আ. লীগই এখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছে: সেলিম

আওয়ামী লীগ এখন মুক্তিযুদ্ধে শুধু নিজেদের ভূমিকার কথা প্রচার করে ‘ইতিহাস বিকৃত করছে’ বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 06:50 PM
Updated : 15 Dec 2019, 06:55 PM

একাত্তরে তোফায়েল আহমেদ, হাসানুল হক ইনুসহ বিএলএফের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের ভূমিকাকে ‘পলিটিকাল কমিসারের’ সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেছেন, তারা ‘অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি’, ছিলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের চেষ্টায়।

আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই সবাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল বলেও উল্লেখ করেছেন এই বামপন্থি নেতা।

রোববার বিকালে পুরানা পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন একাত্তরে ছাত্র ইউনিয়ন-ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমরা ইতিহাস বিকৃতির প্রমাণ পাই ’৭৫ এর পরে, জিয়াউর রহমানের আমলে সেখান থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে। দেখেছি কীভাবে মৌলিক কতগুলো ঘটনাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

“এখন আওয়ামী লীগ বাদে অন্য কারও ভূমিকা নাই, এ কথা বলে ইতিহাসকে বিকৃত করা হচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টি সব ধরনের বিকৃতির বিরুদ্ধে।”

সেলিম বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে, বিকৃত শুধু ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার ভেতর দিয়ে হয়, তা নয়। ঘটনা সম্পর্কে নীরব থাকার ভেতর দিয়েও, অনেক ঘটনাকে অনুল্লেখ করার ভেতর দিয়েও ইতিহাসের বিকৃত সাধন করা হয়েছে। তার প্রচেষ্টা বা অপচেষ্টা আমরা কিন্তু চতুর্দিকে এখনও দেখতে পাই।”

মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনী বা বিএলএফ নিয়ে আলোচনা সভায় বিস্তর অভিযোগ তোলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা সেলিম।

তিনি বলেন, “এ যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে বামপন্থিরা মূল ভূমিকায় চলে আসত। কারণ জনগণের সঙ্গে মিলে থাকছে তারা। ওর জন্য বুর্জোয়ারাও চালাক। তারা… বিএলএফ (মুজিব বাহিনী) ওখানে যে মোটিভেশন দেওয়া হত, তাদের বলা হত, দীর্ঘমেয়াদি হলে কমিউনিস্টদের হাতে চলে যাবে।

“ওদের মোটিভেশন দেওয়া হত, তোমাদের কাজ হল গুলি খরচ করব না। এটা কমিউনিস্টদের হাতে চলে যাওয়ার উপক্রম হলে আমরা সিগন্যাল দিব। তখন তোমাদের শত্রু, পার্ক আমি হবে না, তোমাদের শত্রু হবে কমিউনিস্ট।”

ওই সময় ভারতবর্ষে নকশাল আন্দোলন চলায় তারাও মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ হোক, তা চায় না বলে মন্তব্য করেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

তিনি বলেন, “বিএলএফ কে? মুজিব বাহিনী বলতে যেটাকে বোঝায়, অনেক বড় বড় নেতার নাম শুনবেন, নামগুলো আমি উচ্চারণ করতে চাই না। তোফায়েল আহমেদ ধ্যাত বলি আর কি, শেখ মনি, সিরাজুল আলম খান, হাসানুল হক ইনু- সবাই ছিল পলিটিক্যাল কমিসার।

“অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ কেউ করেনি। বলুক না একটা কোন জায়গায় অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছে? কারণ তাদের মিশন ছিল অন্য ছিল অন্য জায়গায়। হোল বিএলএফটাই এই। আর আমাদের বাহিনী অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছে।

“কেবল মাত্র আমাদের বিশেষ গেরিলা বাহিনীতে নয়, এই প্রগতিশীল বামপন্থি কর্মীরা-তরুণরা মুক্তিবাহিনী- সেক্টর কমান্ডারার্সদের অধীনে, নেভাল কমান্ডোদের ভেতরে, নবগঠিত এয়ার ফোর্সের ভেতরে, নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম ট্রেইন রেজিমেন্টের ভেতরে সবচেয়ে সাহসের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। ঢাকার যে বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুন তার প্রায় সবাই ছিল বামপন্থি চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ।”

মুক্তিযুদ্ধের সব সেক্টর কমান্ডাররা যুদ্ধক্ষেত্রে ছাত্রলীগ নয়, ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী খুঁজতেন বলে দাবি করেন তিনি।

“আর আওয়ামী লীগের এমপিরা বলতেন, খবরদার এখানে কোনো বামপন্থিদের নেওয়া যাবে না।“

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “আমাদের দেশের অভ্যন্তরে ডাইনামিকসটাকে যদি ধরি, তারপর যখন জনগণ অস্ত্র নিয়ে শুরু করে দিল তখন এটা দীর্ঘমেয়াদি হতে পারত। কিন্তু এখানে আন্তর্জাতিক ঘটনা জড়িত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বা সামগ্রিকভাবে বলছি, সেটা সাসটেইন করা বা অ্যালাও করার জায়গায় তারা ছিল না।

“যখন ফাইনালি বোঝা গেল, এটা দীর্ঘমেয়াদি হচ্ছে না। এটা শর্ট টাইমে হবে। সমস্ত গেরিলাবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেওয়া হল, এখন কনভেনশনাল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে হবে।”

মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন ‘ধুলায় লুটিয়ে দেওয়া হয়েছে’ অভিযোগ করে সেলিম বলেন, “বুর্জোয়াদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় নিরাপদ নয়। পাকিস্তানি অর্থনেতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেটাকে পরিত্যাগ করে বহুল পরিমাণে পাকিস্তানি ধারায় আমাদের দেশ পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ওই বুর্জোয়ারা।”

তিনি বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ দীর্ঘ দিনের, বছর, দশকজুড়ে জনগণের যে সংগ্রাম সে সংগ্রামের শীর্ষ অধ্যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন ছিল না, এটা জাতীয় মুক্তির আন্দোলন ছিল।”

সভায় সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, দলের নেতা আহসান হাবিব লাবলু, শ্রমিক নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা কামরুল আহসান খান, ক্ষেতমজুর সমিতির সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াদ আল মালুম ব্ক্তব্য রাখেন।