রাজাকারের তালিকা এত দেরিতে কেন, প্রশ্ন কামাল হোসেনের

রাজাকারদের তালিকা তৈরির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানালেও দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় সমালোচনা করেছেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Dec 2019, 06:38 AM
Updated : 16 Dec 2019, 07:31 AM

সোমবার বিজয় দিবসের সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “৫০ বছর পরে কেন? এ সরকার তো ১০ বছর ধরে আছে। এতদিন কী হল? মানে এ ১০ বছরে কেন এটা সম্ভব হল না?”

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘ নয় মাস তাদের স্থানীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে, দুই লাখ মা-বোনের সন্ত্রমহানি ঘটায়।

সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সরকার একাত্তরের সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের প্রথম তালিকা প্রকাশ করা হয় বুধবার।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে, তাদের দোষী হিসেবে চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে এত দেরী হলো কেন?”

স্বাধীনতাকে বাঙালির ‘সবচেয়ে বড় অর্জন’ হিসেবে বর্ণনা করে গণফোরাম সভাপতি বলেন, এই স্বাধীনতা এসেছিল জনগণের ‘ঐক্যের শক্তিতে’। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে এখনও সেই ঐক্য প্রয়োজন।

“স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমাদের কী কী লক্ষ্য, আমরা কী ধরনের সমাজ চাই, সমাজ পরিবর্তন চাই, ব্যবধান আছে ধনী এবং গরীবের মধ্যে, তা থেকে যদি আমরা মুক্ত করতে চাই সমাজকে, ক্ষমতা চাই, সমান সুযোগ সবাইকে নিশ্চিত করা উচিত আত্মবিকাশের জন্য… বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সংবিধানেই এই চিত্রটি তুলে ধরা আছে। এখন এটা সবাই মিলে করতে হবে।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারবে- এটা অনেকেই তখন বিশ্বাস করতে পারেনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, “একাত্তরে সারা পৃথিবী বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারবে না, আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলাম। এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের অনেক রকম সমস্যা আছে, এগুলো মোকাবেলা করার জন্য সুষ্ঠু রাজনীতির প্রয়োজন আছে। জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্যের প্রয়োজন আছে।”

সেজন্য বিভক্তির রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “আমরা যদি বিভক্ত হয়ে থাকি, তাহলে যারা শোষণ করতে চায়, দুর্নীতি করতে চায়, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। এগুলোকে মোকাবেলা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে।

“একাত্তরে অসম্ভবকে আমরা সম্ভব করেছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত হলো ঐক্য, জনগণের ঐক্য। আর বিভক্তির রাজনীতি যদি হয়, তখন কিন্তু মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়, আমরা একে অন্যের পেছনে লেগে থাকি, কিন্তু মূল যে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সেগুলো মোকাবেলা করি না। আমাদের এটা আবেদন, ঐক্য, জনগণের ঐক্য।”

গণতন্ত্রে বাংলাদেশ কতদূর এগোল- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা বলেন, সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র এক নম্বর মূলনীতি। সেটা কার্যকর করতে হলে দরকার অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন, সেটা ‘হচ্ছে না’।

“দেশের রাজনীতিতে কালো টাকার যে অভিশাপ ঢোকানো হয়েছে, এ কালো টাকা সুস্থ রাজনীতিকে অসুস্থ রাজনীতিতে পরিণত করেছে। টাকা দিয়ে আমরা ভোট কিনতেছি, ভোটবাক্স ভর্তি করছি।”