আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তে জাতি হতাশ, বিক্ষুব্ধ: ফখরুল

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিনের আবেদন শুনানি পিছিয়ে দেওয়ায় সর্বোচ্চ আদালতের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Dec 2019, 09:27 AM
Updated : 5 Dec 2019, 11:29 AM

স্বাস্থ্য পরিস্থিতির প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিন ঠেকাতে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে তা আদালতে জমা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।

এনিয়ে আদালতের আদেশের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে নয়া পল্টনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধী দলীয় নেত্রী ৭৩ বছর বয়সী ‘সবচেয়ে জনপ্রিয়’ নেতা খালেদা জিয়াকে প্রচলিত রীতি মেনে জামিন না দিয়ে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।

“আপিল বিভাগের এই সিদ্ধান্ত আজকে সমস্ত জাতি শুধু হতাশই হয়নি, বিক্ষুব্ধ হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন-বিক্ষুব্ধ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতিতে গোটা জাতি আজকে উদ্বিগ্ন। অবিলম্বে উন্নত চিকিৎসার জন্যে তার মুক্তিটা অবশ্যই প্রয়োজন।”

‘চিকিৎসার অভাবে’ দলের চেয়ারপারসনের প্রাণহানির শংকা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার চিকিৎসা না হওয়ার ফলে স্বাস্থ্যের ক্রমাবনতির সমস্ত দায়-দায়িত্ব ‘অনির্বাচিত সরকার ও সরকারপ্রধানকে’ নিতে হবে।

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিষয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিবেদন জমা না দেওয়া তার জামিন প্রশ্নে শুনানি পিছিয়ে ১২ ডিসেম্বর দিন রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

ফখরুল বলেন, “আমরা যতটুকু জানি, বলতে পারেন যে, আনঅফিশিয়াল সূত্রে আমরা জানি যে, গত রাতেই আপনার রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়ে গেছে এবং সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে আজকে তার জামিনকে বাধা দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, নতুন মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনের সঙ্গে পুরনো বোর্ডের প্রতিবেন জমা দেওয়ার কথা ছিল বিএসএমএমইউয়ের উপাচার্যের।

গত ৩০ নভেম্বর বিএসএমএমইউয়ের চার চিকিৎসকের বোর্ডের প্রতিবেদনে তুলে ধরে ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। প্রতিদিন অতি দ্রুত পঙ্গুত্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন; প্রায় পঙ্গু হয়েই পড়েছেন।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন সাহায্য ছাড়া একেবারে চলতে পারেন না, বিছানা থেকেও উঠতে পারেন না। মারাত্মক স্বাস্থ্যের অবনতির পরেও সরকার ক্রমাগত তার জামিনে বাধা দিচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা অপেক্ষা করবো। সাত দিনের কথা বলা হয়েছে। এই সাত দিনের মধ্যে ….।”

মুক্তি না দিলে কি করবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মুক্তি না দিলে স্থায়ী কমিটি বসে সিদ্ধান্ত নেবে।”

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আদালতের ওপর হস্তক্ষেপ’

মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, বিচার চলাকালীন একটা মামলায় তিনি সরাসরি হস্তক্ষেপ করছেন। তার বক্তব্যে প্রমাণ হয়ে যায়, তিনি ও তার সরকার চান না খালেদা জিয়া মুক্ত হোক। খালেদা জিয়ার মুক্তি করুণার ব্যাপার নয়, এটা তার আইনগত অধিকার।

গতকাল গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়া কারাগারে ‘রাজার হালে’ আছেন। তার জন্য কারাগারে ‘মেইড সার্ভেন্ট’ দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে সাজাপ্রাপ্ত আসামির সেবায় ‘কাজের বুয়া’ দেওয়ার দৃষ্টান্ত নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এসব কথা বলেই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) একদিকে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ যারা রিপোর্ট দেবেন, তাদেরকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। দেশে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে ভয় দেখানো।

“বিয়িং দ্য চিফ এক্সিকিউটিভ- প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়ে তিনি যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা সরাসরিভাবে বিচার বিভাগের ওপরে হস্তক্ষেপের শামিল, আদালত অবমাননার শামিল এবং কিছুটা রায়ের মতোই।

প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার অভিযোগপত্র ঘটনাকে মিলিয়ে পরিস্থিতিকে ‘বিচার বিভাগের জন্য ও চিকিৎসকদের জন্য হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আফরোজা আব্বাস, মীর সরফত আলী সপু, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, আবদুস সালাম আজাদ, হেলেন জেরিন খান, সেলিম রেজা হাবিব ও আনোয়ার হোসেইন উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের পর মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের নেতৃত্বে মহিলা দল নয়া পল্টনের সড়কে মিছিল করে।

সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় সামনে ও পাশে অলি-গলির মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।