এই ‘ফাঁদ’ থেকে বেরোতে পারবে না সরকার: মওদুদ

চলমান ‘শুদ্ধি’ অভিযানে যুবলীগ নেতাদের অপকর্ম প্রকাশের মধ্যে বুয়েটে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের পিটুনিতে ছাত্র নিহতের ঘটনা এবং ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি নিয়ে সমালোচনায় সরকার বেকায়দায় পড়ে গেছে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2019, 03:40 PM
Updated : 12 Oct 2019, 03:44 PM

আওয়ামী লীগের সরকারের এই অবস্থাকে তিনি দেখছেন ‘ফাঁদ’ হিসেবে, সেই ‘ফাঁদ’ থেকে সরকার আর বেরোতে পারবে না বলেই তার বিশ্বাস।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ বলেন, “এই সরকার দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। তারা এমন ফাঁদে পড়েছে সেই ফাঁদ থেকে তাদের কোনো নিস্কৃতি নাই, এই ফাঁদ থেকে তারা উঠে আসতে পারবে না। আমি মনে করি, এই সরকারের পতন এখন সময়ে ব্যাপার।

“এই দেশের মানুষ কখনও এই ধরনের সরকারকে বরদাশত করতে পারে না।”

‘দেশবিরোধী চুক্তি’ বাতিল এবং বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।

সেখানে বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেন, ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ভারতের সাথে ‘জাতীয় স্বার্থ বিরোধী’ চুক্তি করেছে।

তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় ফেনী নদীর পানি সরবরাহ, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার, বঙ্গোপসাগরের উপকূল পর্যবেক্ষণে যৌথ রাডার স্থাপন, আমদানিকৃত এলজিপি রপ্তানি করা- এই চারটি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে আমরা মনে করি। এই চারটি চুক্তির একটিও বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে নয়, জাতীয় স্বার্থে নয়।”

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।

সরকারের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, “আপনাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি এবং ভারত তোষণের নীতি হিসেবে আপনারা এ সকল চুক্তি করে এসেছেন। উদ্দেশ্য একটাই, গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকার জন্যে দেশের গণতন্ত্রকে আপনারা হত্যা করেছেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ২৯ তারিখে ভোট ডাকাতি করেছেন, এই ডাকাতির সরকার আজকে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আমাদের স্বার্থ বিকিয়ে দিচ্ছেন।”

এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, “এদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের অধিকার আছে এসব চুক্তির প্রতিবাদ করার। আমরা বলতে চাই, আমরা এই প্রতিবাদ আর সমাবেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকব না।

“এদেশের জনগণ যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন করেছিল, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হতে পারে, সম্প্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদ বাংলাদেশকে গ্রাস করতে পারে। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের মানুষ বসে থাকবে না।”

ভারতের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো নিয়ে সমালোচনমুখর ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদও।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ বিক্রি করেন নাই। কিন্তু দেশের মানুষ বোকা নয়, তারা জানে আপনি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে বিক্রি করে এসেছেন ভারতে গিয়ে।

“এর পরিবর্তে আপনি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছুই আনতে পারেন নাই। এই ব্যর্থতায় এই সরকারের জন্য কালিমা হয়ে থাকবে ইতিহাসে। আজকে আন্দোলনের সময় এসেছে, আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এই সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেওয়া যেতে পারে না। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইলে জনগণ বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন সৃষ্টি করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।”

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ তুলে মওদুদ আহমদ বলেন, “আজকের খবরের কাগজে দেখলাম, এমন কোনো হল নাই, ডরমেটরি নাই বাংলাদেশে তাদের ‘টর্চার সেল’ নাই। আজকে এই আবরারের হত্যাকাণ্ড সারা দেশের মানুষকে অবাক করেছে, মর্মাহত করেছে। একজন আবরার হত্যা করে কোনো লাভ হবে না, তার মতো শত শত আবরারের জন্ম দেবে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে বসে এই সমাবেশ শুরু হয় বেলা দেড়টায়, শেষ হয় সাড়ে ৪টায়। সমাবেশে খালেদা জিয়া ও আবরার ফাহাদের ছবির পাশাপাশি ‘দেশবিরোধী চুক্তি’ বাতিলের দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা যায় নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে।

কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফকিরেরপুল মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ সড়কে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে বিকালে সমাবেশ বিরাট আকার নেই।

নয়া পল্টনের সড়কে উপর এই সমাবেশে হলেও সড়কের একপাশে একটি গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। একপাশে যান চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়।

বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদ এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে শনিবার ঢাকার নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।

সমাবেশে বক্তব্যে স্বভাবসুলভ তীর্যক মন্তব্য ছোড়েন বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, “দুই দেশের মধ্যে বিনিময়ে চুক্তি হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী একতরফা দান করে দিয়ে আসলেন। আমি অত্যন্ত গর্বিত আমার দেশের প্রধানমন্ত্রী দান করতে জানেন। আবার অত্যন্ত লজ্জিত আমি দেখলাম ভারতের বিমানবন্দরে লাল কার্পেট নাই, এক প্রতিমন্ত্রী তাকে (শেখ হাসিনা) অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন। আমি লজ্জা পেয়েছি, জাতি লজ্জা পেয়েছে, দেশ লজ্জা পেয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনা ওয়াজেদ আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গেছেন, সেখানে আমাদের ইজ্জতে লেগেছে, আমাদের মানহানি হয়েছে।

‘‘ আমি মনে করি এই ধরনের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি যদি সরকারের থাকে সেই সরকার কোনো দিন প্রতিষ্ঠা আদায় করতে পারবে না, দেওয়া ছাড়া। আপনি যা করতে যাচ্ছেন- চেষ্টা করতে পারেন। আমি মনে করি, আবরারের মতো লক্ষ-কোটি আবরার জন্ম নেবে আপনার অপকর্ম বাংলাদেশে সফল হতে দেবে না।”

বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে এবং উত্তর-দক্ষিণের দুই সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও আহসান উল্লাহর পরিচালনায় সমাবেশে বিএনপির আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, শফিউল বারী বাবু, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাদেক আহমেদ খান, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, মোরতাজুল করিম বাদরু,  হাসান জাফির তুহিন, হেলেন জেরিন খান, ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল বক্তব্য রাখেন।