বিএনপিতে ‘পরিবারতন্ত্রের’ ফিরিস্তি দিলেন হাছান মাহমুদ

বিএনপিতে পরিবারতন্ত্রের ফিরিস্তি তুলে ধরে দলটিকে এর ‘প্রধান পৃষ্ঠপোষক’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2020, 08:47 AM
Updated : 5 Jan 2020, 08:47 AM

আওয়ামী লীগে এ ধরনের পদ কাউকে দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেছেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।

গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ‘পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে’।

তিনি বলেন, “আপনি দেখবেন, এখানে একদলীয় শুধু নয়, এক ব্যক্তিও হয়ে যাচ্ছে, একটা পরিবার হয়ে যাচ্ছে। “তাকিয়ে দেখেন নমিনেশন কাকে দেয়, কারা আসে, কে কোথায় আসে, আপনার সংগঠনগুলোর প্রধান কারা হয়? তাহলে বোঝা যাবে যে, তারা আজকে পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে।”

রোববার সচিবালয়ে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময়ও এই বিষয়টি উঠলে জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী।

হাছান মাহমুদ বলেন, “বিএনপি হচ্ছে পরিবারতন্ত্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। পরিবারতন্ত্রের মধ্যে তিনি (ফখরুল) যে কথাটি বলেছেন সেটি তার বেলায়ই প্রযোজ্য। আমি প্রশ্ন রাখি ইশরাক হোসেন কোন যোগ্যতায় দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে মনোনয়ন পাইলেন? তিরি রাজনীতি করেছেন? সাদেক হোসেন খোকার ছেলে, সেই যোগ্যতায় তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

“তাবিথ আউয়ালের বাবা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। প্রথমবার যখন তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তিনি কোন যোগ্যতায় পেয়েছিলেন? ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলের যোগ্যতায়।”

বিএনপিতে যে পরিবারতন্ত্রের চর্চা হয় তার কয়েকটি উদারহরণ তুলে ধরেন তিনি।

“খালেদা জিয়া তার দলের মধ্যে পুরোপুরি পরিবারতন্ত্র চালু করেছিলেন। তার বোন খুরশিদ জাহান হককে তিনি প্রথম মহিলা দলের নেতৃত্ব দেন, দলের ভাইস চেয়ারম্যান বানান, এরপর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী বানান। ভাই সাঈদ এস্কাদারকে তিনি এমপি বানান এবং দলের বিশেষ সম্পাদক, তার জন্য নতুন পোস্ট খোলা হয়।

“আরেক ভাই শামীম এস্কান্দার কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে না থাকলেও বিমানের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। বেগম খালেদা জিয়ার আরেক বোন আছেন, তিনি ব্রুনাই থাকেন, বিউটি আপা, তার ছেলে সাইফুল ইসলাম ডিউককে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব নিয়োগ দিয়েছিলেন। এপদে থেকে তিনি নিজে যেমন ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন তেমনি অনেক কলঙ্করও জন্ম দিয়েছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি বাড়ি দখল করেছিলেন। তার আরেক ভাই শাহরিন ইসলাম তুহিন, নীলফামারী বিএনপির সভাপতি অর্থাৎ খালেদা জিয়ার ভাগ্নে।

“এছাড়া আমরা একটি সকাল বেলা হঠাৎ দেখতে পেলাম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব নিয়োগপ্রাপ্ত হলেন। তিনি কোনো রাজনীতির মধ্যে ছিলেন না। এখন বিএনপির চেয়ারম্যান হচ্ছেন খালেদা জিয়া আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হচ্ছেন তার পুত্র তারেক রহমান, দুজনই শাস্তিপ্রাপ্ত আসামি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের দায়ে।”

একটি কাগজে টুকে রাখা নোট দেখে দেখে হাছান মাহমুদ বলেন, “শুধু এখানেই সীমাবন্ধ নেই, নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুন রায় চৌধুরী, বাবা-মেয়ে দুজনেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মির্জা আব্বাস বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, তার স্ত্রী মহিলা দলের সভাপতি।

“পুরো পরিবারতন্ত্রের মধ্যে বসে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে কথাটি বলেছেন এটি তাদের দলের বেলায়ই প্রযোজ্য। আমাদের দলে কাউকে পারিবারিক কারণে কোনো পদ দেওয়া হয় না এবং হয়নি।”

এ পর্যায়ে একজন সাংবাদিক চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, পরবর্তীতে সাংসদ এবং মন্ত্রী হওয়া, শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশের যুবলীগের সভাপতি হওয়ার বিষয় তুলে ধরেন।

জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “ব্যারিস্টার নওফেলকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব এবং এমপি হিসেবে এবং তৎপরবর্তীকে শিক্ষা উপমন্ত্রী হিসেবে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস তিনি তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন এবং এ সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন।

“শেখ ফজলে শামস পরশের ব্যাপারেও আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করবেন পরশ একজন উচ্চ শিক্ষিত মানুষ, কেউ কেউ বলে, রাজনীতিতে শিক্ষিত মানুষের বড় অভাব। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি পরশকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি ইংরেজি সাহিত্যে অর্নাস এবং আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করেছেন। তিনি এখনও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার মতো একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে যুবলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, আমি মনে করি সেটি একটি সময়োচিত পদক্ষেপ ছিল এবং এটি সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তারেক রহমান হাওয়া ভবন সৃষ্টি করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করছিলেন। আমাদের দলে এ ধরনের কোনো কিছু হয়নি।

“মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মেয়র নির্বাচন নিয়ে ইংগিত করেছেন। ফজলে নূর তাপস একজন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী, তিনবারের সংসদ সদস্য, জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতার বিচারে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”