‘জনগণ’ সুযোগ পেলে আপনাদের পিঠের চামড়া রাখবে না: রব

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, এদেশের ‘জনগণ’ সুযোগ পেলে তাদের পিঠের চামড়া রাখবে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2019, 03:38 PM
Updated : 17 Oct 2019, 03:42 PM

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে একথা বলেন তিনি, যেখানে বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমানসহ তাদের জোটসঙ্গী বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আবরার হত্যার প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে রব বলেন, “প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হল প্রতিবাদের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের পতাকা যেমন ছিল, আবরারও প্রতিবাদের পতাকা হয়ে আমাদের কাছে থাকবে।

“আবরারের রক্ত সমস্ত জাতিকে আজ ঐক্যবদ্ধ করছে। এই রক্তে ঐক্যবদ্ধ যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে তা অব্যাহত রাখতে হবে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত। এদের পতন ঘটিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার, তাদের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে সবাইকে আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা।

তিনি বলেন, “দলমত নির্বিশেষে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমতের একটা জাতীয় সরকার গঠন করা দরকার। যেখানে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতারাই থাকবেন না, পেশাজীবীরা থাকবেন, শ্রমজীবী থাকবেন, কর্মজীবী থাকবেন, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-সাংবাদিক-কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-বৃদ্ধিজীবী-ছাত্র-শ্রমিকসহ সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

“আসুন এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং একটি জাতীয় সরকার গঠন করার জন্য আমরা দলমত নির্বিশেষ, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবরার হত্যার প্রতিবাদটাকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।”

গত রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আবরার ফাহাদের স্মরণে সভা শেষে শোক মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের বাধা পান রবসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

ওই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রব বলেন, “আমি আশা করি, এই দেশের জনগণ এই সরকারের শোক মিছিল করবে-সেটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। আপনাদের বিচার হবে, আপনাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

“আপনারা যা করছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণ সুযোগ পেলে আপনাদের পিঠের চামড়া রাখবে না। আমরা এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক তা চাই না।”

আববার হত্যার সুষ্ঠু বিচার হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন, “নিরাপদ সড়ক দাবিতে যারা আন্দোলন করেছে তাদেরকে ছাত্রলীগ দিয়ে পিটান নাই, তাদের কি বিচার করেছেন? হয় নাই। কোটা প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন হয় নাই? কোটা প্রথা মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ না দিয়ে যারা সরকারের আনুগত্য, লেজুড়বৃত্তি করে তাদেরকে নিয়োগ দিয়েছে- তাদের কি সরকার বিচার করেছেন? করেন নাই।

“আজকেও আবরার হত্যার অপরাধে যারা অপরাধী তাদের সাজা দিয়ে জেলে পুরে তাদেরকে কিছু দিন পরে বিদেশে পাঠিয়ে আপনারা দেবেন, তাদেরকে জেলখানা থেকে মুক্ত করে দেবেন। এগুলো সরকারের পরিকল্পিত এজেন্ডা বলে আমরা মনে করি।”

‘ভিসিকে নিয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলা হবে না’

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “গতকাল বুয়েটে ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শপথ নিয়েছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু আমি আরও বেশি অভিনন্দন জানাই ওখানকার শিক্ষক সমিতিকে। কারণ তারা এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। বলেছেন, ওই ভিসির (অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম) সাথে শপথ নেবার কোনো যুক্তি নাই।

“ওই ভিসির কারণে আবরার মারা গেছে। ওই রাত্রে যদি ভিসি আসতেন, বলতেন আমি উপর-নিচ চিনি না, কোনো সরকার চিনি না, আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, আমি ছাত্রদের চিনি, এই ছাত্র আমার সন্তান। তাকে রক্ষা করবার জন্য আমি এই দাঁড়ালাম। এই ঘরের দরকার লাগলে আমি একা দরজা ভেঙে ফেলব, ওই ছাত্রকে বের করব। সে তা করেনি।

“ওই পাষণ্ড ভিসি তাকে খবর দেবার পর ঘর থেকে বেরোয়নি, মারা যাওয়ার পর লাশও দেখতে আসেনি তার যখন জানাজা হয়েছে সেই জানাজায়ও যায়নি। তারপরও ছাত্রলীগ-যুবলীগের পাণ্ডা নিয়ে পুলিশ লীগ, এসপি লীগের সদস্যদেরে নিয়ে তার বাড়িতে গেছে কবর জিয়ারত করতে। কত বড় প্রতারক এই ভিসি! তাকে সঙ্গে নিয়ে সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবে?”

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, “আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে আবরারের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি।

“আমরা যখন কুষ্টিয়ায় লালন সেতু পার হলাম ব্রিজের মোড়ে আমরা দেখি শত শত পুলিশ, শত শত ডিবি হকিস্টিক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদেরকে যেতে দেবেন না। কেন যেতে দেবেন না? এএসপি বললেন, আপনাদের নিরাপত্তার অভাব। আমি বললাম, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। তিনি বললেন, উপরের নির্দেশ আপনারা যেতে পারবেন না।

“তারপরের দিন দেখিলাম, মাহাবুব-উল-আলম হানিফ সাহেব আবরারের মা-বাবাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিয়ে এসেছেন। তার অর্থ আবরারের পরিবারের সাথে কাউকে কথা বলতে দেবেন না। সরকার তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে।”

‘বড় ভাইটা কে?’

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আবরার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতারা জবানবন্দিতে টেলিফোনে ও মেসেঞ্জারে ‘বড় ভাইয়ের’ সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেছেন।

“ওই বড় ভাইটা কে? নাম বলেন। পুলিশ সেটা বের করতে পারে নাই। ওই নেতারা কাদের কাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন? ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেতা কে? উনি দায় এড়াতে পারবেন? উনাকে জনগণের সামনে দাঁড়াতে হবে না, আসামির কাঠ গড়ায়? আর আপনি যদি বলেন, আমি দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। তা হলে বিচার করেন।”

আ স ম আবদুর রবের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে ডাকসুর সাবেক জিএস বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ডাকসুর সাবেক এজিএস বিএনপির নির্বাহী সদস্য নাজিমউদ্দিন আলমসহ সাবেক ছাত্রনেতারা বক্তব্য রাখেন।