খালেদার মেডিকেল রিপোর্ট গেল আদালতে, ফখরুলের সন্দেহ

কারাবন্দি খালেদা জিয়া স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদন বিএসএমএমইউ থেকে পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Dec 2019, 11:44 AM
Updated : 11 Dec 2019, 01:16 PM

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন আবেদনের বিষয়ে আদালতের আদেশ হবে।

তবে চিকিৎসকদের দেওয়া প্রতিবেদনই বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ আদালতে পাঠিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জিয়া এতিমখানা ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত এপ্রিল থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বিভিন্ন মামলায় জামিন হওয়ার পর জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটিতে জামিন হলেই খালেদার মুক্তির পথ খুলবে বলে আশা করছেন তার আইনজীবীরা।

গত ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এই আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ  চিকিৎসা প্রতিবেদন দিতে না পারায় এজলাসে তুমুল হট্টগোলের মধ্যে তাদের আরও ছয় দিন সময় দিয়ে ১২ ডিসেম্বর আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করে আদালত।

আদালতের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিএসএমএমইউ উপাচার্যের প্রতিনিধিদের সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা যায়। তাদের একজনের হাতে ছিল বিএসএমএমইউর লোগো সম্বলিত খাকি রঙের ফাইল।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আলী আকবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। আপনারা সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্রের সাথে যোগাযোগ করুন। যা বলার সেই বলবে।”

তখন সাংবাদিকরা মুখপাত্র সাইফুর রহমানের কক্ষে গেলেও সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি একটা মিটিংয়ে আছি, এ বিষয়ে কিছু জানি না।”

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বৃহস্পতিবারের কার্যতালিকার ১২ নম্বর ক্রমিকে আছে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি।

তবে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। ”

খালেদার চিকিৎসায় গঠিত অধ্যাপক জিলন মিঞা সরকারের নেতৃত্বে সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড এই প্রতিবেদন দিয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

এদিকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ থেকে প্রতিবেদনের ফাইল সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগে গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এক গোলটেবিল বৈঠকে নিজের সন্দেহের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি, মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, সেই রিপোর্টটিকে সরিয়ে অন্য কোনো রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

গুলশানের লেইক শোর হোটেলে এই বৈঠকেই খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্ট নিয়ে সন্দেহের কথা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদার স্বাস্থ্যগত অবস্থা নিয়ে চিকিৎসকদের একটি প্রতিবেদন গোলটেবিলে পড়ে শোনান ফখরুল। তিনি বলেন, গত ৩০ নভেম্বর এই প্রতিবেদনটি দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

“এখানে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘ক্রিপল স্টেইজ’ উল্লেখ করে তার উন্নত চিকিৎসার কথা বলা হয়েছে। এই রিপোর্টটি সুপ্রিম কোর্ট চেয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা উপস্থিত করা হয়নি।”

ফখরুল বলেন, “আমরা খুব পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করছি, অত্যন্ত সচেতনভাবে দেশনেত্রীকে বেআইনিভাবে কারাগারে আটক করে রাখার জন্য সরকার কাজ করছে এবং এভাবে তারা বড় রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।”

খালেদার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে গত ২৮ নভেম্বর তার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন চেয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

কিন্তু ৫ ডিসেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম শুনানিতে বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার কিছু পরীক্ষা হয়েছে, কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেজন্য সময় প্রয়োজন বলে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এরপর ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘কোনোরকম ব্যর্থতা ছাড়াই’ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন দিতে বিএসএমএমইউ উপাচার্যকে নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

এই কক্ষের ভেতরেও বসেছে সিসি ক্যামেরা

আদালত কক্ষে সিসি ক্যামেরা

আগের দিনের শুনানিতে বিএনপির আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোলের পর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

বুধবার প্রধান বিচারপতির আদালত কক্ষে গিয়ে আটটি সিসি ক্যামেরা দেখা গেছে।

বুধবার সন্ধ্যার কিছু আগে প্রধান বিচারপতিকে আপিল বিভাগের আদালত ও আদালত কক্ষের নিরাপত্তা পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো.বদরুল আলম ভূঁইয়া।

৫ ডিসেম্বর বিএনপির আইনজীবীদের হট্টগোলের কারণে আপিল বিভাগ আর কোনো মামলার শুনানি নিতে পারেনি।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন কড়া ভাষায় বলেছিলেন, “সব কিছুর একটা সীমা থাকা দরকার, বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার।”

এদিকেবৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানিকে কেন্দ্র করে বুধবার থেকেই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

সর্বোচ্চ আদালতের মাজার গেট ও বার কাউন্সিলের পাশের গেটে অন্য দিনের চাইতে বেশি পুলিশ মোতায়েন ছিল।

মৎস্য ভবনের সামনের রাস্তায়ও জলকামান নিয়ে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে।