চুক্তি, আবরার হত্যা: বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচি

ভারতের সঙ্গে করা ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি বাতিল এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Oct 2019, 08:42 AM
Updated : 10 Oct 2019, 01:08 PM

শনিবার ঢাকাসহ মহানগর সদরে এবং রোববার দেশের সব জেলা সদরে এই সমাবেশ হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল ও এই চুক্তির বিরোধিতার কারণে আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে আমরা আগামী শনিবার ঢাকাসহ দেশের সকল মহানগর সদরে এবং আগামী রোববার সকল জেলা সদরে জনসমাবেশ অনুষ্ঠানের কর্মসূচি ঘোষণা করছি।”

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে ‘জনগণের কাছে দায়বদ্ধ দেশপ্রেমিক সরকার’ প্রতিষ্ঠার জন্য দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “ইতিহাসের অমোঘ সত্য এই যে, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জয় অবশ্যম্ভাবী।”

গত ৫ অক্টোবর দিল্লীতে হায়দ্রারাবাদ হাউজে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

ত্রিপুরায় এলএনজি রপ্তানি, ফেনী নদী থেকে ত্রিপুরার একটি শহরে পানি সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ, ভারতকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে এসব চুক্তিতে।

এসব চুক্তি নিয়ে ফেইসবুকে মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবির সন্দেহে বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে গত রোববার রাতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় যে বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল, সংগঠনটির নিজস্ব তদন্তেও তা উঠে আসে।

‘অসম চুক্তি বাতিল চাই’

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ বলেন, তারাও নিকট প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ‘সমতাভিত্তিক সুসম্পর্ক’ চান।

“কিন্তু এই সরকার যা করছে তাতে দেয়া নেয়ার বিষয়ে নেই- আছে শুধু দেয়ার। দেশের স্বার্থ হানিকর এমন অসম চুক্তির অধিকার জনগণ এই সরকারকে দেয়নি।”

“কাজেই আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময়ে স্বাক্ষরিত সকল চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাই এবং দেশের ও দেশের স্বার্থহানিকর সকল চুক্তি বাতিল চাই।”

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “সমালোচনায় ভীত সরকার তার দলীয় লাঠিয়ালদের দিয়ে ফেইসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেওয়ার জন্য বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে খুন করেছে। কিন্তু এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড আন্দোলনের আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছে মাত্র।”

‘সচিবের বক্তব্য দেশের স্বার্থের বিপক্ষে’

ত্রিপুরার সাবরুম শহরকে ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারের সুযোগ দেওয়া নিয়ে মন্তব্যের জন্য পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্যের সমালোচনা করেন খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, এই পানি না দিলে সাবরুম শহর কারবালা হয়ে যেত। কারবালা কারোরই কাম্য নয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের তো প্রথমে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ দেখার কথা।ফারাক্কার কারণে বাংলাদেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল খরাক্রান্ত হওয়ায় লক্ষ লক্ষ মানুষের আহাজারি তাকে স্পর্শ করেনি, তিস্তার পানি ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ ও লাখো মানুষের আর্তনাদ তার কানে পৌঁছায় না।

“ফেনী নদীতে শুকনা মওসুমে পানির অভাবে চাষাবাদের ক্ষতি, মুহূরী প্রকল্প অকার্যকর হওয়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা দেখেও তিনি ও তার সরকার সাবরুমকে কারবালা হতে না দিতে যতটা উদ্যোগী, নিজের দেশের জনগণের আহাজারী, আর্তনাদ ও সর্বনাশ তাদের কাছে ততই মূল্যহীন। এটা কোনো দেশপ্রেমিক ব্যক্তি কিংবা সরকারের অবস্থান হতে পারে না।”

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানির সুযোগ দিলে কয়েকটি কোম্পানি আর ভারত লাভবান হবে, বাংলাদেশ নয়।

“তাদের (ভারত) এই সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে ঠাকুর শান্তি পুরস্কার ছাড়া আমরা কী পেলাম? এর আগেরবার ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা যা দিয়েছি তা ভারত চিরদিন মনে রাখবে। তাহলে এবার আরো এতো কিছু দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল? তিনি বলেছিলেন, দেশের স্বার্থে বিদেশিদের গ্যাস দিতে রাজি হননি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারেননি। এবার আমদানি করা ডিউটি ফ্রি এলপিজি দেওয়ার উদ্দেশ্য তাহলে কি?”

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রসঙ্গে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার সংবাদ সম্মেলনে গঙ্গা চুক্তি নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তারও সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ।

তিনি বলেন, “প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের আগে গঙ্গার পানি নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি হয়েছে ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে। এই চুক্তিতে যে গ্যারান্টি ক্লজ ছিল, তা ১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বাক্ষরিত চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হয়। যার ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

“বেগম খালেদা জিয়া তার ভারত সফরে গঙ্গার পানির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলেন- প্রধানমন্ত্রী এমন বক্তব্যও অসত্য। ওই সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ ইশতেহারে বলা হয়েছিল, সমতা ভিত্তিক দীর্ঘ মেয়াদী সমন্বিত প্রক্রিয়ায় দুই দেশের জনগণের সর্বোচ্চ স্বার্থে পানি বণ্টনের বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত হন। কোনো আলোচনা না হলে যৌথ ইশতেহারে ওই বক্তব্য থাকল কি করে?”

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে ‘বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর’ হিসেবে বর্ণনা করে মোশাররফ বলেন, “আবরার দেশের জন্য, দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য, দেশের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছে। আবরারের পুরো বক্তব্যটি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে, তাই আবরার বাংলাদেশের কণ্ঠস্বর। তার এই নির্মম মৃত্যু বৃথা যেতে পারে না, বৃথা যেতে দেওয়া হবে না।”

অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।