চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আ. লীগের নেতৃত্বে সালাম-আতাউর

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন, তার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন শেখ আতাউর রহমান।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Dec 2019, 01:58 PM
Updated : 7 Dec 2019, 02:13 PM

সরাসরি কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তারা, যাকে আওয়ামী লীগের ইতিহাসে ‘মাইলফলক’ বলছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের কাউন্সিলে সাধারণত সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি ঘোষণা করা হয়ে থাকে। গেল মাসে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলনেও সংগঠনের শীর্ষ দুই পদ পেতে আগ্রহীদের মধ্যে সমঝোতা আলোচনার পর সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শনিবার বিকালে শুরু হওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলর ছিলেন ৩৫৩ জন। তারা ভোট দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য তাদের নেতৃত্ব নির্বাচিত করেন।

কয়েক ঘণ্টা কাউন্সিল অধিবেশন চলার পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম ২২৩ ভোট পেয়ে সভাপতি নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সংগঠনের এই শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পেয়েছেন ১২৯ ভোট।

সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শেখ আতাউর রহমান পেয়েছেন ১৯৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন একই উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, তিনি পেয়েছেন ১৫৪ ভোট।

সকালে লালদিঘী মাঠে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ত্রি বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন হয়। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এ নিয়ে ১৬ জেলায় সম্মেলনে আর কোথাও এ রকম ভোটাভুটি করতে হয়নি বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের

উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানি উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

সকালে লালদিঘী মাঠে সম্মেলন শুরুর আগে সংঘর্ষে জড়ায় দুই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ আতাউর রহমান ও গিয়াস উদ্দিনের সমর্থকরা। প্রায় ১০ মিনিট ধরে চলা এ সংঘর্ষ পুলিশ গিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিকালে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় দলের কাউন্সিল অধিবেশন। উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৩৬৪ জন কাউন্সিলর ছিলেন। তাদের মধ্যে অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন ৩৫৩ জন।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার আগে ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলাসহ ১৬ জেলার সম্মেলনে ফেনীতে সভাপতি পদ ছাড়া আর কোথাও ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি।

“এখানে প্রার্থীরা ভোটাভুটি চেয়েছেন। তাদের বক্তব্য এমন- হারি জিতি নাহি লাজ, নির্বাচন হোক। সেটাই ভালো। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় ভোটাভুটি সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চায় এটা একটা মাইলফলক।”

তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, “দলের অভ্যন্তরে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে। এ নিয়ে কারও বেশি উচ্ছ্বাস-উল্লাস প্রকাশ না করা সমীচীন। এতে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাটা অসুস্থ পর্যায়ে চলে যায়।”

সভাপতি নির্বাচিত হওয়া এমএ সালাম ২৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সভাপতি হওয়ার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি দলকে এগিয়ে নিতে চান। নির্বাচনে যারা জয়ী হতে পারেনি তাদের সাথে নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আগে দুই সাধার সম্পাদক প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়। ছবি: সুমন বাবু

দ্রুত সময়ের মধ্যেই দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুজনই।

এদিকে বিকালে কাউন্সিল অধিবেশনকে ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি এলাকায়। মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।

কাউন্সিল স্থল আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয় পুলিশ। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ওই রাস্তায় সাধারণ লোকজনের চলাচলও বন্ধ করে দেয় পুলিশ।