অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়ে আ. লীগ এখন উল্টো স্রোতে: মওদুদ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অন্য দল-মতের লোকজনের অনুপ্রবেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেওয়া দলটি এখন ‘উল্টো স্রোতে চলছে’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 02:47 PM
Updated : 12 Nov 2019, 02:47 PM

মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “আমি মনে করি যে, বিএনপিতে যত মুক্তিযোদ্ধা আছে আওয়ামী লীগে তত মুক্তিযোদ্ধা এখন নাই। এখন তারা (আওয়ামী লীগ) নিজেরাই বলছেন যে, তাদের দল অনুপ্রবেশকারীতে ভরে গেছে। অর্থাৎ তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়, অনুপ্রবেশকারী।

“তারাই (আওয়ামী লীগ) যদি তাই বলে, নিজেরাই যদি এটা স্বীকার করে তাহলে ধরে নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগ এখন আর স্বাধীনতার প্রতিনিধিত্ব করে না। বরং সম্পূর্ণ উল্টো যে মুক্তিযুদ্ধের জন্য আমরা সংগ্রাম করেছি সেটাকে সম্পূর্ণভাবে ভুলুণ্ঠিত করে দিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত মুখে সরকার এখন নিজেদের পরিচালনা করছে।”

মওদুদ আহমদ বলেন, “স্বাধীনতার চেতনা যারা চেষ্টা করেছিলেন যে, একচেটিয়া তারা নেবেন, কিন্তু দেশের মানুষের কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এই স্বাধীনতার চেতনার নতুন সংজ্ঞা তারা দিয়েছেন। সেই সংজ্ঞাটা হল- স্বাধীনতার চেতনা মানে একদলীয় শাসন, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে হল ‘ভোট চুরি’ করে ক্ষমতা দখল করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা, স্বাধীনতার চেতনার মানে হল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকতে পারবে না, আইনের শাসন থাকতে পারবে না এবং আমাদের গণমাধ্যমেরও স্বাধীনতা থাকতে পারবে না।

“এই হলো তাদের (আওয়ামী লীগ) নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী স্বাধীনতার চেতনা, তারাই এই চেতনার কথা বার বার করে বলে।”

‘সরকারে অস্বস্তি অস্থিরতা’

মওদুদ আহমদ বলেন, “দেশে কোনো রাজনীতি নাই, বিরোধী দলও নাই। কিন্তু সরকারের মধ্যে একটা বিরাট অস্বস্তি দেখতে পাচ্ছি, বিরাট রকমের একটি অস্থিরতা আমরা লক্ষ করছি। এর কারণ হল, তাদের দুঃশাসন-অপশাসন-দুর্নীতি-অত্যাচার-নিপীড়ন-নির্যাতন এমন একটি পর্যায়ে চলে গেছে যে, আজকে তাদের অপকর্মের ভারেই তাদের পতন ঘটবে।

“আমরা নাই মাঠে, আমাদের সভা করতে দেওয়া হয় না। তারপরেও এত অস্থিরতা কেন?”

নেতাকর্মীদের মনোবল না হারানোর পরামর্শ দিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, “আন্দোলন অনেক রকমের হতে পারে। আন্দোলন যে একেবারে রাস্তায় গিয়ে রাজপথে গিয়ে আন্দোলন হবে এমন কোনো কথা নেই। গতানুগতিকভাবে ঐতিহ্যগতভাবে সেটা সত্য। কিন্তু তারপরেও এমন ঘটনা হতে পারে যে, দেশের মানুষ নিজেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে যাবে।

“তখন তাদেরকে প্রতিরোধ করা সরকারের পক্ষে সম্ভবপর হবে না।”

‘ওই ভিসির কি এত আকর্ষণ?’

মওদুদ আহমদ বলেন, “কী করে এটা সম্ভবপর হয়? একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বা কোনো রাজনীতিবিদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলা আমরা কখনো কোনো দিন শুনি নাই। কেন, কী এত আকর্ষণ এই ভাইস চ্যান্সেলরের প্রতি? দেশের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কেন?”

“এরা তো আদর্শ পুরুষ হওয়ার কথা। এদের সম্মান করার কথা শিক্ষার্থীদের। তারা সম্মান করেন না, কারণ তারা সম্মান রক্ষা করতে পারেন না। তারা (ভাইস চ্যান্সেলররা) সব দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছে।”

খালেদা জিয়া ‘আইনি প্রক্রিয়ায় নয়, আন্দোলনের মাধ্যমে’ মুক্তি পাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মওদুদ আহমদ।

জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপির শওকত মাহমুদ, ফজলুর রহমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিরিন সলুতানা, শামীমুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।