খালেদার মেডিকেল রিপোর্ট প্রকাশের দাবি ফখরুলের

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অবস্থা নিয়ে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2019, 01:45 PM
Updated : 12 Nov 2019, 01:45 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশে বক্তব্যে এই দাবি জানান ফখরুল।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ হলেও সে তথ্য প্রকাশ না করে সরকারের কথায় বিএসএমএমএমইউ কর্তৃপক্ষ ‘মিথ্যা’ তথ্য দিচ্ছে।

দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদাকে চিকিৎসার জন্য গত এপ্রিল মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে নেওয়া হয়, তারপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।

৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়া কারাগারে গুরুতর অসুস্থ বলে বিএনপি নেতাদের দাবি করে আসার মধ্যে গত  ২৮ অক্টোবর বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ রয়েছে এবং ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি’ হয়েছে।

মঙ্গলবারের সমাবেশে ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এখানে আমাদের চিকিৎসক মহোদয়রা আছেন; তারা জানেন যে, কিছুদিন যাবত তার অঙ্গ-প্রত্যক্ষগুলো পঙ্গু হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।

“তিনি নিজের হাতে ধরে কিছু খেতেও পারেন না, তাকে খাইয়ে দিতে হয়। তিনি হুইল চেয়ার ছাড়া চলতে পারেন না। এমনকি বিছানা থেকে তাকে দুজন সাহায্য করে উপরে তুলতে হয়।”

খালেদার শারীরিক অবস্থা নিয়ে ‘মিথ্যা’ তথ্য দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সরকারের যে মদদপুষ্ট হাসপাতাল, সেই হাসপাতালের পরিচালক সাহেব বলেন যে, তিনি সুস্থ আছেন; তার কোনো অসুবিধা নেই।

“এই যে মিথ্যাচার করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটা মিথ্যা ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে এজন্য তার (পরিচালক) বিচার হওয়া উচিৎ।”

খালেদার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি জানিয়ে ফখরুল বলেন, “মেডিকেল বোর্ড যে রিপোর্ট দিয়েছে, সেই রিপোর্ট পর্যন্ত  প্রকাশ করা হচ্ছে না।

“আমরা এই সভা থেকে স্পষ্টভাবে দাবি জানাতে চাই, অবিলম্বে তার সঠিক স্বাস্থ্যের অবস্থা প্রকাশ করা হোক, এটা তাদের দায়িত্ব। জনগণ তা জানতে চায়।”

‘মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা বাংলাদেশ কেন করেনি’

রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনায় জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি বাংলাদেশ কেন করেনি, সরকারের কাছে সেই প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “আজকে দেশে ১০ লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। মিয়ানমার তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়েছে এথনিক ক্লিংজিং করার জন্যে; রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তারা (মিয়ানমার) নির্মূল করে দিতে চায়। সরকার সেভাবে জোরালোভাবে কোনো প্রতিবাদ করতে পারে নাই।

“আজকে দেখা যাচ্ছে যে, গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করেছে। অথচ আমাদের সরকার সেভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।”

গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে আইসিসিভুক্ত দেশ গাম্বিয়া সোমবার জাতিসংঘের অধীন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা করেছে।

এই মামলায় গাম্বিয়ার বাদী হওয়ার ব্যাখ্যায় তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেছেন, মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির সিদ্ধান্তে গাম্বিয়া এই মামলা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলোও জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানান ফখরুল।

রেল দুর্ঘটনা ‘সরকারের ব্যর্থতায়’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রেল দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির জন্যও সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল।

তিনি বলেন, “প্রতিদিন দেখবেন সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে, অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। ব্যর্থ হয়ে গেছে এই সরকার। কোনো কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।”

বাজার নিয়ন্ত্রণেও সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

“জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি। পেঁয়াজের কথা আপনারা সবাই জানেন; শুধু পেঁয়াজ নয়, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। অথচ গ্রামে যান, কৃষকরা বলবে যে, আমরা ধানের দাম পাই না। অথচ চাল কিন্তু ৫০-৬০ টাকার নিচে নাই।”

সরকারের চলমান ‘শুদ্ধি’ অভিযান নিয়ে তিনি বলেন, “কীসের শুদ্ধি? তারা তাদের ছোটখাটো ‍চুটোপুঁটিদের ধরে নিয়ে বলছে যে, অপরাধীদেরকে ধরা হচ্ছে।

“আজকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যায় ব্যাংকের মাধ্যমে, শেয়ার মার্কেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিয়ে যায়, একটা বালিশ কিনতে নেয় ২৫ হাজার টাকা, পর্দায় লাগে ২৭ লাখ টাকা। এভাবে তারা সমস্ত জায়গায় লুট করছে, লুট করে নিয়ে যাচ্ছে- কোনো জবাবদিহিতা নেই।”

‘মিথ্যা’ মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল।

“মিথ্যা মামলায় এখন পর্যন্ত আসামির সংখ্যা ২৬ লাখের উপরে, মামলার সংখ্যা এক লাখের উপরে। ভিন্নমত পোষণকারী রাজনৈতিক নেতা, ছাত্রনেতা, শ্রমিকনেতা, যুবনেতাদের প্রায় পাঁচশর ওপরে নেতাকে গুম করে ফেলা হয়েছে।”

পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন পরিচালনায় এই সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রুহুল আমিন গাজী, ফজলুর রহমান, আব্দুল কুদ্দুস, এম আবদুল্লাহ, এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শামসুল আলম, রিয়াজুল ইসলাম রিজু,শামীমুর রহমান শামীম, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।