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সিইসি জানান, তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সব বিষয় বুঝিয়ে বলা হয়েছে। বিধিতে যাদের বিষয়ে প্রচার বা ভোটের কাজে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তারা প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলতে পারবেন না। রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে পারবেন, কিন্তু ভোটের কাজে যেতে পারবেন না।
তোফায়েল-আমুর নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি বৈধ কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বলতে পারব না অফিসিয়ালি কারা আছে না আছে- তা তো আমি জানি না।…তারা আমাদের সঙ্গে বৈঠকে কারও পক্ষে-বিপক্ষে বলতে আসেননি, আইনের ব্যাখ্যা জানতে এসেছেন।”
তবে এই দুজনকে দলীয় প্রার্থীর ভোটের কাজে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকার পক্ষে মত দিয়েছেন সিইসি।
এক প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, “আমার মনে হয় পারেন না। আমি জানি না, কাদেরকে কী কমিটিতে রাখা হয়েছে। অফিসিয়ালি এখনও পাইনি। কেউ যদি (কাগজপত্র) পেয়ে থাকে তাদেরকে নিষেধ করেন, সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
“অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে ভোটের কাজে রাখতে নিষেধ করব।”
প্রার্থীর সঙ্গে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, “এ নিয়ে বিধিতে বাধা-নিষেধ নেই। পার্টির লোক হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় যদি রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে থাকে সেখানে প্রার্থী যেতে পারবেন- এটা নিষেধ করা যাবে না।
“কিন্তু সেখানে গিয়ে নির্বাচনের বিষয়ে কথা হবে না, রাজনৈতিক কথা হতে পারে। মুজিববর্ষ কর্মসূচি রয়েছে সেখানে যে কোনো লোক যেতে পারে। সেখানে কোনো রকম নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা হবে না।”