ভারতের সঙ্গে দর কষাকষির শক্তি সরকারের নেই: ফখরুল

‘দর-কষাকষি’র সক্ষমতা নেই বলে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে পারছে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2019, 09:28 AM
Updated : 16 Nov 2019, 09:28 AM

বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ মাত্রায় বলে ক্ষমতাসীনদের দাবি করে আসার মধ্যে শনিবার এক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, “আমরা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলতে তো কখনও বলি না, ভারতের সঙ্গে আমাদের তো বিরোধ নেই। সমস্যাটা হচ্ছে যে, আজকে এমন একটা সরকার, যে আমার সমস্যাগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। সেই শক্তি তার নেই, সেই বার্গেনিং ক্যাপাবিলিটি তার নেই। কারণ সে তাদের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এটা হচ্ছে মূল কথা, এটা বাস্তবতা।

“এই বিষয়গুলো যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, সরকার যতদিন থাকবে ততই বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে, একে একে নষ্ট হবে এবং বাংলাদেশ নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর গত নয় বছরে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরসহ বেশ কিছু অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান হলেও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ঝুলে আছে।

বিএনপি মহাসচিব ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়ার বিষয়ে বলেন, “এটা অভিন্ন নদী নয়। সেই ফেনী নদীর পানি নিয়ে যাচ্ছে অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, খাওয়ার পানি চাইলে পানি দেব না?

“ভালো কথা পানি দেবেন। তা আমার যে লক্ষ লক্ষ মানুষ তিস্তার অববাহিকাতে আজকে পুরোপুরিভাবে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে, তাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, জীবন-জীবিকা ধবংস হয়ে যাচ্ছে- সে বিষয়ে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) একটি কথাও বলবেন না?”

“সীমান্তে আমার লোকদের গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে-আপনারা বলছেন যে, এটা কমে এসছে। আমরা তো কমতে দেখছি না,” বলেন ফখরুল।

ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলো সম্পূর্ণ প্রকাশের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা এমন একটা সংসদ যে, চুক্তিগুলো নিয়েও একটা আলোচনা হয়নি। আমাদের সংবিধানে বলা আছে, যে কোনো চুক্তি সংসদে উপস্থাপন করতে হবে। সেখানে আলোচনা করতে হবে এবং সেটাকে রেটিফাই করতে হবে সংসদে। সেটা কখনোই করা হয় না।”

বিদেশে নারী শ্রমিকদের নির্যাতন প্রসঙ্গে

মির্জা ফখরুল বলেন, “এই যে সৌদি আরব থেকে আমাদের মহিলা ও নারী শ্রমিকরা যারা ফিরে আসছেন তার মধ্যে ৫৩ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে যে, আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, এটা স্বাভাবিক ব্যাপার, সংখ্যা কম।

“তার আগে ভারতের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে উনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন যে, আমাদের সম্পর্ক এমন সুন্দর জায়গায় গেছে … আমি সেটা বলতে চাই না।”

সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশের অর্থনীতির অবস্থা একদম ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। খুব বড়াই করে তারা (সরকার) বলছে যে বাংলাদেশ রোল মডেল। সেই রোল মডেল এমন হয়েছে যে, শুধু ঋণের উপর তাদেরকে টিকে থাকতে হচ্ছে। সমস্ত ব্যাংক ফোকলা হয়ে গেছে।

“অর্থনীতিবিদরা অনেকে বলেই ফেলছেন যে, অর্থনীতির ভবিষ্যত কিন্তু খারাপ। আজকের পত্রিকাতে দেখবেন, গার্মেন্টসের রপ্তানি বহু কমে গেছে। বহু গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ম্যানুফ্যাকচারড ইন্ডাষ্ট্রিজ আজকে বাংলাদেশে হচ্ছে না। কৃষকরা ধানের দাম পায় না। তাহলে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থাকবে কী করে?”

এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকার পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এই সরকারকে সরাতে হবে। সমস্ত দলমত নির্বিশেষে সকলকে এক করে এই যে দানবের মতো বসে আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে, তাকে সরাতে হবে। এই নির্বাচন করেছে তারা ডাকাতির নির্বাচন, এই নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচন হবে।”

সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে সবাইকে নেমে পড়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

হোটেল পূর্বাণীতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ(এ্যাব) এর উদ্যোগে ‘ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার চুক্তি : বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিপর্য্য়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ফখরুল।

এতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিএনপি সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি কে মোস্তাফিজুর রহমান, সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী, এগ্রিচালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, এ্যাবের আবদুস সালাম, আশরাফ উদ্দিন বকুল, গোলাম মাওলা, একেএম জহিরুল ইসলাম, সাহাদাত হোসেন বিপ্লব।