ভোট চাওয়া ছাড়া এমপিরা সবই পারবে: তোফায়েল

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনার পর আওয়ামী লীগের নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ঢাকা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া ছাড়া সবই করতে পারবেন সংসদ সদস্যরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Jan 2020, 08:31 AM
Updated : 11 Jan 2020, 09:15 AM

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সুবিধাপ্রাপ্ত ও গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীদের প্রচারে বাধা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসার মধ্যে শনিবার ইসিতে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।

উত্তর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক তোফায়েলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি বৈঠক করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে।

বৈঠক শেষে তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী বিধিমালার অসঙ্গতি তারা তুলে ধরেছেন ইসির কাছে। আর এতে মাহবুব তালুকদার ছাড়া অন্য নির্বাচন কমিশনাররা একমতও পোষণ করেছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এমপিরা পথসভায় যাবে না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্যাম্পেইন করব না। কিন্তু আমাদের যে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমরা তো ঘরোয়াভাবে মিটিং করতে পারব।

“নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো ক্যাম্পেইনে যেতে পারব না, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। তারা অনুরোধ করেছেন, এমপিদের ভোট না চাইতে। ভোট চাওয়া ছাড়া আমরা সব করব।”

নির্বাচনী আচরণবিধিতে সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সংসদ সদস্যদেরও স্থানীয় নির্বাচনে প্রচারে নামার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

এনিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, এতে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা প্রচারে নামতে পারলেও আওয়ামী লীগ নেতারা পারছেন না।

তোফায়েল বলেন, “এই বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি, জাতীয় সংসদ সদস্যরা কিন্তু সুবিধাভোগী না। সুবিধাভোগী হলো অফিস অফ প্রফিট যেটা আমরা এমপিরা পাই না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, হুইপ, স্পিকাররা পায়।

“অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির যে বিষয়টি আমাদের শেখ সেলিম, হানিফ, তারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আবার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর, তারা সবাই কিন্তু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তারাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।”

আইন সভার প্রবীণ এই সদস্য বলেন, “তারা (ইসি) স্বীকার করেছে যে আসলে সংজ্ঞা মধ্যে স্ববিরোধিতা রয়েছে।

“মাহবুব তালুকদার সাহেব সেদিন যে কথা বলেছিলেন, আজকেও বলেছেন, আমি আমার অফিস বা ঘরে বসেও নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। উনি ছাড়া সবাই একমত হয়েছেন, এটা বাস্তবসম্মত নয়।”

তবে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণের অংশ হিসেবে ইসির বিধিমালা অনুসরণের প্রতিশ্রুতি দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল।

“এখন যদি কিছু করি সরকারের জন্য মানুষের চোখে ভালো হবে না, তাদের (ইসি) চোখেও এটি ভালো হবে না। আমরা ঘরোয়াভাবে অফিসে বসে বা মহল্লায় গিয়ে কোনো বাসায় বসে মিটিং করতে পারব, এগুলোতে কোনো বাধা নেই। তাদের অনুরোধ, আমরা যারা এমপি তারা যেন ভোট না চাই।”

“গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হবে, এ ব্যাপারে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। যেহেতু আমরা ক্ষমতাসীন দল আমরা এমন কোনো কাজ করব না, যাতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়,” বলেন তোফায়েল।

আলোচনার অন্য বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, “কারেও নামে ওয়ারেন্ট থাকলে আইপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা নেবে, এতে কিছু করার নেই। সোশাল মিডিয়ায় যে অপপ্রচার করে, এটা তারা বন্ধ করার উদ্যোগ নেবে। ইভিএম সম্পর্কে আমরা বলেছি, এটি সম্পূর্ণ আপনাদের (ইসি) এখতিয়ার।”

বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, তাদের প্রার্থী ও কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে। ইভিএম নিয়েও আপত্তি রয়েছে তাদের।

ইসির সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, উত্তর সিটির মিডিয়া সেলের সদস্য জয়দেব নন্দী।

সিইসির সঙ্গে ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।

সমন্বয়ক হতে পারবেন না এমপিরা: সিইসি

বৈঠক শেষে সিইসি নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেন, “নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের (এমপিদের) কোনো সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না, তাছাড়া তারা সবই করতে পারবেন। নির্বাচনের কোনো সমন্বয়ও তারা করতে পারবেন না।”

তোফায়েল আহমেদ ও আমির হোসেন আমুকে দুই সিটি নির্বাচনের সমন্বয়কের দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

তারা এ দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না।

“তবে সমন্বয়কের কমিটিতে কে আছে, অফিসিয়ালি তেমন কিছু পাইনি। পেলে তাদের নিষেধ করব সমন্বয়কারী হিসাবে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তবে ঘরে বসে কী করবেন, সেটা আমি কী করে বলব?

“নির্বাচনের কোনো কার্যক্রম, ঘরোয়া হোক বা বাইরেই হোক, সেটা তারা করতে পারবেন না। বিধিতে সেভাবেই বলা আছে। তাদেরকে আমরা সেটি বুঝিয়ে বলেছি।”

প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে নূরুল হুদা বলেন, “প্রার্থীর সঙ্গে এমপিরা থাকতে পারবেন কি না, আইনে তো তেমন কোনো বাধা-নিষেধ নেই। এমপিরা যেতে পারবে, তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হবে না।

“রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন মুজিব বর্ষ পালন হচ্ছে, সেখানে তো যে কোনো সভা-সমাবেশের আয়োজন হতে পারে, সেখানে তো সবাই যেতে পারবে। শুধু ভোট চাইতে পারবেন না।”