বিদ্যুৎ-পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি শুধু বিএনপির সমস্যা না: ফখরুল

বিদ্যুৎ-পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি শুধু বিএনপি নয়, জনগণের ওপরও প্রভাব ফেলে মন্তব্য করে তার থেকে মুক্তির জন্য সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত হতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2019, 01:59 PM
Updated : 3 Dec 2019, 03:12 PM

মঙ্গলবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি আমলের সঙ্গে এখনকার বাজারমূল্যের একটি তুলনামূলক চিত্র দিয়েছেন তিনি।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বরের বাজারদরের সঙ্গে গত ১ ডিসেম্বরের বাজারদরের তুলনা করেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সময়ে ২০০৬ সালে মোটা চালের দাম ছিল গড়ে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা, এখন ২০১৯ সালে তা ৩৪-৪০ টাকা; সরু চাল ছিল ২৪ টাকা ৫০ পয়সা, এখন হচ্ছে এটা ৪১ থেকে ৬০ টাকা।

“পেঁয়াজ ছিল ৮-২০ টাকা, এখন হয়েছে এটা ২২০-২৪০ টাকা।”

গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর বাংলাদেশের বাজারে এই পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে আড়াইশ টাকায় উঠেছে। তবে তার কয়েক মাস আগে বাংলাদেশেও ২৫-৩০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে।

অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামের তুলনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সয়াবিন তেল ছিল ৫৫ টাকা, এখন হয়েছে ৯৪-১১০ টাকা। আটা ছিল ১৭ টাকা, এখন ২৮-৩২ টাকা। হাঁসের ডিম আমাদের সময় ছিল হালি ১২ টাকা, এখন হচ্ছে ৭০ টাকা; আলু ছিল ৬ টাকা, এখন ৩০ টাকা; চিনি ছিল ৩৬ টাকা, এখন হচ্ছে ৬০ টাকা।”

এখন বাজারে পুরান আলুর কেজি ৩০ টাকা হলেও কয়েক মাস আগে ভরা মওসুমে তা ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এখন দ্রব্যমূল্য বেড়ে বিএনপির আমলের তুলনায় দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ হয়েছে।

“এসব দাম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত ১৩ বছরে জিনিসপত্রের মূল্য গড় হিসেবে বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। অনেক জিনিসের মূল্য বেড়েছে তিন গুণ। অথচ এসেনশিয়াল কমোডিটিস অ্যাক্ট অনুযায়ী সরকার ১৭টি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। এই সরকারের প্রতিশ্রুত ১০ টাকার চাল আমজনতা খেয়েছে ৭০ টাকায়।”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে সরকার পতনের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “বিদ্যুতের দাম শুধু বিএনপিকে অ্যাফেক্ট করে না, পেঁয়াজের দাম শুধু বিএনপিকে অ্যাফেক্ট করে না, জনগণকে অ্যাফেক্ট করে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং এগিয়ে এসে এই যে দানব, তাদেরকে অপসারণ করতে হবে।”

নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ‘আওয়ামী লীগের লোক’

পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পেছনে ক্ষমতাসীনদের ‘ব্যবসায়ী জোট’ দায়ী বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, “পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকটকে পুঁজি করে অতি মুনাফালোভী সরকার দলীয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, আমদানিকারক, আড়ৎদার, মজুদদার, খুচরা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে ভোক্তাদের পকেট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে শত শত কোটি টাকা।”

অর্থনীতির ছাত্র ফখরুল বলেন, “বর্তমান সরকার একদিকে মুক্তবাজারের দর্শনে বিশ্বাসী, অন্যদিকে নিজস্ব দলীয় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় আগ্রহী। সরকারের দুর্নীতি, টাকা পাচার, লুটপাটের মাধ্যমে পাহাড় সমান সম্পদ অর্জনের ফলশ্রুতিতে দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আকাশচুম্বি হয়েছে।

“এর পেছনে প্রধান কারণ অবশ্য দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহতার ন্যূনতম আঁচ তাদের উপর লাগেই না। আপনার-আমারসহ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের শ্রমে-ঘামে অর্জিত ট্যাক্সের টাকা শতকরা ৩৬ ভাগই পাচার হচ্ছে, বাইরে চলে যাচ্ছে।”

সরকার ‘দলীয় ব্যবসায়ীদের’ জোট ভাঙতে না পারলে দ্রব্যমূল্য কমবে না বলে সতর্ক করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “টিসিবিকে শক্তিশালী করতে না পারলে, দলীয় লোকজন দ্বারা পরিবহনের চাঁদাবাজি বন্ধ না করতে পারলে এবং মধ্যস্বত্ব ব্যবস্থা বন্ধ করতে না পারলে দ্রব্যমূল্য হ্রাস করা সম্ভব হবে না।

“বক্তৃতা-বিবৃতি ও লোক দেখানো ভণ্ডামি দ্বারা আর যাই হোক দ্রব্যমূল্য হ্রাস বা অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। কারণ যারা দ্রব্যমূল্য বাড়াচ্ছে তারা সবই তো আওয়ামী লীগের লোক।”

বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সরবরাহের কোনো ঘাটতি না থাকলেও এর মূল্য বৃদ্ধি সরকারের ‘ব্যর্থতার’ কারণেই ঘটছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “সরকার ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ওপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য নির্ভরশীল।

“খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এই জনগণের দাবি।”

সংবাদ সম্মেলনে দ্রবমূল্যের বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে ধারণা দিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গ্রাম থেকে আসা এক শিক্ষার্থীর সহজ স্বীকারোক্তি হচ্ছে এ রকম, ‘বাজারে সবজির মূল্য বৃদ্ধির ফলে সবজি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ বাজারে এমন কোনো সবজি নাই যার মূল্য ৮০ থেকে ১০ টাকার নিচে। এমন কি পেঁয়াজ পাতার দামও হচ্ছে কেজি ১০০ টাকা।’

“প্রশ্ন ছিল তাহলে তার খাদ্য তালিকায় কী থাকে? উত্তর ছিল, ডিম এবং যথারীতি এক বাটি পানি সমৃদ্ধ ডাল। তাও একটা ডিম দুই জনে ভাগ করে খায়। দ্রব্যমূল্যের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এটাই হচ্ছে বাস্তব চিত্র।”

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির নিয়ে বিএনপির  বড় কোনো  কর্মসূচি রয়েছে কি না জানতে চাইলে সাংবাদিকদের ফখরুল বলেন, ‘‘সারা দেশে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি, কর্মসূচি হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো হবে প্রয়োজনে।”

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চলমান আলোচনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে আমরা গণশুনানিতে আমাদের প্রতিনিধি গিয়েছিল, সেখানে দলের বক্তব্য দেওয় হয়েছে। বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির ব্যাপারে অতীতে আমরা কর্মসূচি নিয়েছি। আবার যদি মূল্য বৃদ্ধি করা হয় আমরা অবশ্যই কর্মসূচি নেব।

“বিদ্যুতের দাম শুধু বিএনপিকে অ্যাফেক্ট করে না, পেঁয়াজের দাম শুধু বিএনপিকে অ্যাফেক্ট করে না, জনগণকে অ্যাফেক্ট করে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।