চুনোপুঁটিদের ধরতেও সরকারের গড়িমসি: মান্না

চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের সমালোচনা করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যাদেরকে ধরা হচ্ছে, তারা আসলে চুনোপুঁটি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Oct 2019, 09:37 AM
Updated : 7 Oct 2019, 09:37 AM

তিনি বলেছেন, বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে এসব চুনোপুঁটিদের ধরতেও সরকার গড়িমসি করছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে এ কথা বলেন।

গত মাসের মাঝামাঝি বিভিন্ন ক্রীড়া ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে ক্যাসিনো চালানোর হদিস মেলার পর ঢাকা মহানগর যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমানসহ কয়েক নেতা আত্মগোপনে চলে যান।  

রোববার ভোরে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সম্রাট ও আরমানকে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “এটার (সম্রাটের গ্রেপ্তার) মধ্যে একটা যাদু আছে। একেবারে ওইদিন সকাল বেলাই তাকে পেয়ে গেল। তাও আবার কত দূরে।”

নিজের বক্তব্য খণ্ডন করে তিনি বলেন, “কী রকম যাদু? অন্য যাদেরকে ধরেছে সবাইকে রিমান্ডে নিয়ে গেছে।  এখানে (সম্রাটের ক্ষেত্রে) রিমান্ড আছে? নাই। এটাও একটা যাদু মনে করেন। তাকে সরাসরি জেলখায় পাঠানো হল. কোনো ইন্টারোগেশন দরকার নেই।

“তার বিরুদ্ধে মামলা কি দিয়েছে দেখেছেন। মামলা দেবার জন্য অফিসে নিয়ে গেছে। কারণ সেখানে বোধহয় বাঘের চামড়া, হরিণের চামড়া, ক্যাঙ্গারুর চামড়া পেয়েছে। বণ্যপ্রাণীর ওপর নির্যাতন, এতো বড় কথা। এসব যাদু ছাড়া আর কি? মানে সরকারটাই একটা যাদুর সরকার।”

অভিযানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “মূল দুর্নীতিবাজদেরকে বাদ দিয়ে যাদেরকে ধরা হয়েছে তারা আসলে চুনোপুঁটি। এমন কি এই চুনোপুঁটিদের সর্বাগ্রে ধরতেও সরকারকে অবিশ্বাস্য গড়িমসি করতে আমরা দেখলাম।

“সাম্প্রতিক ক্যাসিনোকাণ্ডে ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি সম্রাটকে গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করছে, এমন রিপোর্ট আমরা দেখেছিলাম বেশ কয়েকদিন ধরেই। দেশের আইন এবং বিচার ব্যবস্থা কতটুকু দেউলিয়া হলে, কতটুকু সরকারি দলের আজ্ঞাবহ হলে সম্রাটকে ধরার জন্য সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করতে হয় সেটা বোঝা যায়।”

দেশে দুর্নীতির বিস্তার সম্পর্কে মান্না বলেন, “সরকার সত্যিকার অর্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের কথা যদি ভাবত, তাহলে সেটা হতো একটা চলমান প্রক্রিয়া। ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধাপে ধাপে এই অভিযান চললে বাংলাদেশ আজকে এই পর্যায়ে পৌঁছাত না।

“দুর্নীতি রোধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বরং রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থাকা মানুষগুলোর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির পরিমাণ বেড়েছে অতি দ্রুতগতিতে। ২০০৯ সালে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালে দুর্নীতির ধারণা সূচকে ১৩৯ নম্বর অবস্থানে ছিল, সেই বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪৯ এ।”

চলমান অভিযান নিয়ে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন নাগরিক ঐক্যের নেতা।

“চলমান তথাকথিত শুদ্ধি অভিযান নিয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নিউ ইয়র্কে তিনি বলেন, ‘ওয়ান ইলেভেন যাতে আর না হয়, সেজন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। ওয়ান ইলেভেন আর লাগবে না। অন্যায় হলে আমরাই ব্যবস্থা নেব’।

“আমরা এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাই। এতোকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা শুনেছি, অসাংবিধানিক ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক কঠিন পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে বাংলাদেশে এই ধরনের পরিস্থিতি আর কখনও হবে না। এখন কি তিনি তার অবস্থান পাল্টেছেন? কিংবা সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতি কি দেশে তৈরি হয়েছে? এই ব্যাপারগুলো প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট করা উচিত।”

মান্না বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, যে দলটি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটের আগেই অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে গিয়েছিল, যে সরকারটি গত ২৯ ডিসেম্বর রাতে নজিরবিহীনভাবে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে, ভোট ডাকাতি করে সেই দলের হাতে এদেশে শুদ্ধি অভিযান হবে- এটা মনে করা স্রেফ আহাম্মকি। ২৯ তারিখ রাতে যে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছিল সেটির বিচার হওয়া উচিত সবার আগে।”

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, জাহের-উর রহমান, দেলোয়ার হোসেন খান, জিল্লুর রহমান চৌধুরী দীপু, মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, মোমিনুল ইসলাম প্রমুখ।