ভিন্ন মত হলেই মামলা দেওয়া হচ্ছে: ফখরুল

মামলা দিয়ে সরকার ভিন্ন মতের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 04:18 PM
Updated : 11 Dec 2019, 04:18 PM

‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে বুধবার ঢাকার গুলশানে লেইক শোর হোটেলে বিএনপি আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “বাংলাদেশে মানবাধিকারের যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি এত ভয়াবহ আর কখনই ছিল না।

“আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে শুধু ভিন্ন মত, ভিন্ন রাজনৈতিক চিন্তার কারণে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষকে মামলার আসামি করা হয়েছে রাজনৈতিক মামলায় এবং মামলা দেওয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ চার হাজার ৮১৪টি।”

তিনি বলেন, “২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত সরকারের হাতে এবং আওয়ামী লীগের হাতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা মারা গেছেন ১৫২৬ জন এবং ডিসেপিয়ার হয়েছেন আমাদের হিসাব মতে বিএনপির ৪২৩ জন এবং অ্যাজ এ হোল ৭৮১ জন।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে তার মানবাধিকারও খর্ব করা হচ্ছে বলে দাবি করেন ফখরুল।

খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড যে প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে শুনানির জন্য দিয়েছে,তাতে চিকিৎসকদের ঠিক প্রতিবেদনটি গেছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ফখরুল।

অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফখরুল বলেন, “অর্মত্য সেন সুন্দর করে একটি জায়গায় বলেছেন যে কখনই কোনো ডেভেলপমেন্ট সাসটেইনেবল হবে না, যদি সেখানে ডেমোক্রেসি না থাকে।

“এই সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে উন্নয়নের কথা বলে। উন্নয়ন যে একটা মিথ তৈরি করেছে, মিথ্যা কথা বলে জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। শুধু উন্নয়ন দিয়ে কখনও জনগণের সমস্যার সমাধান করা যায় না। উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না যদি গণতন্ত্র না থাকে।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

শুরুতে বিএনপির সম্পাদনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ ‘অ্যাবসেন্স অব ডেমোক্রেসি অ্যান্ড সিস্টেমেটিক হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশনস বাই স্টেট অ্যাপারেটাস’ এর মোড়ক উন্মোচন করেন বিএনপি মহাসচিব। পরে গ্রন্থের ওপর তথ্যচিত্র তুলে ধরেন সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ। বিএনপির মানবাধিকার সম্পাদক আসাদুজ্জামান সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

বৈঠকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের সন্ধান চেয়ে অশ্রুনয়নে বক্তব্য রাখেন।

এই গোলটেবিলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ১৫টি দেশের কূটনীতিকরা যোগ দেন।

মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে এবং শ্যাম ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, এএইচএম মোফাজ্জল করীম, নুর খান, মাসুদ আজিজ বক্তব্য রাখেন।

পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার শাহ ফয়সাল কাকার পাকিস্তানে মানবাধিকার পরিস্থতি রক্ষায় তার দেশের সরকারের নানা পদক্ষেপও তুলে ধরেন। তিনি কাশ্মীর প্রশ্নে ভারত সরকারের সমালোচনাও করেন।

গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, রুহুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ইসমাইল জবিউল্লাহ, এনামুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, জহিরউদ্দিন স্বপন, জেবা খান, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আনিসুর রহমান খোকন, শায়রুল কবির খান, সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ বখতিয়ার আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আল হাসান উপস্থিত ছিলেন।