সাঈদ খোকনের বাদ পড়ার কারণ জানালেন কাদের

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন ব্যর্থ না হলেও তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় প্রার্থী বেছে নিতে গিয়েই এবার দলের প্রার্থী পরিবর্তন হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 05:36 PM
Updated : 30 Dec 2019, 05:39 PM

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এবার দল মনোনীত প্রার্থী ফজলে নূর তাপসকে ভোট দিতেও পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণার পরদিন সোমবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে দক্ষিণে নৌকার প্রার্থী পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দেন কাদের।

অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে খোকন ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়র হওয়ার পর এবারও দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি।

ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতা ও দলের মধ্যে বিরোধিতার মুখে খোকন বাদ পড়েছেন বলে আলোচনা থাকলেও রোববার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি কাদের।

সোমবারের সমাবেশে কাদের বলেন, “আমরা দক্ষিণের আগের মেয়রকে পরিবর্তন করেছি। এর মানে এই না আগের মেয়র ব্যর্থ।”

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক সময়ের সভাপতি হানিফের ছেলের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আগের মেয়র ঢাকা সিটিতে মাঠ উদ্ধার করে ঐতিহাসিক কাজ করেছেন। এখন নতুন ঢাকায় পানি জমে, কিন্তু পুরোনো ঢাকায় পানির রিজার্ভ করা হয়েছে, জলাধার নির্মিত হয়েছে।

“আজকে সে (এখানে) নেই বলে তার বিরুদ্ধে বলতে পারি না। সাফল্যের পাশপাশি ব্যর্থতাও আছে। ব্যর্থতার জন্য আমরা তাকে মনোনয়ন দিইনি, তা নয়। আমরা অধিকতর গ্রহণযোগ্য, অধিকতর জনপ্রিয় ব্যক্তিকে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী মনোনয়ন দিয়েছি।”

মশা নিধনের ব্যর্থতার সমালোচনার বিষয়ে কাদের বলেন, “ডেঙ্গু আমাদের জন্য একটা নতুন অভিজ্ঞতা। এবার সে সময় কিছুটা সমস্যা হয়েছে…জনগণ কষ্ট পেয়েছে।

“আমরা কিন্তু এখন অভিজ্ঞতা থেকে প্রস্তুত। এখন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। ভবিষ্যতে আর এই সঙ্কট হবে না।”

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলতে এসে কেঁদে ফেলেছিলেন সাঈদ খোকন; বলেন, তার কঠিন সময় যাচ্ছে।

পুরান ঢাকার খোকনকে বদলে দলের প্রার্থী করা তাপসের পক্ষে ভোট চেয়ে কাদের বলেন, “আপনারা দুঃখ পাবেন না। মেয়র হানিফের স্মৃতি বিজড়িত এই ঢাকাবাসীর সুখ-দুঃখে জননেত্রী শেখ হাসিনা আছেন।

“আমরা যাকে মনোনয়ন দিয়েছি, শেখ ফজলে নূর তাপস, ক্লিন ইমেজের লোক। পুরান ঢাকার লোকেরা সরল মানুষ। সরল মানুষেরা ভালো মানুষকে পছন্দ করে। আমি বিশ্বাস করি, ঢাকাবাসী আগামী নির্বাচনে সঠিক রায় দেবে।”

সাঈদ খোকন ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘অভিভাবক’ হিসেবে দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন তিনি।

নির্বাচনী বিধির কারণে তাপসের পক্ষে প্রচারে নামা মেয়র খোকনের পক্ষে সম্ভবপর না হলেও সহযোগিতার বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মেয়র ও কাউন্সিলর পদে যারা দলের মনোনয়ন পাননি, ভবিষ্যতে তাদের মূল্যায়নের আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “সকলকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। ১৭২ কাউন্সিলর পদের বিপক্ষে মনোনয়ন চেয়েছে ১৩০৯ জন। যারা মনোনয়ন পাননি, আপনাদের কথা আমরা মনে রাখব। ভবিষ্যতে মূল্যায়ন করব।

“নগরের নেতাদের বলব, যারা স্যাক্রিফাইস করছে, তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কমিটিতে স্থান দেবেন। আওয়ামী লীগের কোনো ত্যাগী নেতাকর্মী যাতে বঞ্চিত না হয়। কারও মনে কষ্ট দেবেন না।”

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বার্ষিকীতে ‘গণতন্ত্রর বিজয় দিবস’ পালনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কাদের।

দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফির সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, মো. আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।