হলফনামা: উত্তরে আতিকের চেয়ে সম্পদ বেশি তাবিথের

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী দুজনই পেশায় ব্যবসায়ী। সম্পদের হিসাবে আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলামের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন বিএনপির তাবিথ আউয়াল। তবে দায়-দেনা বেশি আতিকের।

মঈনুল হক চৌধুরী জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 06:51 PM
Updated : 1 Jan 2020, 06:52 PM

উত্তরের ৭ মেয়র প্রার্থীর হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য মিলেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন  নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৮৯ জন (মোট ৪৭০ জন) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চলবে বাছাই। 

প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এ প্রার্থিতা নিশ্চিত হবে  ৯ জানুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। প্রচার শেষে ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি।

আবারও মেয়র প্রার্থী হলেন আতিকুল ইসলাম।

হলফনামায় আতিকুল ইসলাম

৫৮ বছর বয়সী (জন্ম ১ জুলাই ১৯৬১) আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম তৈরি পোশাক খাতের একজন ব্যবসায়ী। মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও মাজেদা আহমেদের এ সন্তান বিকম পাস। তার রয়েছে ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

বার্ষিক আয়: ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৮টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ও স্থাবর সম্পদের মূল্যমান প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।

আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে- কৃষি খাত ৩ লাখ ৮০ হাজার;  ব্যবসা (পরিতোষিক) ৬৪ লাখ ১৪ হাজার ৮০১ টাকা; বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া ৫০ লাখ ৫ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ ৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা, মৎস খাত ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

আতিকের স্ত্রীর আয় ১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে পান ৪২ হাজার ৩৪১ টাকা ও মৎস্য খাত থেকে আয় ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

অস্থাবর সম্পদ: আতিকের বন্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভূক্ত ও তালিকা ভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার ৩ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার, স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকার। নিজের নামে ২ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে।

স্থাবর সম্পদ: নিজের নামে ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার কৃষি জমি; ২৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার অকৃষি জমি রয়েছে। আর স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ৩২ লাখ টাকার। নিজের নামে বাড়ি/এপার্টমেন্ট রয়েছে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার, আর স্ত্রীর নামে ৫০ লাখ টাকার (বায়নাকৃত)। এছাড়া রয়েছে মৎস্য খামার। 

ব্যাংকে ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা গৃহঋণ রয়েছে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বেশ ঋণের তালিকাও তুলে ধরা হয়েছে হলফনামায়।

এক বছর আগে উত্তরের মেয়র পদে উপ নির্বাচনের সময়েও হলফনামায় প্রায় একই তথ্য দেখিয়েছিলেন আতিকুল ইসলাম। বাড়ি থাকলেও নিজের নামে ছিল না কোনো গাড়ি।

এনিয়ে দ্বিতীয়বার মেয়র প্রার্থী হলেন তাবিথ আউয়াল।

হলফনামায় তাবিথ আউয়াল

৪১ বছর বয়সী (জন্ম ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৯) তাবিথ আউয়াল পেশায় ব্যবসায়ী। ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন তিনি। আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও নাসরিন আউয়ালের এ সন্তান এমএসসি ডিগ্রিধারী।

তার বার্ষিক আয় ৪ কোটি টাকারও বেশি।

অস্থাবর সম্পদ: তাবিথের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরমধ্যে নগদ প্রায় দেড় কোটি টাকা; কোম্পানির শেয়ার প্রায় ১৯ কোটি টাকা, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ প্রায় ৯ কোটি টাকা, অন্যান্য খাতে সাড়ে ১৫ কোটি টাকার মূল্যমানের সম্পদ রয়েছে। ৬০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের বাইরে ২ কোটি টাকারও বেশি স্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।

স্থাবর সম্পদ: তাবিথের স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৪ দশমিক ২৪ একর কৃষি জমি, ১৬ দশমিক ৪৮ একর অকৃষি জমি, দশমিক ৫৬ একর অন্যান্য জমি রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ৯২৪ ও ১ হাজার ৪৩ বর্গফুট আয়তনের দুটি অ্যাপার্টমেন্ট।

এসওডি ঋণ হিসেবে ২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার দেনা রয়েছে ব্যাংকে। তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণের তালিকাও তুলে ধরা হয়েছে হলফনামায়।

পাঁচ বছর আগে উত্তরের ভোটেও ছিলেন তাবিথ। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী,  তখন তিনি নিজে ১৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বার্ষিক আয় দেখান সোয়া কোটি টাকা।  তার অস্থাবর সম্পত্তির তালিকায় ছিল ১৪ কোটি ৮১ লাখ টাকার বন্ড ও শেয়ার। অন্যান্য খাতে রয়েছে আরও ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকার সম্পদ। তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬০ ভরি স্বর্ণ।

হলফনামায় কামরুল ইসলাম

জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী জিএম কামরুল ইসলাম এমফিল ডিগ্রিধারী। পেশায় ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২১ লাখ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ব্যাংকে রয়েছে ২০ লাখ টাকা। রয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকার মূল্যমানের যানবাহন। এছাড়া ইলেকট্রনিক, আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৮ বিঘা কৃষি জমি, ৭ কাঠা অকৃষি জমি এবং সাত কোটি টাকা মূল্যমানের ভবন। তার কোনো দায়দেনা নেই।

উত্তরে এবারই প্রথম মেয়র নির্বাচনে লড়ছেন সিপিবির সাজেদুল হক রুবেল।

হলখনামায় সাজেদুল হক রুবেল

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল পেশায় দন্ত চিকিৎসক। এ পেশা থেকে তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে ২০০৬ সালে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হলেও তা বাতিল হয়।

তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ৫ হাজার টাকা; ব্যাংকে জমা ৫০০ টাকা; ২ ভরি স্বর্ণ; মোবাইল সেট ২টি ও আসবাবপত্র ৫০ হাজার টাকার।

স্ত্রীর নামে ৮ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা ও নগদ ১৫ হাজার টাকা এবং একটি করে মোবাইল, ল্যাপটপ ও এসি রয়েছে।

ব্যাংকের এ প্রার্থীর ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা ঋণ রয়েছে।

অন্যান্য

শাহীন খান: পিডিপির মেয়র প্রার্থী শাহীন খান স্বশিক্ষিত। তার বিরুদ্ধে মামলাও নেই। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ, ব্যাংকে তিন লাখ, একটি গাড়ি ও ৩ ভরি স্বর্ণ রয়েছে। স্থাবর সম্পদ ও ব্যাংক ঋণ দেখান নি তিনি।

আনিসুর রহমান দেওয়ান: এনপিপির মেয়র প্রার্থী মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান বিএসসি পাস। পেশায় রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী। বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা নগদ, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র। নিজের বাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

এ সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী রয়েছেন শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।