প্রভুদের সন্তুষ্ট করার ইচ্ছাতেই হাফিজ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার: রিজভী

ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তারের মধ্যে যোগসূত্র আছে বলে মনে করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2019, 08:12 AM
Updated : 13 Oct 2019, 08:14 AM

নয়া পল্টনে দলের কার্যালয়ে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী (হাফিজ) পানির ন্যায্য হিস্যা ও দেশের স্বার্থের পক্ষে একজন নির্ভিক ভাষ্যকার। পানির চুক্তির চক্রান্তের নানাদিক তুলে ধরতে পারতেন সাবেক এ পানি মন্ত্রী। এ কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“দেশবিরোধী চুক্তি করে দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করার বিরুদ্ধে সোচ্চার মেজর হাফিজের কণ্ঠকে স্তব্ধ করানোর জন্যই এ গ্রেপ্তার। আমরা মনে করি, কীর্তিমান দেশপ্রেমিক এ মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করে সরকার তার প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে চাচ্ছে।”

গত ৫ অক্টোবর দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহার, বন্দর ব্যবহার ও গ্যাস বিক্রি নিয়ে এসব চুক্তি ভারতের পক্ষে গেছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।

শনিবার সন্ধ্যায় চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফেরার পর হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাফিজ উদ্দিন আহমেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

তার আগে সকালে মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল মুহাম্মদ ইসহাক মিয়ানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের পক্ষ থেকে দুজনের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২০১৮ এর ২৭/৩১/৩৫ ধারায় মামলা দায়ের করা হয় বলে পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

রিজভী বলেন, “এই গ্রেপ্তার সুপরিকল্পিত, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সুদুরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। এটি মানুষের চোখকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার অপকৌশলমাত্র। আমরা এ মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।”

বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের পর শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার পরও আন্দোলন চালু রাখা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশশ্নের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, “আবরার ফাহাদের মতো আর কোনো অসীম সম্ভাবনাময় জীবন যাতে ঝড়ে না যায় সেইজন্য বুয়েটের শিক্ষার্থীদের এই ১০ দফা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের এই ১০ দফা মানার ঘোষণা দিলেই সরকারের সব অপরাধ মাফ হয়ে যায় না।”

ভারতের সঙ্গে চুক্তি ও আবরার হত্যার প্রতিবাদে শনিবার ঢাকা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা ও গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবি জানান তিনি।

কুষ্টিয়ার এসপির অপসারণ দাবি

রিজভী বলেন, “কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তানভীর আরাফাত শহীদ আবরারের পরিবারকে নানা কায়দায় জিম্মি করে রেখেছেন, ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন, হুমকি-ধামকি দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই শহীদ আবরারের পরিবারের সদস্যদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।

“কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কেউ যাতে টু শব্দ না করতে পারে সেজন্য এসপি হানিফ সাহেবের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছেন। তার কারণে কুষ্টিয়া জেলায় এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এ মুহূর্তে কুষ্টিয়ার এসপির ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং তাকে কুষ্টিয়া থেকে অপসারণের দাবি জোর দাবি জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “কুষ্টিয়ার এসপি যেন মাহবুব-উল আলম হানিফ (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক) সাহেবের নিজস্ব কর্মচারী, আইনের লোক নন। বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়াই যেন এই এসপির একমাত্র কাজ। তিনি বিএনপির কোনো কর্মসূচি কুষ্টিয়ায় হতে দেন না।”

“আজকে পূর্বঘোষিত বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম কুষ্টিয়া যাচ্ছেন। লালনশাহ সেতুর ওপর উঠে নেতৃবৃন্দ দেখেন, শত শত পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তাদেরকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না, তাদেরকে শহীদ আবরারের পরিবারের সাথেও দেখা করতে দিচ্ছে না। এই দলদাস এসপিদের আস্কারাতে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা সারাদেশজুড়ে নির্দয় খুন, জখম, দখল, ক্যাসিনো-জুয়াতে জড়িত হয়ে পড়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমুল হক নান্নু, অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।