খালেদার জামিন শুনানি হবে আপিলের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি হবে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2019, 08:14 AM
Updated : 25 Nov 2019, 11:07 AM

সোমবার আবেদনটির শুনানির কথা থাকলেও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আবেদনটির শুনানি পিছিয়ে বৃহস্পতিবার দিন রাখে।

আপিল বিভাগের সোমবারের কার্যতালিকায় আবেদনটি শুনানির জন্য থাকলেও প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, “আবেদনটি আমরা সবাই মিলে শুনবো। বৃহস্পতিবার রাখছি।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের মধ্যে আদালতে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, একে এম এহসানুর রহমান।

দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত বললেন, আগামী বৃহস্পতিবার ফুল বেঞ্চে শুনবেন। এটা সর্বোচ্চ আদালত। আমরা ন্যায়বিচার আশা করি।”

হাই কোর্ট গত ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি খারিজ করে দিলে গত ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী কায়সার কামাল।

খালেদা জিয়ার জামিন সরকার ‘আটকে রেখেছে’ বলে বিএনপি বরাবর অভিযোগ করে এলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছেন, জামিনের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার, এক্ষেত্রে সরকারের কিছু করার নেই।

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন বিএনপি নেতারা।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে আসা প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে গত বছর ২৯ অক্টোবর রায় দেয় বিচারিক আদালত।

পাশাপাশি তাদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আর ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেছিলেন। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার চার দিন পর গত বছর ১৮ নভেম্বর খালেদার দণ্ড বাতিল ও খালাস চেয়ে হাই কোর্টে আপিল করেন তার আইনজীবীরা।

৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এই আপিলের সঙ্গে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদার জামিন আবেদনও করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল ওই আপিল আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করে হাই কোর্ট।

সেদিন বিচারিক আদালতের রায়ে দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা দেওয়ার পাশাপাশি খালেদার জামিন আবেদনটি নথিভুক্ত করে মামলার নথি তলব করে হাই কোর্ট।

গত ২০ জুন এ মামলার রেকর্ড (মূল নথি) হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা পড়লে গত ২৩ জুন নথিভুক্ত জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এরপর খালেদা জিয়া ও দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য শোনে আদালত।

অপরাধের গুরুত্ব, সংশ্লিষ্ট আইনের সর্বোচ্চ সাজা এবং বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদাসহ অন্য আসামিদের করা আপিল শুনানির জন্য প্রস্তুত- এ তিন বিবেচনায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি খারিজ করে দেয়।

দুই মামলায় জামিন বাড়লো

এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও মানহানির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে দেওয়া ছয় মাসের জামিন আরও এক বছরের জন্য বাড়িয়েছে হাই কোর্ট।

খালেদার আইনজীবীদের আবেদনে সোমবার বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কায়সার কামাল। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান মামুন, সালমা সুলতানা সোমা, ফাইয়াজ জিবরান, গোলাম আক্তার জাকির ও রোকন উজ্জামান।

গত ১৮ জুন হাই কোর্টের এ বেঞ্চই দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দিয়েছিল। ১৮ ডিসেম্বর জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তার আগেই জামিনের মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর বিকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি) মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের কাছে কোনো ধর্মের মানুষ নিরাপদ নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে। হিন্দুদের ওপর হামলা করেছে।”

খালেদা জিয়ার ওই বক্তব্য ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ করার পাশাপাশি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ‘শ্রেণিগত বিভেদ সৃষ্টি’ করেছে অভিযোগ তুলে ওই বছরের ২১ অক্টোবর জেননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি আদালতে আরেকটি মামলা করেন এ বি সিদ্দিকী।

২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ সরকার নিয়ে কটূক্তি করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

দুই মামলাতেই গত বছরের ৩০ জুন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় শাহবাগ থানা পুলিশ। দুই তদন্ত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২০ মার্চ খালেদার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা হাই কোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে।