গণতন্ত্র হরণকারীদের মুখে এখন গণতন্ত্রের বুলি: কাদের

দেশে এখন গণতন্ত্র ‘নেই’ বলে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে তাদের নেতা জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র হরণের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 03:00 PM
Updated : 30 Dec 2019, 03:00 PM

‘যারা গণতন্ত্র হত্যার জনক, তাদের মুখে গণতন্ত্রের বুলি শোভা যায় না,” বলেছেন তিনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর পূর্তিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালনে সোমবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে একথা বলেন কাদের।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

ওই নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে দিনটি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করছে বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্ররা। তারা বলছে, দেশে এখন গণতন্ত্র নেই।

বিএনপি পরাজয়ের দুঃখ আর হতাশা থেকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

“কারা এই দিবসকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস বলে? এই ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে যারা পরাজিত হয়েছে ,তাদের জন্য আজকে কালো দিন। আর যারা বিজয়ী হয়েছে তাদের জন্য শুভ দিন। আন্দোলনে যারা পরাজিত, নির্বাচনেও তারা পরাজিত হয়েছে।

“তাদের জন্য এই দিন কালো দিন, দুঃখের দিন, হতাশার দিন। বাংলাদেশের জনগণের জন্য গণতন্ত্র বিকাশধারার আনন্দময় শুভ দিন এই ৩০ ডিসেম্বর।”

বিএনপি নেতাদের ইতিহাস স্মরণ করিয়ে কাদের বলেন, “আজকে যারা গণতন্ত্রর জন্য মায়াকান্না করে তাদেরকে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধু হত্যা উত্তর বাংলাদেশে কীভাবে গণতন্ত্রকে বুটের তলায় পিষ্ট করা হয়েছিল? নির্বাচনের কফিনে গণতন্ত্রের লাশ আমরা দেখেছি বারবার।

“বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের বুলি কি শোভা পায়? পায় না। গণতন্ত্র হত্যার জনক আপনারা। আপনাদের মুখে এই কথা শোভা পায় না।”

কাদের বলেন, “ভুলে গেছেন? মাগুরার উপনির্বাচনে কীভাবে গণতন্ত্রকে পদদলিত করেছে। নির্বাচনের কফিনে গণতন্ত্রের লাশ বাংলার মানুষ দেখেছে। ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন দেখেছে জনগণ।

“জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে হ্যাঁ-না ভোট করেছেন। মনে আছে? কয়েক কেন্দ্রে একশ দশ ভাগ ভোট পড়েছিল। জিয়াউর রহমান যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে, তখন এই ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জে জেনারেল ওসমানী পেয়েছিল শূন্য ভোট। এটাই কি গণতন্ত্র? এটাই কি নির্বাচন?”

শেখ হাসিনা এদেশে ‘অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে উদ্ধার করেছেন’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, “গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে আমাদের আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। গণতন্ত্র ইমপ্রুভ করছে। আরও ইমপ্রুভ করবে। আমরা এখন ট্র্যাকে আছি।”

আন্দোলনের নামে বিএনপির যে কোনো ধরনের নৈরাজ্যের জবাব দিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান দলটির সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, “আন্দোলন করুন। কিন্তু হিংসা-সহিংসতার পথে গেলে সমুচিত জবাব পেয়ে যাবেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে পাচঁ হাজার লোক জড়ো হয়ে যাবে। সেই শক্তি আওয়ামী লীগের রয়েছে।

“এই সরকারের শিকড় বাংলাদেশের মাটির গভীরে। কাজেই কচু পাতার উপর শিশির বিন্দুর মতো একটা টোকা দিলেই সরকারের পতন হবে, এই দিবাস্বপ্ন যারা দেখছেন, তাদের রঙিন খোয়াব অচিরেই কর্পুরের মতো উবে যাবে।”

সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, “কালো দিবস ঘোষণা করে লাভ নেই। এদেশের জনগণ ভোট দিয়ে তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছে। সুতরাং সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।"

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, "রাজপথে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন করে লাভ হবে না। রাজপথের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে আদালতের মাধ্যমে। আন্দোলনের নামে রাজপথে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে দাতভাঁঙ্গা জবাব দেওয়া হবে।"

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “৩০ ডিসেম্বর বিএনপির মনের জ্বালা, অন্তর্জ্বালা দিবস। বিএনপির যে কোনো ধরনের অপতৎপরতা রুখে দিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত।"

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফির সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। উপস্থিত ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন।