পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাবেশ করবে বিএনপি

পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 03:14 PM
Updated : 16 Nov 2019, 05:01 PM

শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিঙে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি- এটা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, এখানে সিন্ডিকেট জড়িত। এই সিন্ডিকেটের পেছনে সরকারের মদদপুষ্ট ব্যক্তিরা কাজ করেছে।

“ব্যর্থতা হচ্ছে যে, সরকার আগে ধারণাই করতে পারেনি কত আসছে, আর কত দরকার। যার ফলে আজকে পেঁয়াজের মতো একটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু পেঁয়াজই নয় সকল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিকহারে বেড়ে গেছে। আমরা সরকারের ব্যর্থতার নিন্দা জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমরা পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী সোমবার ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করব। একই সঙ্গে কৃষকদের পণ্যের ন্যায্যমূল্যের দাবিও এই সমাবেশ থাকবে।”

বিদ্যুতের গণশুনানিতে যাবে বিএনপি

মির্জা ফখরুল বলেন, “বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব আবার আসছে। আগামী ২৮ নভেম্বর এই বিষয়ে গণশুনানি আছে। আমরা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এবার দলের পক্ষ থেকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নেতৃত্বে একটি টিম এই গণশুনানিতে অংশ নেবে। ওই টিমের সদস্যরা হচ্ছেন- বরকত উল্লাহ বুলু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও এবিএম মোশাররফ হোসেন। তারা এই শুনানিতে যাবেন এবং আমাদের দলের যে বক্তব্য সেই বক্তব্য তুলে ধরবেন।

“বিদ্যুতের দাম বাড়ছে কেন? আগেও বলেছি আমরা, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্যে ২৫ হাজার কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে এবং যেসব প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না তাদেরকে পেমেন্ট করতে হচ্ছে। একটা মেগা দুর্নীতি চলছে, ভয়াবহ দুর্নীতি চলছে।”

প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি আজ-কালের মধ্যেই

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গত সভায় আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে যেসব চুক্তি করেছেন তা জনসমক্ষে প্রকাশ করবার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটা চিঠি দেব। আমরা আশা করছি কাল-পরশুর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে চিঠি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করব।”

“চুক্তির বিষয়ে তথ্য সরবারহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও আমরা চিঠি দেব। সেটা যথাসময়ে তাদের কাছে পৌঁছাবে।”

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যু, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও সিরাজগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতের জন্য শোক প্রকাশ করা হয়।

রাঙ্গাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

গণতন্ত্রের আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ফখরুল। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর দেওয়া বক্তব্যের জন্য আমরা এই সভায় ধিক্কার জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে সংসদে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। পার্লামেন্ট মেম্বারশিপ এই ধরনের ব্যক্তির থাকা উচিত নয় বলে আমরা মনে করি।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন, “জনগণ টাকা দেয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, তারা জনগণের টাকায় চলে। সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অর্ডিন্যান্স আছে, সেসব নিয়ম কানুন আছে তার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চলে। শিক্ষক ও ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে আমরা সেই আন্দোলনকে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন মনে করি এবং আমরা এটাতে সমর্থন জানাচ্ছি।”

দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি খালেদার জিয়ার জামিনের জন্য রোববার আরেকটি আপিল আবেদন করা হবে বলে জানান তিনি।

রোহিঙ্গায় গণহত্যার জন্য গাম্বিয়া সরকারের আন্তর্জাতিক আদালতে মামলায় দায়েরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আন্তর্জাতিক আদালত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আমরা সেজন্য আন্তর্জাতিক আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা সঠিক নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশার করবো দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন হবে।”

১৮ মাসে তারেকের সঙ্গে ৩৩৩টি সভা

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় ইতিমধ্যে ৩৩৩টি সভা করেছে। এটা অত্যন্ত শ্রমের সঙ্গে, যোগ্যতার সঙ্গে করেছেন। তার অসাধারণ দক্ষতার রয়েছে।

“তিনি বিভিন্ন জেলা-উপজেলা, বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও যেসব টিম রয়েছে তাদের সঙ্গে এসব সভা করেছেন। আজকের সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্যগণ তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।”

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে স্কাইপে লন্ডন থেকে তারেক রহমান সভাপতিত্ব করেন বলে জানান মির্জা ফখরুল।

বৈঠকে মহাসচিব ছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।