নীরবতা ভেঙে সাঈদ খোকন বললেন ‘আলহামদুলিল্লাহ’

এবারের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে নিশ্চুপ ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন; একদিন পর প্রকাশ্যে এসে তিনি বললেন, ‘অভিভাবক’ হিসেবে শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তে তিনি খুশি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2019, 11:24 AM
Updated : 30 Dec 2019, 12:08 PM

“আমি আগে বলেছিলাম, আমার নেত্রী আমার জন্য যেটা ভালো মনে করবেন, তিনি সেটা করবেন। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা যেটা ভালো মনে করেছেন, তিনি আমার জন্য সেটা করেছেন। আমি খুশি মনে বলতে চাই, আলহামদুলিল্লাহ” বলেছেন তিনি।

ঢাকা সিটি করপোরেশ দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন।

পুরান ঢাকার মাজেদ সর্দারের নাতি ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন এবার দলীয় প্রতীকের এই মেয়র নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন।

তবে ডেঙ্গু মোকাবেলায় ব্যর্থতা এবং দলের মধ্যে সমালোচনায় থাকা সাঈদ খোকন এবার যে দলের সায় পাচ্ছেন না, তা আঁচ করা যাচ্ছিল তার কথায়ই। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার সময় তিনি কান্নাভেজা কণ্ঠে বলেছিলেন, তার এখন ‘কঠিন’ সময়।

রোববার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা উত্তরে প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম থাকলেও দক্ষিণে পরিবর্তন হয়েছে। সাঈদ খোকনের বদলে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা ফজলে নূর তাপস।

দলের ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর চুপসে গিয়েছিলেন মেয়র খোকন, সাংবাদিকদের কোনো প্রতিক্রিয়াও দিতে চাননি।

একদিন বাদে সোমবার ঢাকা দক্ষিণের নগর ভবনে সাংবাদিকদের ডেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার উপর পূর্ণ আস্থা রাখার কথা জানিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, “আমি বলেছিলাম রাজনীতিতে আমি আমার বাবার হাত ধরে এসেছি। রাজনীতিতে আমার বাবাকে আমি হারিয়েছে। আমার বাবার অনুপস্থিতিতে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমার অভিভাবক।

“আমি আবারও বলছি, আমার নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, আমি খুশি মনে, হাসি মনে মেনে নিয়েছি। তিনি যেটা আমার জন্য ন্যয্য মনে করেছেন, ভালো মনে করেছেন তিনি সেটা করেছেন।”

বঙ্গবন্ধুর সহকারী মোহাম্মদ হানিফ দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ঢাকার মেয়র থাকাকালে ১৯৯৬ সালে বিএনপিকে ক্ষমতা থেকে হটানোর আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় হানিফও আহত হন। গ্রেনেডের ক্ষত নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে মারা যান তিনি।

হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও জরুরি অবস্থার সময় তিনি ফেরদৌস আহমেদ কোরেশীর দল পিডিপিকে যোগ দিয়ে দলে সমালোচনায় পড়েছিলেন।

পরে আবার তিনি আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন। এরপর ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে শেখ হাসিনার সমর্থন নিয়ে মেয়রও হন।

এবার কেন দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হলেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে সাঈদ খোকন আবারও বলেন, “বিন্দুমাত্র সে ব্যাপারটার দিকে আমি লক্ষ করছি না। আমার নেত্রী আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন, উনি সেটা করেছেন। আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ।”

সাঈদ খোকনকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। মেয়র প্রার্থী ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “যারা মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন, তারা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। গ্রহণযোগ্যতার দিকটি বিবেচনায় নিয়েছেন। সবার সম্মতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই।”

গত ২৬ ডিসেম্বর মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম তুলতে এসে কেঁদে ফেলেন সাঈদ খোকন।

এবারের প্রার্থী ফজলে নূর তাপস তার নির্বাচন বৈতরণী পারে বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকনের সমর্থন চেয়েছেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে খোকন বলেন, “এখানে দ্বিচারিকভাব একেবারেই নেই। কারণ আমার যিনি অভিভাবক, তার দিক- নির্দেশনা অবশ্যই আমার প্রয়োজন রয়েছে। আমার ঢাকাবাসী, আমার ঢাকাবাসী মুরুব্বিয়ান, যাদের হাত ধরে আজ আমি এখানে এসেছি তাদের পরামর্শের আমার প্রয়োজন আছে।

“আর আপনারা এও জানেন যে, আমি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করছি। সেখানে আইনগত অনেক বিষয় রয়েছে। আমরা আলাপ-আলোচনা করে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাব।”

মেয়র হিসেবে সাঈদ খোকন আগামী ১৬ মে পর্যন্ত দায়িত্বে রয়েছেন। মন্ত্রীর মর্যাদায় মেয়রের দায়িত্বে থাকা সাঈদ খোকন নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী প্রচারে নামতে পারবেন না।

মেয়র হিসেবে নিজের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়েও কথা বলেন খোকন।

“আমি বলি যে, কতগুলো মৌলিক সমস্যার সমাধান আমি করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমি অনেকটাই সফল হয়েছি। আমি মানুষ, আমি ফেরেশতা না। আমার ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। আমি দশটা কাজ করি দশটাই যে আমি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি, এমন কিন্তু না। আমার ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে।”

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কী কী প্রকল্প চলমান বা অসমাপ্ত থাকছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “জল-সবুজের ঢাকা যে প্রকল্পটি আছে, সেটির ৮০-৯০ শতাংশ হয়ে গেছে, আশা করি আগামী মাস তিনেকের মধ্যে জল-সবুজের ঢাকা প্রকল্প শেষ করতে পারব।

“এছাড়া আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে, এগুলো এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে আসবে। আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে, যেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।”

চলমান প্রকল্পগুলো পরবর্তী মেয়র শেষ করবেন বলে আশা রাখছেন সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, “জনগণের ভোটে নবনির্বাচিত যে মেয়র আসবেন, ইনশাল্লাহ বাকি কাজগুলো তিনি সমাপ্ত করবেন। একজনের পক্ষে তো সমস্ত কিছু হয় না,কিছু প্রক্রিয়াধীন থাকে। আমি শুরু করে দিয়ে গেলাম, কিছুটা কাজ আমি করে দিয়ে গেলাম, বাকি কাজ যিনি আসবেন তিনিই করবেন। এটাই প্রক্রিয়া, এভাবেই আমাদের শহর এগিয়ে যাবে, এভাবে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’

তবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছেন বলে দাবি করেন বিদায়ী মেয়র সাঈদ খোকন।

“আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছি। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে। যিনি পরবর্তী নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এ শহরের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, তিনি এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

পরবর্তী মেয়রকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।