রাজাকারের তালিকা ‘সংশোধনের নির্দেশ’ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা যাচাই-বাছাই ও সংশোধনের পর নতুন করে প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2019, 08:40 AM
Updated : 18 Dec 2019, 01:08 PM

বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, “এ বিষয়টা আমাদের নজরে এসেছে এবং এ বিষয়টি আমাদের নেত্রী এরইমধ্যে জানেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

“মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ভুল সংশোধনের আশ্বাস দেওয়অ হয়েছে। আমাদের নেত্রীও তাদের যাচাই বাছাই করে… এখানে যেন ভুলভ্রান্তি না থাকে, ভুলভ্রান্তি থাকলে সংশোধন করে তালিকা প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছেন।”

বিজয় দিবসের আগের দিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করে।

মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সরকারের কাছে বিভিন্ন মহল থেকে স্বাধীনতা বিরোধীদের তালিকা প্রকাশের দাবি করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে।

কিন্তু প্রথম দফায় এই তালিকা প্রকাশের পর বরিশাল, বরগুনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঝালকাঠি জেলার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও একাত্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের নাম দেখে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ কর্মসূচিও দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা এসব ভুল দ্রুত সংশোধন করে নতুন তালিকা প্রকাশের দাবি জানান। আর এই ভুলের পেছনে দায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানায় ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে আসা এই সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, দালাল আইনের আওয়তায় তালিকাভুক্ত রাজাকারদের গেজেট অনুসরণ করা হলে এই বিভ্রান্তি তৈরি হত না। রাজাকারের এই তালিকা প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করা ছিল জরুরি।

এই প্রেক্ষাপটে ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, একাত্তরে প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না, এমন কারো নাম সরকারের প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় এসে থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে।

তবে ভুলের দায় অস্বীকার করে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেছেন, “এই তালিকাটি ১৯৭১ সালে করা। আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সংগ্রহ করেছি।”

অন্যদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা সরবরাহ করার সময় যেসব ব্যক্তির নাম-মামলা প্রত্যাহার হয়েছিল, সে বিষয়ে ‘নোট’ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে ওই সব ‘নোট’ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ওই নোটগুলো বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী তালিকা আবার প্রকাশ করবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলছেন, মন্ত্রণালয় যেহেতু বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে, যাচাই বাছাইয়ের অঙ্গীকার করেছে, সেহেতু এ নিয়ে আর কোনো ‘প্রশ্ন থাকার কথা নয়’।

সম্মেলনের প্রস্তুতি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কাদের।

সম্মেলন সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা যতে একে অপরের ‘চরিত্র হননে’ লিপ্ত না হন, সেই নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।  

“আওয়ামী লীগ একটা পরিবার, এই পরিবারে আমরা অনেকেই আছি, নেতা আছি, কর্মী আছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই গোটা পরিবার ঐক্যবদ্ধ। সেটা আমাদের কর্মকাণ্ডে আচার আচরণে, আমাদের চলাফেরায় প্রমাণ করতে হবে।”

কাদের বলেন, “নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করব, কেউ কারও অতি উৎসাহী ভক্ত হবেন না। আপনারা অতি উৎসাহী ভক্ত সেজে বিলবোর্ডে নানা রকম ছবি প্রদর্শন করেন। নিজেকে প্রচার করার জন্য অন্যের ছবি ব্যবহার করেন, এতে কিন্তু শৃঙ্খলা নষ্ট হয়।”

আসন্ন সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব ঠিক করার বিষয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন, সে কথাও নেতাকর্মীদের মনে করিয়ে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক।

“কার দায়িত্ব কোথায় হবে এটা ঠিক করার জন্য, নির্ধারণ করার জন্য একজন আছেন। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউই অপরিহার্য নয়। যে যেখানে আছেন, যে কেউ পরিবর্তন হতে পারেন। এটা নেত্রী ঠিক করবেন কাকে কোথায় রাখবেন। নেত্রীর প্রতি আস্থা আমাদের সকলের আছে।”

অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, প্রতিযোগিতা থাকতে পারে। এটা আমাদের অভ্যান্তরিণ গণতন্ত্রের চর্চা। প্রত্যেকেরই আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারে, কিন্তু এটা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পরিণত না হয়। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।