জমজমাট নির্বাচনী পরিবেশের আশায় কাউন্সিলর প্রার্থীরা

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকজ্যেষ্ঠ ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Jan 2020, 02:31 PM
Updated : 10 Jan 2020, 03:21 PM

শুক্রবার সকালে মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পরই শুরু হয় সাধারণ ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ। প্রতীক নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে লটারি করে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রতীক পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রার্থীরা বলেছেন, সব দল অংশ নেওয়ায় ভোটের মাঠ উৎসবমুখর রয়েছে। এছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের স্থানীয় পরিচিতি, প্রভাব নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে। এ কারণে নির্বাচন জমজমাট হবে বলে তাদের আশা।

এদের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলররা ‘নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে মেনে’ চলার প্রতিশ্রুতি দিলেও অন্যদের তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবু তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন।

ঢাকা উত্তর

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নং ওয়ার্ডের গতবারের কাউন্সিলর জাকির হোসেন বাবুলের উপর আস্থা রেখেছে তার দল আওয়ামী লীগ। ঠেলাগাড়ি প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমি সরকারি দলের প্রার্থী। অন্যান্য প্রার্থীদের চেয়ে তাই আমাকে আচরণবিধি আরও কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এবার ভোটের যে পরিবেশ দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, ভালো লড়াই জমবে।”

একই প্রতীক পেয়েছেন ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা। তিনি বলেন, “নির্বাচনের প্রচারণা বেশ শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। আমার ওয়ার্ডে বিএনপির দুজন প্রার্থী ছিলেন, একজন মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র পদে আছেন।

“ভোটের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। আশা করি, নির্বাচনের দিন ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবেন।”

এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ জামাল মোস্তফাকে সমর্থন দিলেও ভোটের মাঠ থেকে সরছেন না দলের স্থানীয় নেতা মোফাজ্জেল হোসেন।

ঝুড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “একই মুখ জনগণ আর কত দেখবে? তারা তো পরিবর্তন চায়।… আমি মনে করি, জনগণ নতুনত্বের আশায় কাউন্সিলর পদে আমাকে এবার নির্বাচিত করবেন। আমি  আশাবাদী।”

দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে ১৫ নং ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থক তানভীর আহমেদ হায়দার। রেডিও প্রতীক নিয়ে তিনি থাকছেন ভোটের মাঠে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না, দল থেকে খুব সমস্যা হবে। আর যারা এবার এই ওয়ার্ডে নির্বাচন করছে সব দল থেকে, তারা সবাই আমার আত্মীয়। তাই প্রচারণাতেও বাধা আসবে বলে আমি মনে করি না।”

৬,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন শিখা চক্রবর্তী। মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিখা প্রথমবারের মতো নির্বাচন করবেন।

তিনি বলেন, “আমার বাবা সুবীর কুমার চক্রবর্তী ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ৩৬ বছর ধরে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। এলাকায় আমার পরিবারের সুনাম রয়েছে। তাই আমি মনে করেছি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমার অনেক কিছু করার রয়েছে।”

১২ ও ১৭ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাসিনা বারী চৌধুরী বলেন, “দলের আরও ১০ জন প্রার্থী ছিল, কিন্তু দল আমার উপর আস্থা রেখেছে। নির্বাচনী প্রচারণায় আমি প্রতিবন্ধী নারী ও শিশু, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূল ইস্যুকে সামনে রাখব।”

৬,৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাননি রোমানা পারভিন আক্তার।

বই প্রতীকের এই প্রার্থী বলেন, “আমি এর আগে যুব মহিলা লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতির দায়িত্বে ছিলাম। দলে আমার কন্ট্রিবিউশন ছিল আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু দল আমাকে দিল না।

“তাই দল থেকে আমি দূরে সরে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জনগণের সেবা করতে আমি কাউন্সিলর ইলেকশন করব।আমি জনগণের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে চাই বলেই নির্বাচন করব। “

৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন না পেলেও প্রার্থী হিসেবে থাকছেন রাহাতুল ইসলামস ভুঁইয়া।

তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সামাজিক বলয়ে অবস্থান যার যত উন্নত তিনিই তত এগিয়ে থাকবেন। তাই দলীয় অবস্থান এখানে মুখ্য নয়।”

ঢাকা দক্ষিণ

ডিএসসিসির ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু আহমদ মন্নাফী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। সেখানে এবার নির্বাচন করছেন তার ছেলে আহমদ ইমতিয়াজ মন্নাফী। পিতার নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি পেয়েছেন ইমতিয়াজও। এজন্য খুশি তিনি।

ইমতিয়াজ বলেন, “এবারের নির্বাচন তার কাছে উৎসবের মতো মনে হচ্ছে। আব্বা ঘুড়ি প্রতীকে নির্বাচন করে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। আমারও প্রথম নির্বাচনে এই প্রতীক পেয়েছি। আমার আটত্রিশ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ দলমত নির্বিশেষে আমার জন্য কাজ করছেন।

“এখানে ব্যক্তি হিসেবে আমাকে সবাই চেনে। এছাড়া দলের সমর্থন তো আছেই। ইনশাল্লাহ আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।”

দক্ষিণের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোজাম্মেল হকের প্রতীকও ঘড়ি। ক্যাসিনোকাণ্ড নিয়ে আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদের ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন তিনি। মোজাম্মেল ছাড়াও আরও দলেরই তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। তারপরও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

“এই ওয়ার্ডে ভালো লড়াই হবে বলে আশা করি। তবে এলাকার মানুষ সঠিক জনপ্রতিনিধি বাছাই করতে ভুল করবে না। এজন্য আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”

৩১, ৩২, ৩৩ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী আসনের বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন নাসরীন রশিদ পুতুল। নির্বাচনে বই প্রতীক পেয়েছেন বর্তমান এই কাউন্সিলর।

পুতুল বলেন, তার ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী চারজন। এর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগসমর্থিত, বাকি দুজনও আওয়ামী লীগ ঘরানার। একারণে তিনি কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন।

“এবার নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয় সেটা আশা করছি। নিরপেক্ষ ভোট হলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে পরিবেশ ভালোই। আমার অবস্থানও ভালো তাই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।”