১৪ দলের গোলটেবিলে অনুপস্থিত মেনন

একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে এক মন্তব্যের জন্য জোটে সমালোচনার মুখে থাকা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ছাড়াই হল ১৪ দলের গোলটেবিল বৈঠক।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2019, 12:07 PM
Updated : 22 Oct 2019, 12:07 PM

মঙ্গলবার ঢাকায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ-ভারত সমঝোতা স্মারক’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক হয়।

এই বৈঠকে অনুপস্থিত থাকার জন্য দলের আসন্ন কংগ্রেস নিয়ে ব্যস্ততাকে কারণ দেখিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মেনন।

অন্যদিকে ১৪ দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মেননের বক্তব্য নিয়ে আলোচনায় বসবে জোট।

দুই যুগ ধরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে মেননের ওয়ার্কার্স পার্টি। জোটের হয়ে শেখ হাসিনার সরকারে মন্ত্রীও হয়েছিলেন মেনন, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও ঢাকার একটি আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন তিনি।

গত শনিবার বরিশালে দলের এক অনুষ্ঠানে একাদশ সংসদ নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মেনন। ওই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে দাবি করেন তিনি, যে অভিযোগ বিরোধী দলগুলো করে আসছিল।

ওই বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনার মধ্যে মেনন এক বিবৃতিতে বলেন, তার বক্তব্য খণ্ডিতভাবে প্রচার হওয়ায় ১৪ দলে ভুল বার্তা যাচ্ছে।

তারপরও আওয়ামী লীগের নেতারা মেননের কড়া সমালোচনা করে চলছেন। র‌্যাবের সাম্প্রতিক অভিযানে ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো পাওয়ার কথা তুলছেন তারা, যে ক্লাবে চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ওই এলাকার সংসদ সদস্য মেনন। এবার মন্ত্রিত্ব না পাওয়ার হতাশা থেকেও মেননের এই ধরনের বক্তব্য আসতে পারে বলেও মন্তব্য এসেছে।

এই পরিস্থিতিতে মেননকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের গোলটেবিল বৈঠকে আসতে মানা করা হয় বলেও গণমাধ্যমে খবর এসেছে।

মঙ্গলবার ওই গোলটেবিলে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে মেনন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দলের জাতীয় কংগ্রেস সামনে। এটা নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত। আজকে যেতে পারব না আমার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের কারণে, এটি ১৪ দলের মুখপাত্র নাসিম ভাইকে আমি জানিয়েছি।”

এই বৈঠকের দিনই ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস দল ছেড়েছেন। দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আদর্শচ্যুতির অভিযোগও করেছেন তিনি।

নিজে না গেলেও দলের প্রতিনিধি পাঠানোর বিষয়টি জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, “আমার দলের সাধারণ সম্পাদক গিয়েছেন। একজন পলিটব্যুরোর সদস্য গিয়েছেন। আজকের প্রোগ্রামটি মূলত ছিল গোলটেবিল বৈঠক। তাতে আমার না গেলে সমস্যার কী আছে?”

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এই গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখেন।

জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারি, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম, মুহাম্মদ ফারুক খান, কামরুল ইসলাম বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

মেননের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ১৪ দলের মুখপাত্র নাসিম বলেন, “তার পার্টির সেক্রেটারি এসেছেন। তিনি কেন আসেননি, তা আমি বলতে পারব না।”

নির্বাচন নিয়ে মেননের বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “১৪ দল কোনো ব্যক্তির নয়, এটা জোট। তার বক্তব্যের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

১৪ দলের এই গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে নানা অপপ্রচারের অভিযোগ তোলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।

নাসিম বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের স্বর্ণ অধ্যায় চলছে এখন। একটি মহল এখনও এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছে। যারা এ বন্ধুত্বকে বাঁকা চোখে দেখছেন, তারা কোনো কিছুই সোজা চোখে দেখেন না।

“বাংলাদেশে এখন গুজব আর অপপ্রচার চলছে। এসব গুজব ও অপ্রপ্রচারের জবাব দিতে হবে তথ্য দিয়ে।”

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, “একটি মহল স্বাধীনতার পর জাতির স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে, দেশের স্বার্থ বিলিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে বলে জিগির তুলে আসছে। কিন্তু তারা বারবার ক্ষমতায় এসেছে, কিন্তু কোনো চুক্তিই বাতিল করেনি।

“তারা পাকিস্তানের চশমা দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে দেখছে। দেশ লাভবান হয়েছে, অর্থনৈতিক সুবিধা বেড়েছে। পাকিস্তানের চশমা দিয়ে দেখলে এসব চোখে পড়বে না।”

১৪ দলের গোলটেবিল বৈঠকে জোটের নেতারা

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এ দেশে আশ্রয় দিয়ে, অস্ত্রের ট্রেনিং দিয়ে, তাদের জন্য দশ ট্রাক অস্ত্র এনে ভারতের কাছে মাফ চেয়েছে।”

আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল বলেন, “একাত্তর সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম, তাদের বিরুদ্ধে এখনও যুদ্ধ করতে হচ্ছে। আগে অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে, এখন তাদের গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হচ্ছে।”

ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বাদশা বলেন, “বাংলাদেশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি ভারতের মতো প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পেতেই পারেন।

“বিএনপি বলছে, বঙ্গোপসাগারে রাডার স্থাপনের মাধ্যমে চীনের উপর নজরদারি করবে ভারত। কিন্তু এ রাডারের মালিকানা বাংলাদেশের, যা দিয়ে আমরা সমুদ্রসীমার উপরে কঠোর নজরদারি রাখতে পারব।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম মাহবুব গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

আলোচনায় অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিরোধী মহলের কাছে ভারত বিরোধিতা তুরুপের তাস। তারাই ক্ষমতায় থাকলে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে। সুতরাং তাদের এসব বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই।”