জাপায় সাত নেতার পদোন্নতি

নবম জাতীয় সম্মেলনের পরদিই জাতীয় পার্টিতে পদোন্নতি পেলেন সাত জ্যেষ্ঠ নেতা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2019, 01:19 PM
Updated : 29 Dec 2019, 03:33 PM

তাদের মধ্যে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের পদ পেয়েছেন। এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মো. মুজিবুল হক চুন্নু ও সালমা ইসলাম হয়েছেন কো-চেয়ারম্যান।

রোববার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জি এম কাদের তাদের নাম ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “দলের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে আমি একজনকে পার্টির সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও ছয়জনকে দলের কো চেয়ারম্যান ঘোষণা করছি।”

জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন নেতা যে সিনিয়র কো চেয়ারম্যান ও কো চেয়ারম্যান পদ পাচ্ছেন, তা শনিবার দলের নবম সম্মেলন অনুষ্ঠানেই জানিয়েছিলেন পার্টির নির্বাচন কমিশনের প্রধান শেখ সিরাজুল ইসলাম।

দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পরে শীর্ষ নেতার পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব-টানাপড়েনের মধ্যে রওশন এরশাদ শিবিরে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও দলের গত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এরশাদের ভাই জি এম কাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান থেকে পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে সে সময় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ তার বিরোধিতা করেছিলেন। চেয়ারম্যানের পদে জি এম কাদেরকে অবৈধ হিসেবে ঘোষনা দিয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগও এনেছিলেন তিনি।

ওই টানাপড়েনের পর আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে দলের কোনো সভায় দেখা যাচ্ছিল না। নবম কাউন্সিলের আগে রওশন এরশাদের হস্তক্ষেপে সে বরফ গলে। গত শুক্রবার কাউন্সিলের আগে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। শনিবার নবম কাউন্সিলের মঞ্চে তিনি বসেছিলেন জি এম কাদেরের ঠিক ডান পাশের আসনে।

এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার এর আগে দুই দফায় জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘মনোনয়ন বাণিজ্যের’ অভিযোগে তাকে মহাসচিবের পদ থেকে ইস্তফা দেয় জাতীয় পার্টি।

এর পর থেকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সভা, মিটিংয়ে তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। এরশাদের মৃত্যুর পর তিনিও দলের কোনো সভাতেও আসেনি। এবার মহাসচিব পদে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর পাশাপাশি তার নামটিও শোনা যাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিবর্তন আসেনি।

গত কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য বাবলু এর আগে এক দফায় মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। সালমা ইসলাম ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টি ও জাতীয় মহিলা পার্টির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আর সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, মো. মুজিবুল হক চুন্নু গত কমিটিতে ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জানিয়েছেন, গত কমিটিতে প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন ৪১ জন। জ্যেষ্ঠ নেতারা প্রেসিডিয়ামে সদস্য সংখ্যা কমিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছেন।

দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের কিছু দিনের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগ্ম চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে জাপা।

ভাঙ্গনের মুখ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টিতে এখন ‘স্বতঃস্ফূর্ত নবজাগরণ’ সৃষ্টি হয়েছে বলে রোববারের অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন জি এম কাদের।

রোববার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা আমি মনে করি, জাতীয় পার্টিতে যদি কিছু ভাঙ্গন… কিছু মানুষ এদিক ওদিক করতে চায়… সেটি সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা অনাস্থা ভাব সৃষ্টি করে।

“মানুষে মনে করে, জাতীয় পার্টি বোধহয় ভালোভাবে এগোতে পারছে না। কাজেই আমাদের খুব সাবধান হতে হবে। যে কোনো মূল্যে আমরা জাতীয় পার্টির ঐক্য বজায় রাখব, পার্টির শৃঙ্খলা বজায় রাখব।”

দলে ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে, পার্টির প্রশ্নে, দেশের স্বার্থে আমরা এক থাকব। ব্যক্তিগত প্রতিযোগিতার ভাব থাকতে পারে, একজন আরেকজনের সঙ্গে রেষারেষির ভাব থাকতে পারে।

“প্রতিযোগিতা করে কেউ এগিয়ে যাবে। কেউ পিছিয়ে পড়বে। সেটাকে স্বাভাবিক ধরে নিয়ে প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে জাতীয় পার্টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্বাস করি, আমরা সফল করব।”