ভারতের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবি বিএনপির

ভারতের সঙ্গে ‘দেশবিরোধী’ চুক্তি করে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2019, 09:10 AM
Updated : 6 Oct 2019, 11:54 AM

দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা ফেনী নদীর পানি প্রত্যাহারসহ সকল দেশবিরোধী চুক্তির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে ওইসব চুক্তি বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।”

শনিবার দিল্লীতে হায়দ্রারাবাদ হাউজে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার একটি শহরে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে ভারতকে।

রিজভী বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার, ফেনীর নদীর পানি ত্রিপুরায় সরিয়ে নেওয়া এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে গ্যাস পাঠানোর যে চুক্তি করা হল তা স্পষ্টভাবে সংবিধান পরিপন্থি। এসব চুক্তি সংবিধানের ১৪৫ ক অনুচ্ছেদের গুরুতর লঙ্ঘন। যা সংবিধানের ৭ ক অনুচ্ছেদের অধীনে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধের শামিল।”

এসব চুক্তি করায় প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে রিজভী বলেন, “রাষ্ট্রবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থি এসব চুক্তি করে প্রধানমন্ত্রী তার সাংবিধানিক শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি তার স্বার্থরক্ষায় তার কৃত শপথ ভঙ্গের প্রমাণ দিয়েছেন।

“নিজ দেশের স্বার্থের চাইতে বিদেশি রাষ্ট্রের স্বার্থ রক্ষা করেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার সাংবিধানিক সকল অধিকার হারিয়েছেন। তাই এ মুহূর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করছি এবং তার সরকারেরও পদত্যাগ দাবি করছি।”

বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে দেশের স্বার্থবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড ‘হতে দেবে না’ বলে এক প্রশ্নের চবাবে মন্তব্য করেন রিজভী।

ভারতের সঙ্গে চুক্তির সমালোচনা করে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, এসব চুক্তির খবর জেনে দেশের মানুষের মধ্যে ‘তীব্র ক্ষোভ’ ছড়িয়ে পড়েছে।

“মনে হয়েছে যে, এগুলো চুক্তি নয়, শেখ হাসিনা আরেকটি দাসখত দিলেন। এর মাধ্যমে মূলত স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সমুদ্র বন্দর, ফেনী নদীর পানি ও জ্বালানি সংকটময় বাংলাদেশের গ্যাস অন্যের কাছে হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের নিরাপত্তার কথা না ভেবে উপকুলীয় নজরদারি জন্য বাংলাদেশের রাডার স্থাপনের অনুমতিও দেওয়া হয়েছে।

“তার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ক্ষমতার মসনদে থাকার গ্যারান্টি আর ঠাকুর শান্তি পুরস্কারের একটি পদক। বাংলাদেশের মানুষের বদনসিব, বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি।”

রিজভী বলেন, তার দল বিএনপি কোনো দেশের সঙ্গে শত্রুতা চায় না।

“সকলের সঙ্গে সমমর্যাদায় ও সার্বভৌম সমতার ভিত্তিতে মিতালীই আমাদের আরাধ্য। এর ভিত্তিতেই আমাদের স্বার্থ বজায় রেখে ন্যায্য প্রাপ্যটুকু শুধু বুঝে নিতে চাই।”

এই বিএনপি নেতা বলেন, “বুন্ধত্ব হয় সমতার ভিত্তিতে লেনদেনের ওপর। কিছুই না পেয়ে শুধু একতরফা দিয়ে যাওয়াকে কি বন্ধুত্ব বলে? এটাতো একতরফা প্রেম। নিজেদের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে চুক্তি করার চেয়ে কোনো চুক্তি না থাকাও যে ভালো, সেটাও আমরা পুরোপুরি ভুলে বসে আছি।”

চুক্তি থেকে ‘দৃষ্টি সরাতে সম্রাট গ্রেপ্তার নাটক’

ক্যাসিনোকাণ্ডে নাম আসার তিন সপ্তাহ পর যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে নাটক বলছেন বিএনপি নেতা রিজভী।

তিনি বলেন, “ওই যে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন না, একটা চমক দেখানো হবে… আসলে এগুলো (খালেদ, শামীম, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেপ্তার)হচ্ছে প্রত্যেকটি নানা ধরনের নাটক, প্রহসন। প্রতিনিয়ত এগুলো চলছে।”

ভারতের সঙ্গে করা চুক্তির দিক থেকে জনগণের ‘নজর সরাতে’ এখন সম্রাটকে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটার (গ্রেপ্তারের ঘোষণা) মানে হল, মানুষ যেন এই চুক্তির বিষয়ে কথা না বলে, অথবা এটা থেকে দৃষ্টি যেন অন্যদিকে চলে যায়। এই কারণে আজকে তাকে গ্রেপ্তারের কথা ঘোষণা করা হল।”

রিজভীর ভাষায়, “বাংলাদেশের মানুষকে আওয়ামী লীগ বরাবরই বোকা মনে করে, বেকুব মনে করে। কিন্তু জনগণ তাদেরকে কী মনে করে এটা বোঝার বোধশক্তি তাদের নেই। আর নেই বলেই এ ধরনের নাটকগুলো করে। জনগণ নাটককে নাটকই মনে করে। এসব করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা যাবে না।”

উপনির্বাচনের ফলাফল ‘প্রত্যাখান’

এইচ এম এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে যে উপনির্বাচন হয়েছে, সেখানেও ‘প্রহসন’ দেখতে পাচ্ছেন বিএনপি নেতা রিজভী।

শনিবার ওই উপ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন এরশাদের ছেলে রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ।

রিজভী বলেন, “রংপুরে প্রত্যেকটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফলে এটা প্রমাণিত হল- সেখানেও ইভিএম ব্যর্থ। নির্বাচনের দিন ৩ থেকে ৪ শতাংশ লোকও উপস্থিত ছিল না, অথচ দেখানো হয়েছে ২১%।”

বিএনপি এ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গতকাল একদিকে প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে, অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মাছ ধরছেন, বারবিকিউ করছেন। মানে নির্বাচন কোনো সিরিয়াস বিষয় নয়। উনারা তো মধ্যরাতের নির্বাচন আগেই করেছেন। সুতরাং এটাকে(রংপুর উপনির্বাচন) এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। বিএনপি গতকালের নির্বাচনকে প্রত্যাখান করছে।”

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মুনির হোসেন, কাজী রফিক ও আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।