ভারতের নাগরিকত্ব আইনে বাংলাদেশের জন্য ‘হুমকি’ দেখছেন ফখরুল

ভারতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএবি) বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য ‘হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2019, 07:11 AM
Updated : 14 Dec 2019, 01:55 PM

নাগরিকত্ব আইনকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, “উদারপন্থি গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে বিষয়গুলো ছিল, সে বিষয়গুলো এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে ধ্বংস করে দিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি  প্রতিষ্ঠা করবার জন্য এটা হয়েছে।”

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নে এ বিষয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, “প্রথম থেকেই বলে আসছি এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা এটাকে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করছি।”

নানা বিতর্কের মধ্যে গত অগাস্টে ভারতের আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হলে দেখা যায়, রাজ্যটির বাসিন্দা ১৯ লাখ মানুষের নাম সেখানে স্থান পায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে যারা আবাস গেঁড়েছেন, তারাই তালিকায় রয়েছেন।

নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনা রয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বললে তিনি এ বিষয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলে আস্বস্ত করেন।

এদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে ইংগিত দেন, আসামের ওই তালিকা বাতি করা হবে। পুরো ভারতের সঙ্গে নতুন করে নাগরিকপঞ্জি হবে আসামে।

এরপর দেশটির ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং লোকসভা ও রাজ্যসভায় পাস হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে তা আইনে পরিণত হয়।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে এই আইনে।

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সংশোধনে ওই সময় কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। তবে তাতে বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি।

ওই আইনের প্রতিবাদে গত দুদিন ধরে সহিংস বিক্ষোভ চলছে ভারতের বিভিন্ন অংশে। বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুইজন। শুক্রবার সংঘাত ছড়িয়েছে রাজধানী দিল্লিতেও।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার বলছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দেওয়াই আইন সংশোধনের উদ্দেশ্য। ওই তিন দেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ নয়, ফলে তাদের ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হতে হয় না।

তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর ওই আইনকে মুসলমানদের জন্য ‘বৈষম্যমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে যে অবস্থার তৈরি হয়েছে এই অবস্থাটা বাংলাদেশে শুধু নয়, সমগ্র উপমহাদেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে, সংঘাতের সৃষ্টি করবে।”

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যাওয়ার সময় এদিন বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড দেখা যায়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে এসে মির্জা ফখরুল তার দলের চেয়ারপারসনের বন্দিদশার জন্য সরকারকে দায়ী করেন। 

তিনি বলেন, “আজকে আমরা একটা গণতন্ত্রবিহীন, গণতন্ত্রের অধিকারবিহীন একটি অবস্থার মধ্যে আছি। আজকে আমাদের নেত্রী কারাগারে, মিথ্যা মামলায় যখন আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গণতান্ত্রিক দলগুলোকে স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

বিএনপিকে ‘নির্মূল’ করার চেষ্টা হচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “এই সময়ে আজকে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন যেটা, তা হল সমস্ত জাতির ঐক্য। আজকে সমস্ত জতিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যে সংগ্রাম করতে হবে, লড়াই করতে হবে।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পথ অনুসরণ করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথাও বলেন স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর জোটসঙ্গী বিএনপির এই শীর্ষ নেতা। 

ফখরুল বলেন, “আজকে এই দিনে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পথ অনুসরণ করে দেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার জন্যে, দেশের স্বার্বভৌমত্বকে রক্ষা করবার জন্যে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার জন্যে আমরা আমাদের সংগ্রামের গতি আরও বাড়াব। সংগ্রামকে আরও বেগবান করব। ইনশাল্লাহ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বিজয় অর্জন করব।”