শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ আসনের ১৭৫টি কেন্দ্রে একটানা ভোট চলবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
চার লাখের বেশি ভোটার এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি, বিএনপি, খেলাফত মজলিশ, গণফ্রন্ট ও স্বতন্ত্রসহ ছয়জন প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে এরশাদের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেবেন। এই প্রার্থীদের মধ্যে এরশাদের ছেলে ও এক ভাতিজাও আছেন।
তবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোয় রংপুরে নির্বাচনের পরিবেশ অনেকটাই নিরুত্তাপ।
এ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর ভোটের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে তিন হাজার সদস্য মাঠে রয়েছে। ভোটারররা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরবেন। ইভিএমে ভোট হওয়ায় স্বল্প সময়ে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হবে।”
ইভিএমে ভোটে কোনো ধরনের জটিলতা যাতে না হয়, সেজন্য আইটি টিমকেও প্রস্তত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত ১৪ জুলাই রংপুর এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই রংপুর সদরের এ আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ১ সেপ্টেম্বর উপ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।
১৭৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, এক হাজার ২৩ সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং দুই হাজার ৪৬ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব পালন করছেন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে।
ছয় প্রার্থী
ছয় প্রার্থীর মধ্যে এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ লড়ছেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরগাড়ি (কার) প্রতীকে নির্বাচন করছে।
জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য মসিউর রহমান যাদু মিয়ার বড় মেয়ে রিটা রহমান বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে, এনপিপির শফিউল আলম আম প্রতীক নিয়ে, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল দেয়াল ঘড়ি নিয়ে এবং গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ বায়েজীদ মাছ প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
উত্তাপ নেই
একাদশ সংসদ নির্বাচনে গত ৩০ ডিসেম্বর এ আসনে ইভিএমেই ভোট হয়েছিল; তাতে নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ। এবার উপ নির্বাচনেও ইভিএমে ভোট হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির প্রার্থীসহ অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ায় এবং জাতীয় পার্টির কোন্দলের কারণে এ নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে যাওয়ায় সেই উত্তাপও থিতিয়ে যায়।
স্থানীয় ভোটারদের অধিকাংশই মনে করেন, এরশাদের ভাতিজা শাহরিয়ার আসিফ ও বিএনপির রিটা রহমান ভোটে থাকলেও জাপা প্রার্থীর জয়ে তা বড় বাধা হবে না। ভোট নিয়ে আগ্রহ কমে যাওয়ায় উপস্থিতিও তুলনামুলক কম হতে পারে।
ইভিএম
রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন জানান, ইভিএমে ভোট হওয়ার পাশাপাশি ফলাফল সংগ্রহে এবার কেন্দ্রভিত্তিক ট্যাব ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে একদিকে কেন্দ্রে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে, ইভিএমে এবং কেন্দ্র থেকে দ্রুত ট্যাবের মাধ্যমে ফলাফল আসবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে।
তিনি বলেন, “আমরা এবার অকল্পনীয় ঘটনা উপহার দিতে পারব আশা করি। দ্রুতততম সময়ে একটি সংসদীয় আসনের ফলাফল ঘোষণা করতে পারব। ৫টার পর দ্রুত কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল সংগ্রহ করা হবে। সেক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব ফল ঘোষণা করব। এটা আমাদের প্রযুক্তির উপহার।”
৬ প্রার্থীর চারজনেরই ভোট নেই!
উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছয় প্রার্থীর মধ্যে চার জনই এ নির্বাচনী এলাকার ভোটার নয়। এ কারণে তারা ভোটও দিতে পারবেন না।
রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, কোনো প্রার্থী এলাকার ভোটার না হলে ভোট দিতে পারবেন না। তবে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবে।
এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় প্রার্থী হয়েও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
এছাড়া ভোট দিতে পারবেন না বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান (ধানের শীষ), গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ বায়েজিদ (মাছ) ও এনপিপির শফিউল আলম (আম)।
তবে নির্বাচনী এলাকার ভোটার হিসেবে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (মোটরগাড়ি-কার) ও খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল (দেয়াল ঘড়ি) ভোট দিতে পারবেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে যে কোনো এলাকার ভোটার হলেই চলে। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক।
সাবেক সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আসিফ সকালে শিশুমঙ্গল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং তৌহিদুর রহমান মণ্ডল দুপুরে রংপুর মডেল কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দেবেন।