ঢাকার দুই সিটিতে ৯ দলের ১৪ মেয়র প্রার্থী

বড় বড় দলগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আভাস মিলেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Dec 2019, 07:13 PM
Updated : 26 August 2021, 10:17 AM

সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক অভিযোগের এক বছর পর অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষ দুই প্রতীকই লড়াইয়ে থাকছে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পাশাপাশি বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বাম দল সিপিবি, ইসলামী দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ছাড়াও এনপিপি, পিডিপি, গণফ্রন্ট ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী রয়েছে।

দুই সিটিতে মোট নয়টি দলের ১৪ জন মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। মেয়র পদে এবার স্বতন্ত্র কোনো প্রার্থী নেই।

ইভিএমের বিরোধিতা এবং নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ভোটে আসার পর শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে থাকার কথা বলছেন বিএনপির প্রার্থী।

নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা বলছেন, সবার জন্য সমান সুযোগ রখবেন তারা। ভোট হবে নিরপেক্ষ।

উত্তরে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম

মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা গেছে। রিটার্নিং কর্মকর্তারা মুখে কড়াকড়ির কথা বলে এলেও শেষ দিনে অনেকটা ‘নির্বিকার’ ভূমিকায় ছিল।

লোক সমাগমের মধ্যে আচরণবিধি প্রতিপালন যথাযথভাবে হচ্ছে না- এমন তথ্য গণমাধ্যমে পেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যালয় পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

দলীয় প্রতীকে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের প্রথমবারের ভোটে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে ২২৬০টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত জমা দিয়েছেন ১০৩৯ জন।

বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা কত দাঁড়ায় ৯ জানুয়ারি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। প্রচার শেষে ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।

উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল

যারা মনোনয়নপত্র জমা দিলেন

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই সিটিতে ৭ জন করে ১৪ জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর সবমিলিয়ে ১ হাজার ৩০টি মনোনয়নপত্র জমা হয়েছে।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্মসচিব আবুল কাসেম জানান, মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। সব মিলিয়ে উত্তরে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪৭০ জন।

দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইসির যুগ্ম সচিব আব্দুল বাতেন জানান, মেয়র পদে ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০২ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। সবমিলিয়ে এই সিটিতে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে ৫৬৯ জনের।

প্রার্থীরা কে কী বলেছেন

উত্তরে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা আশা করছি, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। … নৌকার কোনো ব্যাক গিয়ার নাই। নৌকা এগিয়ে চলবে।”

দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, “আমি আশা করি, ঢাকাবাসীর জন্য একটি নবসূচনা করতে পারব। … আমরা সব সময় চেষ্টা করব নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। ঢাকাবাসী যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই নির্বাচনে ভোট দেয়।”

উত্তরে বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, “একটা বিতর্কিত নির্বাচন অতীতে হয়েছে। আর বিতর্ক না বাড়িয়ে ইভিএমে নির্বাচন করা যাবে না। … আমরা অত্যন্ত সিরিয়াস। নির্বাচনে যত সমস্যাই আসুক, আমরা সবগুলোকে অতিক্রম করে চেষ্টা করব, এগিয়ে যেতে। শেষ পর্যন্ত আমরা মাঠে থাকব।”

দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন

দক্ষিণের বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন বলেন, “এই নির্বাচনকে ঘিরে ঢাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ক্রান্তিকাল চলছে, কোনো গণতন্ত্র নেই, ভোটের অধিকার নেই। সবাইকে নিয়ে আমরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করব। …আস্থা অর্জনে নির্বাচন কমিশনের কাছে এটি দ্বিতীয় সুযোগ “

উত্তরে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম কামরুল ইসলাম বলেন, “মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন ন্যায্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেবে। নির্বাচন ফেয়ার হবে এটাই আমাদের আশা।”

উত্তরে সিপিবির প্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল

নির্বাচনের কোনো পরিবেশ না থাকার অভিযোগ আনলেও নির্বাচনের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন উত্তরে সিপিবির মেয়র প্রার্থী আহম্মেদ সাজেদুল হক।

তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো আস্থা তৈরি করতে পারেনি। ভোটের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তবুও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ভোটের মাঠে থাকবে, লড়াইয়ে থাকবে।”

উত্তর

দক্ষিণ

আতিকুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ)

শেখ ফজলে নূর তাপস (আওয়ামী লীগ)

তাবিথ আউয়াল (বিএনপি)

ইশরাক হোসেন (বিএনপি)

জিএম কামরুল ইসলাম (জাপা)

হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন (জাপা)

আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল (সিপিবি)

আবদুর রহমান (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)

শেখ ফজলে বারী মাসউদ (ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ)

বাহারানে সুলতান বাহার (এনপিপি)

আনিসুর রহমান দেওয়ান (এনপিপি)

আব্দুস সামাদ সুজন (গণফ্রন্ট)

শাহীন খান (পিডিপি)

আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ

(বাংলাদেশ কংগ্রেস)

মেয়র ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৩৭৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ৮৯ জন (মোট ৪৭০ জন)

মেয়র ৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর ৪৬০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর ১০২ জন (মোট ৫৬৯ জন)

সিটি ভোট নিয়ে দুই দল

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহারে বিএনপির আপত্তি নিয়েও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ তোলা বিএনপির ‘অভ্যাস’ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ তুলে ভোটের আগেই তারা ‘হেরে বসে থাকেন’।

নতুন বছরের ভোট নিয়ে তিনি বলেন, “নতুন বছরের প্রথমে হচ্ছে সিটি কর্পোরেশন ইলেকশন, আগেও বলেছি ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা একটা ভালো ইলেকশন করতে চাই। ইলেকশনে যেটাই রেজাল্ট হোক মেনে নেব।”

ভোট নিয়েবিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা আগেই বলেছি যে, এই সরকার ও এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। এরপরও গণতান্ত্রিক উপায়ে আমরা রাজনীতি করি, জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য এবং আমাদের দাবিগুলোকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাকে আমরা একটা হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছি, এই নির্বাচনকে আমরা সেইভাবে দেখছি।”

বিধি লঙ্ঘনে নির্বিকার রিটার্নিং কর্মকর্তারা

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচজনের বেশি লোক জমায়েত হলেও তা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের।

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

দুপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের সঙ্গে অনেক লোক সমাগম হতে দেখা গেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিষয়ে কড়াকড়ি থাকলেও মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে রা ছিল না নির্বাচন কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বেলা দেড়টায় দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন বলেন, “নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা দেখছেন। যেসব কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন তখন দেখা যায় হেভিওয়েট প্রার্থীদের সঙ্গে তারা এক হয়ে যান। বিষয়টি আমরা কঠোর নজরদারিতে রাখছি।”

উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম বলেন, “আচরণবিধি মেনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে প্রচার করতে দিব না,আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা বিধান, আইন শৃঙ্খলাবাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী নিয়ন্ত্রণ ও ভোটে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আরও খবর