দলের নেতাদের কঠোর সমালোচনায় বিএনপির হাফিজউদ্দিন

বিপদের সময়ে খোঁজ নেওয়া ও আন্দোলন তৈরিতে ‘ব্যর্থতার’ জন্য বিএনপির নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2019, 06:22 PM
Updated : 23 Oct 2019, 06:30 PM

বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে তিনি বলেছেন, বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলন তৈরির সুযোগ থাকলেও বিএনপি নেতারা তা করতে পারেননি।

এরপর ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “তিনবার জেলে গিয়েছি। প্রত্যেকবার রাজপথ থেকে গিয়েছি, আমারে বাসার থেকে ধরে নাই কখনও। একটা লোক ফোন করে খবর নেয় নাই। এবার একমাত্র রিজভী (রুহুল কবির রিজভী) ফোন করে খবর নিয়েছিল, আমার পরিবারের সে খবর নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ২৮ বছর এই দল করি। কোনো সহমর্মিতা নাই।”

কেন এই অবস্থা হল দলের- প্রশ্ন রেখে নিজেই জবাব দেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজউদ্দিন আহমেদ: “কর্মীরা অনেক সাহসী, তারা কত ত্যাগ স্বীকার করছে গ্রামে-গঞ্জে। আমার একটা ছোট উপজেলায় ৪০০ লোককে রাম-দা দিয়ে কুপিয়েছে। এবারের নির্বাচনেরও সময়ে আমি ঘর থেকে বেরোতে পারি নাই। আমি ছয়বারের এমপি, আমার বাবা এমপি। আমি ঘর থেকে বেরোতে পারি নাই, নিজের ভোট দিতে পারি না। বাংলাদেশকে এই অবস্থায় তারা নিয়ে গেছে।

“বিএনপিকে আরও সাহসী হতে হবে। কর্মীরা সাহসী আছে, নেতৃবৃন্দ দুর্বল। এদের কেউ কেউ এত পয়সা বানিয়েছে যে, রাজপথে রোদ লাগাতে ইচ্ছা করে না। আমরা তো বানাই নাই। ছয়বার এমপি হয়েছি আমার তো বাড়ি নাই, বাবার দেওয়া বাড়িতে থাকি, আমার বিরুদ্ধে তো কোনো দুর্নীতির মামলা নাই।”

সম্প্রতি সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি উল্লেখ করে হাফিজউদ্দিন বলেন, “আমাকে ভুলে ধরেছে এয়ারপোর্টে। আমি বলেছি, ভাই আমি বিএনপির কোনো গুরুত্বপূর্ণ নেতা না, আমি কিছুই না বিএনপির। আমারে কেন ধরছেন আপনারা? বলেছে যে, আপনাকে ই-মেইল দিয়েছে একজন অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। আমার সাতশ’র উপরে রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার আছে আমাকে ই-মেইল দেয়, তারা আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড। আমার অপরাধটা কী? আমাকে এত গুরুত্ব দিয়েন না, আমি গুরুত্বপূর্ণ কেউ না। এই যে ধরে টরে নেশন ওয়াইড পাবলিসিটি দিলেন, আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।

“এখন আমার ৭৫ বছর বয়স, আর কত? এই মুক্তিযোদ্ধারা ডাকলে আমি আসি, অন্য কোথাও যাইও না। এখানে সব বীর মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী এই বয়সে প্রতিদিন ডায়ালাইসিস করে আসেন। মান্না সময়ের সাহসী সন্তান, একলা পড়ে গেছে কী করবে? সবশেষে এটাই বলতে চাই, এই সরকার দুর্বল সরকার। আপনারা মাঠে নামেন, ইনশাল্লাহ এই সরকার বিদায় হয়ে যাবে।”

গ্রেপ্তারের পর দিন হাফিজ উদ্দিনের মুক্তি পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “তাকে দেখে আমি স্বাগতম, স্বাগতম বললাম। যেভাবে জেল থেকে বেরিয়েছেন তিনি, আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায়নি। বিএনপির আর কোনো নেতা এ রকম বেরোতে পেরেছেন? আজকে সন্ধ্যায় ধরেছে, কত বড় মামলা! চব্বিশ ঘণ্টা যেতে পারেনি ছেড়ে দিতে হয়েছে। কেন?

“তার মানে এই সরকারের দুর্বল জায়গা ‘প্রাণভোমরার’ কিছু কিছু খবর, কিছু কিছু জায়গা আমাদেরও চেনা আছে। আমরা জানি কোথায় কোথায় ধরলে হয়ত সরকার বিপদে পড়তে পারেন। না হলে…। তার মানে দুর্বল জায়গা সরকারেরও আছে যেখানে হাত দিলে হাত পুড়ে যেতে পারে। সরকারেরও হাত পুড়ে, সরকারেরও মাথা নত হয় এবং আমি বলি শেষ পর্যন্ত সরকারের পায়ের নিচের চেয়ারও সরে যায় সেই ইতিহাসও আমরা দেখেছি।”

ভোলার বোরহানউদ্দিনে এক হিন্দু তরুণের ফেইসবুক আইডি হ্যাক করে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট ছড়িয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর ভূমিকা দেখছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

তিনি বলেন, “আমি বহুবার বলেছি, এসব জাতীয় ঘটনা ঘটানো হয়। কারা ঘটায়? ভারতের ‘র’। আপনারা যখন প্রশ্ন করতে শুরু করলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেলেন কী পেলেন, আর কী দিয়ে আসলেন, কোথায় কোথায় স্বাক্ষর করে আসলেন-এই আলোচনাটা যখন উত্তপ্ত হচ্ছিল ঠিক ওই মুহূর্তে আবরার ফাহাদ খুন হল, তাকে হত্যা করা হল।

“তারপরেই হঠাৎ ভোলার ঘটনা। এসব জিনিসটা ‘র’-এর একটা স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউর, এটেনশন ডাইভারশন বলে তারা। জনগণ প্রশ্ন করছে, প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করছে, জনগণ খুশি হচ্ছে না- তখনই জনদৃষ্টিকে সরাতে এই জাতীয় ঘটনা ঘটায়।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি, আবরার ফাহাদ হত্যার বিচার ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই আলোচনা সভা হয়।

সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মুক্তিযদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।