ডাক্তারদের ঘাড়ে কয়টা মাথা: ফখরুল

দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অবস্থা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2019, 11:42 AM
Updated : 6 Dec 2019, 02:05 PM

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন জমা না দিয়ে ‘আদালত অবমাননা’ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। 

শুক্রবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা লক্ষ্য করবেন, বৃহস্পতিবারের আগের দিন প্রধানমন্ত্রী বললেন ওই মামলাকে কেন্দ্র করে যে, তিনি (খালেদা জিয়া) খুব ভালো আছেন, সুস্থ আছেন, হুইল চেয়ারে আছেন, সেটাও ভালোভাবে আছেন, ভালোভাবেই আছেন।

“কথাটা হচ্ছে- চিফ এক্সিকিউটিভ অব দি গভার্নমেন্ট, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তিনি যখন বলেন যে সব ঠিক আছে, কোনো অসুবিধা নাই, তিনি সুস্থ আছেন… তখন বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর বা ডাক্তারদের ঘাড়ে কয়টা মাথা যে তারা বলবেন- ‘তিনি খারাপ আছেন’।”

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে তার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চেয়েছিল আপিল বিভাগ। ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে মেডিকেল প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

কিন্তু সেই প্রতিবেদন না আসায় বৃহস্পতিবার জামিন শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ। এরপর প্রায় তিন ঘণ্টা আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে অবস্থান নিয়ে তুমুল হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “বাড়াবাড়ির একটা সীমা থাকা দরকার।… এটা নজিরবিহীন।”

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “নজিরবিহীন তো আমরাও মনে করছি। আমরা তো মনে করছি যে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত (আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত) নজিরবিহীন।

“যেখানে একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুরুতর অবস্থায়, অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তার চিকিৎসার জন্য বেইল পিটিশন করা হয়েছে, সেটাকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ওই যারা আদেশ মানল না, তাদেরকে আরও সময় দিলেন… দুর্ভাগ্য এই দেশের ও জাতির।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “গতকালতো সরকার আদালত অবমাননা করেছে। বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর আদালত অবমাননা করেছেন।… কোর্ট আদেশ দিয়েছিল রিপোর্টটা ডাক্তারদের স্বাক্ষরসহ হাজির করতে হবে গতকাল (বৃহস্পতিবার), তারা করেনি। ওই জন্যই তো আদালত অবমাননা হওয়া উচিত ছিল।

“প্রধান বিচারপতিকে শ্রদ্ধা করে, সন্মান করি। বিচার বিভাগকে শ্রদ্ধা করি। তবে বিস্মিত হই যখন সেই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। এতকিছুর পরও আমরা ক্ষুব্ধ হয়েছি, হতাশ হয়েছি যে প্রধান বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশন, তারা এ বিষয়টাকে কেউ লক্ষ্য করেননি এবং তারা এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি।”

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা হয়ে ‘দলীয় স্বার্থে’ কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

“অ্যাটর্নি জেনারেল সাহেব সরকারের স্বার্থ রক্ষার জন্য সব সময় চেষ্টা করেন। তবে এমনভাবে চেষ্টা করেন যে মনে হয় সরকার না, দলের স্বার্থ রক্ষার জন্য সবসময় চেষ্টা করেন।”

জামিন পাওয়া খালেদা জিয়ার ‘সাংবিধানিক অধিকার’ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তিনি কারাগারে আটক হয়ে আছেন শুধু নয়, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি এত অসুস্থ যে, ডাক্তারা বলেছেন যে, আর বিলম্ব হলে তাকে সুস্থ অবস্থায় আর পাওয়া যাবে না। এমন কি প্রাণহানিও হতে পারে। আমরা বলছি সব বাদ দেন- শুধু মানবিক কারণে তাকে মুক্তি দিয়ে তাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।”

‘অর্থনীতির সব সূচক নিচের দিকে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “সরকার খালি মুখেই কথা বলে, একটা ঢোল পিটিয়ে বেড়ায় যে আমরা উন্নতি করছি, জনগণের কল্যাণ করছি, উন্নয়নের রোল মডেল হচ্ছে বাংলাদেশ। আজকের পত্রিকা দেখলে বুঝতে পারবেন, প্রায় সব সূচক নিম্নগামী।

“আরেক খবর পত্রিকায় আছে- দুই কোটি ১০ লাখ মানুষ পুষ্টিকর খাবার কিনতে পারে না। আর তাদের (সরকার) কথা ইতোমধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে গেছি।”

দেশে এখন ‘ভয়াবহ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক সংকট’ তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে সেজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে তাই আন্দোলন করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে এবং যেটা ন্যায়সঙ্গত সেটা করতে হবে। আমাদের নেমে পড়তে হবে, দেশকে উদ্ধার করতে হবে, মানুষকে উদ্ধার করতে হবে, আমাদের নেত্রীকে উদ্ধার করতে হবে- এটাই একমাত্র কাজ, এটাই একমাত্র দায়িত্ব।”

তরুণদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “অনুরোধ কবর আমি, সময় এসেছে আপনাদের। আপনাদেরই সময় এই নেতৃত্ব দেওয়ার, সামনে আসার। আমরা যারা বৃদ্ধ, বয়স হয়ে গেছে আমরা সবসময় আছি আপনাদের সঙ্গে। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে আসুন আমরা আন্দোলনে নেমে পড়ি।”

‘গণমাধ্যম ভুলে যাচ্ছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২৯ বছর আগে এই ৬ ডিসেম্বর স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিল, জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটির কথা গণমাধ্যম যেন ভুলে যাচ্ছে।

“আজকে পত্রিকা খুলে খুলে আমি ফ্রন্ট পেইজে খুব কম জায়গায় দেখলাম যে, আজকের দিনটাকে স্মরণ করে কিছু দেওয়া হয়েছে। যাদেরকে বলা হয় চতুর্থ স্তম্ভ, অর্থাৎ গণতন্ত্রকে যারা ধরে রাখেন, গণতন্ত্রের বিবেক হিসেবে কাজ করেন, গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ যাদের হাতে, সেই মিডিয়া আজকে ৬ ডিসেম্বরকে ভুলে গেছে।”

ফখরুল প্রশ্ন করেন- “তাহলে আমরা কী মনে করব, যে এখন সংবাদ মাধ্যম মনে করছে এখন আর গণতন্ত্রের প্রয়োজন নেই? এটা একটা বিস্ময়ের ব্যাপার। আমি অবশ্য বিস্মিত হই না এজন্য যে, আজকে পৃথিবীতে ভিন্ন ধারা শুরু হয়েছে। এই ধারাটা গণতন্ত্রের পক্ষের ধারা নয়।”

নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা স্মরণ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সেই নেত্রী আজকে কারাগারে। অপরাধ, তিনি আবারও হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম শুরু করেছেন।”

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এবং ‘স্বৈরাচার পতন দিবস’ উপলক্ষে ‘নব্বইয়ের ডাকুস ও সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

সংগঠনের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সাবেক এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় এ আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে নব্বইয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাবেক ছাত্র নেতা খোন্দকার লুৎফুর রহমান, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি ও হাবিবুল ইসলাম হাবিব বক্তব্য দেন।