ঢাকায় আ. লীগের মেয়র প্রার্থী আতিক ও তাপস

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরের মেয়র পদে আতিকুল ইসলামের ওপরই আস্থা রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ; দক্ষিণে মো. সাঈদ খোকনের বদলে নৌকার বৈঠা তুলে দেওয়া হয়েছে ফজলে নূর তাপসের হাতে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2019, 06:07 AM
Updated : 29 Dec 2019, 06:07 AM

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রোববার বেলা ১২টায় ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে মনোনীতদের নাম ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “জনগণের কাছে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। কোন প্রার্থী নির্বাচনে জেতার উপযোগী, সেটি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে শনিবার সন্ধ্যায় গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভা হয়। পরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সব বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত জানাতে তাদের একটু সময় লাগছে।

তবে উত্তরে মেয়র আতিকের সঙ্গে দক্ষিণে  সাংসদ তাপস যে চমক হয়ে আসছেন তা রাতেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় ফেইসবুকে আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিনন্দন বার্তায়। 

আর গেল বছর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতায় সমালোচিত দক্ষিণের মেয়র মো. সাঈদ খোকন যে এবার আর আওয়ামী লীগের টিকেট পাচ্ছেন না, সে আভাস গত ২৬ ডিসেম্বরই পাওয়া গিয়েছিল।

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে খোকন সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলেন, রাজনৈতিক জীবনে তিনি ‘কঠিন সময়’ পার করছেন।

আতিকুল ইসলাম ও ফজলে নূর তাপস

তার জায়গায় এবার মনোনয়ন পাওয়া ব্যারিস্টার তাপস বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে। তিন মেয়াদ ধরে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসা তাপস বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদেরও নেতৃত্বে আছেন। তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস গত নভেম্বরে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।

আর আনিসুল হকের মৃত্যুর পর এ বছর ফেব্রুয়ারিতে উপ নির্বাচনে জিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে আসেন মো. আতিকুল ইসলাম। তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক এই সভাপতি  আতিক এর আগে ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।

নিয়ম অনুযায়ী, এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে আতিককে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদ থেকে এবং তাপসকে সংসদ সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দিতে হবে।  সে অনুযায়ী রোববারই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন তাপস।

আওয়ামী লীগের মত বিএনপিও ঢাকা উত্তরে তাদের পুরনো প্রার্থীর হাতে ভোটের টিকেট তুলে দিয়েছে। শনিবার এই সিটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালের নাম ঘোষণা করা হয়, যিনি ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আনিসুল হকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে এ সিটিতে উপ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি।

আর দক্ষিণের মেয়র পদে এবার বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, যিনি এবারই প্রথম কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন। ঢাকা দুই ভাগ হওয়ার পর ২০১৫ সালে প্রথম সিটি নির্বাচনে দক্ষিণে মেয়র পদে লড়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস।

রোববার সকালে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার আগে সমর্থকদের নিয়ে ধানমণ্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে উপস্থিত হন আতিক ও তাপস। সভাপতিমণ্ডলীর কক্ষে গিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বসেন তারা। মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত হওয়ায় বাইরে তখন চলছে কর্মী-সমর্থকদের তুমুল স্লোগান।

মেয়র পদে মনোনীতদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যারা মনোনয়ন বোর্ডে ছিলেন, তারা প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি দেখেছেন। গ্রহণযোগ্যতার দিকটি বিবেচনায় নিয়েছেন। সবার সম্মতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন দিয়েছেন। এটা নিয়ে বাড়তি কিছু বলার নেই।”

দুই সিটির মেয়র পদের পাশাপাশি ঢাকা উত্তরে ৫৪ এবং দক্ষিণে ৭৫ ওয়ার্ড সাধারণ কাউন্সিলর পদে সমর্থিতদের নামও এ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেন ওবায়দুল কাদের। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থিতদের নাম সোমবার ঘোষণা করা হবে বলে তিনি জানান।

দুই সিটিতে ২১১০ জন, মেয়র পদে ১১ জনের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও কাউন্সিলর পদে তা হবে না।  এ কারণে কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে মনোনীত না বলে সমর্থিত বলা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এবারই প্রথম রাজধানীর অর্ধ কোটি ভোটার মেয়র ও কাউন্সিলর বাছাইয়ে ইভিএমে ভোট দেবেন।

তার আগে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমার সময় শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর।  সে হিসেবে প্রার্থীরা আর মাত্র দুই দিন সময় পাচ্ছেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার।

ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে ১১ জন এবং কাউন্সিলর পদ ২১১০ জন এ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।