বিএনপির চিঠি ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’: তথ্যমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় হওয়া চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত প্রকাশের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যে চিঠি বিএনপি দিয়েছে, তাকে দলটির ‘রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 12:29 PM
Updated : 18 Nov 2019, 12:29 PM

খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফর করে এসে চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেছিলেন কি না- সেই প্রশ্ন তিনি বিএনপি নেতাদের সামনে রেখেছেন।  

সোমবার সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিএনপির এই চিঠি দেওয়া একটি রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি ছাড়া কিছু নয়। তারা যে ভারতবিরোধী রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসেনি, সেটি বোঝানোর জন্য তারা মূলত ওই চিঠিটি দিয়েছে।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে ওই চিঠি রোববার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া তা গ্রহণ করেন।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়া দিল্লি সফরের সময় ভারতের সঙ্গে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা সই এবং তিনটি যৌথ প্রকল্প উদ্বোধন হয়। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার এবং এলপিজি রপ্তানির সুযোগ দেওয়া নিয়ে দেশে সমালোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিএনপির এক পৃষ্ঠার চিঠিতে বলা হয়, “বাংলাদশের সংবিধানের আর্টিকেল ১৪৫ (ক) তে উল্লেখ আছে যে- বিদেশের সাথে সম্পাদিত সকল চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে।

“কিন্তু ভারতের সাথে যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করা হলো তার কোনটি জনসমক্ষে কিংবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণই এই সকল চুক্তির খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। অথচ এই সকল জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির বিষয়ে অভিহিত থাকা জনগণের মৌলিক অধিকার, যে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখা স্পষ্টতই সংবিধানের লঙ্ঘন।”

“এমতাবস্থায় সংবিধানের আর্টিকেল ১৪৫ (ক) অনুযায়ী ভারতের সাথে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তির পূর্ণ বিবরণী অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করে জনমনে সৃষ্ট নানবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করার আহ্বান জানাচ্ছি,” বলা হয় চিঠিতে।

তথ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি যেসব প্রশ্ন তুলেছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী বারবার ব্যাথ্যা করেছেন।

“বিএনপির ভাষ্য অনুযায়ী যে চুক্তিগুলো হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে জনগণ জানে না। অথচ এই সফরে কোনো নতুন চুক্তি হয়নি। এই সফরে যেগুলো হয়েছে সেগুলো হচ্ছে সমঝোতা স্মারক এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর বা এসওপি।

‘শুধুমাত্র লাইন অব ক্রেডিটের আলোকে এক্সিম ব্যাংক ঢাকায় একটি অফিস খুলবে, সেই মর্মে চুক্তি হয়েছে, অন্য কোনো চুক্তি সেখানে হয়নি।"

বিএনপি ও তাদের মহাসচিব চুক্তি ও এমওইউ’র পার্থক্য ‘বোঝেন না’ মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, এতে তিনি ‘আশ্চর্য’ হয়েছেন।

“তারা বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী এগুলো রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার বিষয় রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর থেকে এসে রাষ্ট্রপতিকে সমস্ত বিষয়গুলো অবহিত করেছেন।

“প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন করে ভারত সফরের বিষয় বিস্তারিত তথ্য জনগণকে অবহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সংসদেও সব বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেছেন।”

বিএনপির ওই চিঠিকে ‘অন্তঃসারশূন্য’ হিসেবে বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের দুটি সমুদ্রবন্দর ভারত ব্যবহার করবে আমাদের রেভিনিউ দিয়ে। এটি আমাদের অর্থনীতির সহায়ক, এটি তারা (বিএনপি নেতা) বোঝেন না তা নয়। তারা মূর্খ বলে আমরা মনে করি না, কিন্তু তাদের বক্তব্যগুলো মূর্খের মত।”

জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই বিএনপি ওই চিঠি পাঠিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় দুবার ভারত সফর করেছেন। সেখানে সাতটি চুক্তি হয়েছে।

“সাতটি চুক্তি করে আসার পর বেগম জিয়া কী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন? করেননি। সংবাদ সম্মেলন করে কী জনসম্মুখে প্রকাশ করেছিলেন? করেননি। সংসদে বক্তৃতা করে কী এগুলো বলেছিলেন? সেটাও বলেননি।"

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, “নিজেরা এগুলো করেননি, অথচ তারা যে প্রসঙ্গগুলোর অবতারণা করেছেন তার সবগুলোই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক এবং এসওপিগুলো করে এসেছেন তা প্রতিটি দেশের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের স্বার্থে এবং দেশকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে।”

এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, খালেদা জিয়া গতবছর ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে যাওয়ার পর এই প্রথম বিএনপি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি চিঠি দিয়েছে, অথচ সেখানে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে একটি শব্দও নেই।

“তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, বিএনপি আসলে খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় কিনা।”

তথ্যমন্ত্রী বলেন, “তারা (বিএনপি নেতারা) যে সব সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে কথা বলেন, শারীরিক বিষয় নিয়ে... কথা বলেন, সেগুলো নিছকই জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিনা, সেই প্রশ্ন জাগে।