চক্র নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে: কাদের

ক্যাসিনোকাণ্ডে যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও এই অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2019, 02:38 PM
Updated : 6 Oct 2019, 04:04 PM

রোববার সন্ধ্যায় ঢাকার আইইবি মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “দুর্নীতির চক্র বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।”

যুবলীগ নেতাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অসন্তোষ প্রকাশের পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের ক্রীড়া ক্লাবে আকস্মিক অভিযান চালায় র‌্যাব।

এই অভিযানে যুবলীগের বিভিন্ন নেতার নিয়ন্ত্রণে ক্লাবগুলোতে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার প্রথম দিনেই গ্রেপ্তার করা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে।

তারপর কয়েকদিনে অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয় কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজ, ঠিকাদার জি কে শামীম ও ব্যবসায়ী সেলিম প্রধানকে।

ক্যাসিনো পরিচালনায় শুরুতে নাম এলেও পালিয়ে গিয়েছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। রোববার কুমিল্লা থেকে তাকে এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কাকরাইলের কার্যালয়ে র‌্যাবের পাঁচ ঘণ্টা অভিযান শেষে বন্যপ্রাণী আইনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দণ্ড দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কারাগারে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

সাংবাদিকদের প্রশ্নে কাদের বলেন, “আপনারা (গণমাধ্যম) যাকে গডফাদার বলছেন, তাকে তো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে, চলবে। এটা কোনো দল, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান না।

“যারা দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এটা সরকারের ইচ্ছা, এতে সরকার সংকল্পবদ্ধ, এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। যাদের যাদের আপনারা সন্দেহ করছেন, তারা তো এরেস্ট হচ্ছে। আমাদের সরকারের অভিযান শুরু হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতির চক্র ভেঙে দিতে না পারব, ততক্ষণ অভিযান চলবে।”

প্রধানমন্ত্রীরা ভারত সফরের সঙ্গে সম্রাটের গ্রেপ্তারের যে যোগসূত্রের কথা বিএনপি নেতারা বলছেন, তাকে ‘নোংরা রাজনীতি’ বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

“বিএনপি নেতারা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে চুক্তি আড়াল করতে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই উক্তি বিএনপির নেতিবাচক নোংরা রাজনীতি, এই নেতিবাচক রাজনীতির জন্য বিএনপি ক্রমেই  সঙ্কুচিত হচ্ছে, ক্রমেই তারা জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।”

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোনটা (চুক্তি) অসাংবিধানিক? এটা তথ্য প্রমাণসহ মির্জা ফখরুল সাহেব আপনাকে দেখাতে হবে, অন্ধকারে ঢিল ছুড়বেন না। আগে বলতেন দেশ বিক্রি হয়ে গেছে, এখন বলছেন সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্টেন্ডিং কোনো চুক্তি নয়। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় না থেকে এটাও আপনারা ভুলে গেছেন?”

“শেখ হাসিনা নিজের দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে কারও সাথে কোনো চুক্তি করেন না। দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই তিনি সমঝোতা ও চুক্তি করেন,” বলেন কাদের।

তিনি বলেন, “ভারতের সেভেন সিস্টারে ট্রাকে করে আমাদের এখান থেকে এলপিজি যাবে, সেখানে প্রচুর আর্থিক সুবিধা আমরা পাব। ভারত যদি আজ আমাদের মোংলা বন্দর ব্যবহার করে, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে, এটা বিনা পয়সায় ব্যবহার করে না। আমাদের আর্থিক সুবিধা দিয়েই তারা ব্যবহার করে।”

ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিও শেখ হাসিনার আমলেই হবে বলে আশা দেখান কাদের।

রংপুরের উপনির্বাচনে বিএনপির হারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ তো অংশ নেয়নি। এত জনপ্রিয় দল! ভোটার উপস্থিতি এত কম হল!  মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব আপনি দয়া করে জবাব দেবেন কি?”

সাংবাদিকদের উপর পুলিশের হামলা ‘দুঃখজনক’

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক কাজী মোবারক হোসেনের উপর পুলিশের হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে এর জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিজে তদারক করবেন বলে জানান মন্ত্রী কাদের।

তিনি বলেন, “গতকাল রাতে সাংবাদিক মোবারকের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা দুঃখজনক। তার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। এরপর আবার এ ঘটনাটি ঘটেছে। ঘটনা শুনে আমার খারাপ লেগেছে।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি এ বিষয়টি জানেন। আমি এ বিষয়টি তাদের সঙ্গে মনিটর করব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি ফিরে আসুক৷ আমি পুলিশের আইজির সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে সম্মানজনক সুরাহা হয়।”

‘কর্মদক্ষতা বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’ শীর্ষক ওই কর্মশালায় কাদের আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চরিত্র হননের খেলায় না মেতে উঠার আহ্বান জানান।

“সামনে জাতীয় সম্মেলন। এই জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে কোনো নেতা-কর্মী যেন চরিত্র হননের খেলায় মেতে না উঠেন, এদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।”

আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি আয়োজিত এই কর্মশালায় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সভাপতি হোসেন মনসুর সভাপতিত্ব করেন। বক্তব্য রাখেন উপ-কমিটির সদস্য সচিব আব্দুস সবুর, অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম প্রিন্স, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েরর ভাইস চ্যান্সেলর মুনাব আহমেদ নুর, সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর।