‘দুর্নামে থাকা’ ছাত্রলীগকে সুনামে ফেরাতে চান কাদের

ছাত্রলীগের নামের সঙ্গে ‘দুর্নামের ধারা’ জড়িয়ে গেছে মন্তব্য করে সুনামে ফিরতে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2020, 03:00 PM
Updated : 1 Jan 2020, 03:00 PM

বুধবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের ‘ওরিয়েন্টেশন কোর্স’-এর সূচনা পূর্বে বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। দুর্নামের একটা ধারা ছাত্রলীগের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনা-এটা আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ।”

টানা ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের মতো ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ আসছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন কাজ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠার পর কয়েক মাস আগে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এরপরেও দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অপকর্মের খবর সংবাদ শিরোনাম হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, “ছাত্রলীগের যে বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই জরুরি সেটা হচ্ছে, আচরণগত। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত ভালোই উন্নয়ন হক, আচরণ খারাপ হলে ভালো উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। একটা খারাপ আচরণ ১০টা ভালো উন্নয়ন-আর্জনকে ঢেকে দিতে পারে।

“আমাদের নেত্রীর কোনো একটা অর্জন সারা জাতি প্রশংসার চোখে দেখছে, সারা বাংলায় আলোচনা হচ্ছে। ঠিক তখনই এমন একটা কাণ্ড, একটা আচরণ বাস্তবে দেখতে পাই, আমাদের নেত্রীর সোনালী অর্জন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা তখন খুব কষ্ট পাই। আমরা মর্মাহত হই, আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি, আমাদের মন বিষাদে ভরে যায়। এটা আমরা আশা করি নাই।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বুয়েটের যারা ছাত্রলীগের পরিচয়ে আবরারকে হত্যা করে এ ধরনের কর্মী আমাদের প্রয়োজন নেই। রাজশাহীতে পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে যারা ছাত্রলীগের পরিচয়ে অপমান করল এ ধরনের নেতা আমাদের প্রয়োজন নেই। গুটি কয়েকের জন্য গোটা পার্টি দুর্নামের ভাগিদার হতে পারে না। গুটি কয়েকের অপকর্মের জন্য গোটা সরকার দায়ভার নিতে পারে না।"

কাদের বলেন, “অপ্রিয় হলেও কিছু সত্যি কথা বলছি, আজকে ছাত্রনেতা ১২টার আগে ঘুম থেকে উঠে না, শুয়ে থাকে। সারা রাত জেগে জেগে কী করে, আল্লাহই ভালো জানে। ছাত্রনেতার সামনে ২০-৩০, ৫০টা হুন্ডা। আর হুন্ডায় আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট নেই। এতে আমরা লজ্জা পাই। আমি সড়কমন্ত্রী হিসেবে লজ্জা পাই।

“যখন দেখবেন ঝাঁক-ঝাঁক তরুণ হেলমেট নেই, সবাই আমাদের। ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলেই ৫০টা হুন্ডা তাদের নিয়ে যাবে এমন নেতার দরকার নেই।”

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে হলে ছাত্রনেতাদের ‘রুম দখলের’ কথাও তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, “পলিটিক্যাল রুম আছে, আশ্চর্যের ব্যাপার! কাদের-কাদের পলিটিক্যাল রুম আছে এটা খুঁজে বের করা হবে, যারা সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য করে তাদের দরকার নেই। অপরকে শিখাব, আর আমার অপরাধের বিচার হবে না? ওরিয়েন্টেশনের মূল বিষয় হচ্ছে আচরণ। ইতিহাস বেশি জানার দরকার, ভালো আচরণ দরকার।” 

ছাত্রলীগ নেতাদের বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি আজ একটা কথা বলি, এদেশে সবাই আমরা হারিয়ে যাব। দুটি অর্জন কখনো মুছে যাবে না, একটা হল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর এই জনপদে মৃত্যু হবে না। আর এই জনপদে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শেখ হাসিনার অর্জনের মৃত্যু হবে না। উত্তরাধিকার হিসেবে এই দুটি অর্জন এদেশে থেকে যাবে। এই জনপদ যতদিন থাকবে। 

“বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবার দিকে একে একে তাকাও। আমাদের আদর্শ হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার। সততার রাজনীতি, মেধার রাজনীতির প্রতীক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার।”

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য উপস্থিত ছিলেন।