গত নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি: মেনন

আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ভোট করে সংসদে যাওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি।

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2019, 03:16 PM
Updated : 20 Oct 2019, 10:40 AM

শনিবার বরিশালে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমিও নির্বাচিত হয়েছি। তারপরও আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ওই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। এমনকি পরবর্তীতে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি দেশের মানুষ।”

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা হিসেবে ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন মেনন। বিগত সরকারে প্রথমে বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোট বর্জন করা বিএনপি তখন থেকেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্র’ হরণের অভিযোগ করে এলেও এতদিন চুপ ছিলেন মেনন।

এরপর গত ৩০ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগ তুললেও বামপন্থি মেননের মুখে এ বিষয়ে কিছু শোনা যায়নি।

ওই নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয় মেয়াদে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের নয় মাস পর এ নিয়ে মুখ খুললেন মেনন, এবার যার মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হয়নি।

বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “আপনি-আমি মিলে যে ভোটের জন্য লড়াই করেছি, আজিজ কমিশনকে ঘেরাও করেছি, আমরা এক কোটি ১০ লাখ ভুয়া ভোটার তালিকা ছিঁড়ে ফেলে নির্বাচন বর্জন করেছি মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরও। আজকে কেন ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জাতীয় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারছে না?”

রাশেদ খান মেনন বলেন, “উন্নয়ন মানে গণতন্ত্র হরণ নয়। উন্নয়ন মানে ভিন্ন মতের সংকোচন নয়। উন্নয়ন মানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ নয়। উন্নয়ন মানে গণতন্ত্রের স্পেস কমিয়ে দেওয়া নয়।”

সরকারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে লুণ্ঠন ও দুর্নীতি ‘মহামারি আকার ধারণ করেছে’ বলে মন্তব্য করেন সাবেক মন্ত্রী মেনন।

তিনি বলেন, “একদিকে সরকার উন্নয়ন করছে, অন্যদিকে সরকারের আশপাশের লোকজন দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। এতে করে সরকারের উন্নয়ন ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।

“দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না এবং প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে দুর্নীতিবাজেরা ঘোরাফেরা করছে।”

বাংলাদেশ থেকে এ পর্যন্ত নয় লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে অভিযোগ করে মেনন বলেন, “সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বীকার করেছেন যে, ৫ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।

“ক্যাসিনো পরিচালনাকারীরা শত শত কোটি টাকা কামাই করে ও খেলাপি ঋণের টাকা বিদেশে পাঠিয়ে সেকেন্ড হোম বানিয়েছে। দেশের কোটি কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে।”

ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি।

দলীয় সভায় বক্তব্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা কামাল হোসেনেরও সমালোচনা করেন রাশেদ খান মেনন।

“তিনি বলেছিলেন বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘর করবেন না, কিন্তু এখন তিনি বিএনপি-জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তুলেছেন। তিনি এর আগেও এমনটা করেছেন, কিন্তু আন্দোলন শুরু করে তিনি বিদেশে চলে গিয়েছিলেন।”

নগরীর অশ্বিনী কুমার টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বরিশালের অপ্রাপ্তি নিয়েও কথা বলেন ওই এলাকার সন্তান রাশেদ খান মেনন।

দেশের অন্যসব জেলা থেকে বরিশাল অবহেলিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এখানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে আছে। উপযুক্ত কর্মকর্তা না থাকায় আজ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।”

দলের বরিশাল জেলা সভাপতি নজরুল হক নিলুর সভাপতিত্বে জেলা সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় পলিট ব্যুরো সদস্য আনিছুর রহমান মল্লিক।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ টিপু সুলতান, মহানগর আহ্বায়ক শান্তি দাস, কেন্দ্রীয় সদস্য বিশ্বজিৎ বাড়ৈ, টিএম শাহজাহান হাওলাদার, আবদুল মান্নান, ফায়জুল হক বালী ফারহিন, সীমা রানী শীল ও শাহিন হোসেন।

সম্মেলনের শুরুতে অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।