বিচারহীনতার কারণেই জবাবদিহিতা নেই: মওদুদ

আওয়ামী লীগ সরকার উন্নয়নের নয়, ‘একদলীয় শাসনের রোল মডেল’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2019, 04:06 PM
Updated : 19 Oct 2019, 06:28 PM

শনিবার বিকালে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি বলেন, “এই সরকার বলে তারা উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা বলতে চাই, গণতন্ত্রহীনতার রোল মডেল বাংলাদেশ, বিচারহীনতার রোল মডেল বাংলাদেশ, একদলীয় শাসনের রোল মডেল হলো বাংলাদেশ, ভোটের অধিকার হরণ করার রোল মডেল বাংলাদেশ, ভোট চুরির রোল মডেল বাংলাদেশ।

“বিনা ভোটের সরকার গঠন করার যে মডেল এটা হল আমাদের বাংলাদেশ। পৃথিবীর কোথাও এগুলো পাবেন না যে এরকম একটা রোল মডেল বাংলাদেশে সৃষ্টি করেছে।”

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের উদ্যোগে ‘আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শহীদ আবরার ফাহাদ এবং সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে’ শীর্ষক এই সেমিনার হয়।

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে কথা উল্লেখ করে মওদুদ আহমদ বলেন, “একটার পর একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, সরকারের মুখে যতটুকু বলা দরকার বলছে, কিন্তু তারপর কিছুই করে না। যেমন অধিকার মানবাধিকার সংগঠনের একটা পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে, গতবছরে শিশু ধর্ষণ ৬৬৬৭টি। এটা একটা গবেষণার বিষয়।

“আমি মনে করি দেশে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, সেই কারণেই হচ্ছে। কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। মানুষ মনে করে অপরাধ করলে আমি পার পেয়ে যাব।”

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আবরার হত্যার ঘটনার আগে আমি জানতাম না, বাংলাদেশের প্রত্যেকটা হলে টর্চার সেল আছে। বুয়েটে ১০টা টর্চার সেল আছে। এসব টর্চার সেলে মূল কাজটাই হল ভিন্নমতালম্বীদের শাস্তি দেওয়া। টর্চার সেলে বিভিন্নরকমের সরঞ্জামাদি আছে, সেসব দিয়ে তারা নির্যাতন করে। পত্রিকায় পেলাম, সারা বাংলাদেশে ১৪০টি টর্চার সেল আছে শুধু ছাত্রলীগের। এগুলো কি সরকার জানত না?

“এতো দিন ধরে এসব টর্চার সেল ও ক্যাসিনো চলছে, সরকার কী জানত না? অর্থমন্ত্রী নিজে বলেছেন, এটা সরকার জানে না। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। প্রশাসন জানে, পুলিশ জানে, যারা যারা গোয়েন্দা বিভাগের কর্মচারী তারা জানেন, পলিটিশিয়ানরা জানেন, এমপিরা জানেন, মন্ত্রীরা জানেন, প্রত্যেকে এটার শেয়ার নিয়েছে। যার জন্য তারা চুপচাপ ছিল, বসে ছিল। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন ব্যাংকক চলে গেছে।”

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সদস্য সচিব দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী।

প্রবন্ধে সারাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদসহ সারাদেশে গুম-খুন-নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্রসহ দেশের মানবাধিকার ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমাদেরকে জনগণের কাছে যেতে হবে, জনগণ আমাদের কাছে আসবে না। জনগণের কাছে যদি যাই তাহলে জনগণ আমাদের সাথে আসবে।

“আমাদের দরকার জনগণকে রাজপথে নিয়ে আসা, আমাদের দরকার সেই কর্মসূচি দেওয়া, আমাদের দরকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া, সেভাবে যেন সবার সাথে মিলতে পারি।”

নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সভাপতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমানের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা আমিনুল হক ও ফাহিমা মুন্নীর পরিচালনায় সেমিনারে খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নাল আবেদীন, নিতাই রায় চৌধুরী, শিক্ষাবিদ আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।